January 30, 2025
কিয়ামতের বড় ১০ টি আলামত বা নিদর্শন

কিয়ামতের বড় ১০ টি আলামত বা নিদর্শন

কিয়ামতের বড় ১০ টি আলামত বা নিদর্শন

কিয়ামতের বড় ১০ টি আলামত বা নিদর্শন

কিয়ামত

কিয়ামত একটি আরবি শব্দ। মানে মহাপ্রলয় । ‘কিয়ামত’ শব্দের উৎপত্তি আরবি ‘কিয়াম’ শব্দ থেকে, যার অর্থ দাঁড়ানো বা দণ্ডায়মান। প্রচলিত অর্থে, ভবিষ্যতে কোনো এক সময়ে যে মহাপ্রলয় ঘটবে তাকে ‘কিয়ামত’ বলে। ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী, ইসরাফিল (আ.) যখন তার শিঙ্গায় ফুঁক দেবেন তখন কিয়ামত হবে, অর্থাৎ পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। প্রথম ফুঁকে  আকাশ ফেটে যাবে, তারারাজি  খসে পড়বে, তুলোর মতো উড়ে যাবে পাহাড়। সমস্ত মানুষ এবং প্রাণী মারা যাবে, আকাশ এবং সমগ্র পৃথিবী ধ্বংস হবে। দ্বিতীয় ফুঁক দেওয়ার সাথে সাথে পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে শেষ অবধি আবির্ভূত সমস্ত প্রাণী জীবিত হয়ে উঠবে।এবং কিয়ামতের মাঠে সমবেত হবে এবং সকল মানুষের বিচারের  মাধ্যমে তাদেরকে জান্নাত বা জাহান্নামে দিবেন স্বয়ং বিচারক আল্লাহতালা।

কিয়ামতের দিন আসমান ও যমীন ধ্বংস হয়ে যাবে এবং সব মানুষকে হাশরের ময়দানে একত্রিত করা হবে যার হিসাব নেওয়া হবে।  প্রত্যেক মানুষের মৃত্যুই তার জন্য কিয়ামত। কিন্তু এই পৃথিবী একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে। যার মাধ্যমে আকাশ ও পৃথিবীর সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। কোরআনে আল্লাহ তায়ালা এই মহাদিবসেরর কথা বারবার উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন ,

আর সেই দিনকে ভয় কর যেদিন তোমাদেরকে আল্লাহর সামনে হাজির করা হবে। অতঃপর যা উপার্জন করেছে তা সম্পূর্ণরূপে প্রদান করা হবে। আর তাদের প্রতি জুলুম করা হবে না। (সূরা বাকারা ২৮১)

কিয়ামত একবারে আসবে না। মানুষ বুঝবে কিয়ামতের ঘনিয়ে আসছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আগমন কিয়ামতের অন্যতম আলামত। এরপর বেশ কিছু ছোট আলামত প্রকাশ পেলেও কিয়ামত ঘনিয়ে এলে বড় কিছু আলামত পাওয়া যাবে। যার মধ্যে ১০ টির  আলোচনা করছি ।

১. ইমাম মাহদীর আগমন

পৃথিবীতে নিপীড়ন থেকে মানুষকে বাঁচাতে একজন পথপ্রদর্শক নেতা আসবেন। যাকে আরবীতে ইমাম মাহদী বলা হয়। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

মাহদী আমার বংশ থেকে আসবে। তার কপাল উজ্জ্বল হবে এবং নাক উঁচু হবে। দুনিয়া থেকে অত্যাচার দূর করে ন্যায় বিচারে পূর্ণ করবে । তিনি সাত বছর রাজত্ব করবেন। (আবু দাউদ)

২. দাজ্জালের আগমন

মানবজাতির জন্য দাজ্জালের চেয়ে বড় বিপদ আর নেই। বিশেষ করে সেই মুমিনদের জন্য যারা তখন জীবিত থাকবে তাদের জন্য ঈমান রক্ষা করা খুবই কঠিন হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাজ্জালের রাষ্ট্রদ্রোহ সম্পর্কেও সতর্ক করেছেন এবং তার অনিষ্ট থেকে বাঁচার উপায়ও বলেছেন।

একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে দাঁড়িয়ে আল্লাহর প্রশংসা করলেন। অতঃপর দাজ্জালের  আলোচনা করে বললেন, আমি তোমাদেরকে তার ফিতনার বিরুদ্ধে সতর্ক করছি। সকল নবীই তাদের উম্মতকে দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। তবে আমি তোমাদেরকে দাজ্জালের একটি পরিচয়ের কথা বলব যা কোনো নবী তাঁর উম্মতকে বলেনি। দাজ্জাল হবে অন্ধ। আর আমাদের মহান আল্লাহ  অন্ধ নন। (তিরমিযী)

৩. ঈসা(আ.)-এর আগম

সূরা নিসায় আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ঈসা মসিহকে কেউ হত্যা করেনি, বরং আল্লাহতায়ালা তাকে তাঁর কাছে উঠিয়ে । কিয়ামতের আগে তাকে আবার পাঠানো হবে। তাহলে পৃথিবীর সকল ধর্মে নিয়েছেন।  মানুষ তাকে গ্রহণ করবে।

৪. ইয়াজুজ-মাজুজের আগমন

ইয়াজুজ-মাজুযের দল বেরিয়ে আসা কিয়ামতের সবচেয়ে বড় আলামত। তারা বেরিয়ে আসবে এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় ও মহাক্লেশ সৃষ্টি করবে। তারা দলে দলে মানবসমাজে এসে ব্যাপক গণহত্যা চালাবে। তাদের মোকাবিলা করার শক্তি কারো থাকবে না।

৫. তিনটি প্রধান ভূমিধস

উম্মে সালামা (রাঃ) এর সূত্রে, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, আমি চলে যাবার পরপরই তিনটি স্থানে ভূমিধস হবে। একটি হবে পূর্বে, একটি পশ্চিমে এবং একটি আরব উপদ্বীপে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল, ধার্মিকরা থাকা অবস্থায় কি ভূমিধ্বস হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, যখন পাপকাজ বেশি হবে। (মুসলিম)

৬. বিশাল একটি ধোঁয়ার আগমন

কিয়ামত শেষ হলে ধোঁয়ার বিশাল মেঘ বেরিয়ে আসবে এবং আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যবর্তী স্থান পূর্ণ করবে। এই ধোঁয়া মুমিনদের হালকা ঠান্ডা ও জ্বর দেবে। তা প্রচণ্ডভাবে কাফেরদের শরীরে প্রবেশ করবে। ফলে তাদের শরীর ফুলে উঠবে এবং শরীরের প্রতিটি ছিদ্র থেকে ধোঁয়া বের হবে। এটা তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হয়ে যাবে।

৭. পশ্চিম আকাশে সূর্য উঠবে

বর্তমানে সূর্য প্রতিদিন পূর্ব দিক থেকে উদিত হচ্ছে। কিয়ামতের আগে এ অবস্থার পরিবর্তন হবে এবং সূর্য পশ্চিম আকাশে উদিত হবে। এটি পৃথিবীর শেষের খুব কাছাকাছি ঘটবে। পশ্চিম আকাশে সূর্য উদিত হওয়ার পর তাওবার দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। (বুখারি)

৮. দাব্বাতুল আরদ

কিয়ামতের আগে দাব্বাতুল আরদ নামে এক অদ্ভুত জন্তুর আবির্ভাব হবে। জন্তুটি মানুষের সাথে কথা বলবে। যা সর্বশেষ ভয়াবহ লক্ষণগুলোর একটি। পশ্চিম আকাশে সূর্য উদিত হওয়ার পর তাওবার দরজা বন্ধ হলে জন্তুটি বেরিয়ে আসবে।

৯. ইয়েমেন থেকে আগুন

কিয়ামতের পূর্বে ইয়েমেনের আদানের গর্ত থেকে ভয়াবহ আকারের আগুন বের হয়ে হাশরের দিকে মানুষকে সমবেত করবে। (আবু দাউদ)

১.০. মৃদু ও শীতল বাতাসে মুমিনদের আত্মা মুগ্ধ হয়

কিয়ামতের পূর্বে একটি বাতাস এসে মুমিনদের আত্মাকে কব্জা করবে। তখন দুনিয়াতে আল্লাহর নাম পাঠ করার কেউ থাকবে না। শুধুমাত্র সবচেয়ে খারাপরা  বেঁচে থাকবে। তাদের উপর কিয়ামত কায়েম হবে। (মুসলিম)

আরও পড়তে

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X