সকালে মাটিতে খালি পায়ে হাঁটার অনেক উপকারিতা
জুতা-স্যান্ডেল পরার কারণ হলো পা নোংরা হওয়া থেকে বিরত রাখা। কিন্তু মাটিতে খালি পায়ে হাঁটারও অনেক উপকারিতা রয়েছে। ঘাস বা মাটিতে খালি পায়ে হাঁটা এক ধরনের আরাম দেয়। পৃথিবীর সাথে মানবদেহের এই সরাসরি যোগাযোগ শুধু মানসিক শান্তিই দেয় না। শারীরিক সুবিধাও মেটায়।
হাঁটার ভঙ্গি এবং ভারসাম্য উন্নত করে
খালি পায়ে হাঁটা পায়ের পেশী শক্তিশালী করে।মাটিতে খালি পায়ে হাঁটা পায়ের পেশী শক্তিশালী করে ভারসাম্য উন্নত করে। ভঙ্গিমাও উন্নত হয়। পায়ের তলায় রিসেপ্টরগুলির উদ্দীপনা বৃদ্ধি পায়। যা সমর্থন ছাড়া দাঁড়ানো উন্নত করে। ভঙ্গি, অঙ্গবিন্যাস এবং ভারসাম্য উন্নত হয়।
পায়ের পেশীর শক্তি বৃদ্ধি পায়
পায়ের প্রধান পেশী সহ গোড়ালি থেকে পায়ের আঙ্গুল পর্যন্ত পেশী গোষ্ঠীগুলি শক্তিশালী হয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে পায়ের পেশির দুর্বলতা বাড়ে। ফলে পতনের সম্ভাবনা বাড়ে। কিন্তু খালি পায়ে হাঁটার অভ্যাস থেকে পায়ের পেশি শক্তিশালী হয়। যার কারণে বয়স বাড়ার সাথে সাথে পায়ের দুর্বলতার মাত্রা বাড়ে না।
স্বাস্থ্যসচেতনরা প্রতিদিন সকালে হাঁটার চেষ্টা করেন, সকালে হাঁটা মানুষের শারীরিক কর্মক্ষমতা বাড়ায়, মানসিক চাপ কমায়, হাড়ের ব্যথা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের হাড়ের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে এবং ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে বিশেষ কার্যকর ভূমিকা রাখে। ক্যালরি এবং চর্বি কমাতে কিছু হাঁটা প্রয়োজন। হাঁটলে ভালো লাগে। এমন তথ্য আমরা জানি। তবে মাটিতে বা ঘাসে হাঁটতে পারলে দ্বিগুণ সুবিধা হবে।
সবুজ ঘাসে খালি পায়ে হাঁটুন। আপনার সকালের হাঁটার জন্য বের হওয়ার সময় ঘাসের উপর কিছুক্ষণ হাঁটা বা দৌড়ানোর চেষ্টা করুন। কিছুক্ষণ খালি পায়ে হাঁটুন, বিশেষ করে ঘাসের উপর। কারণ ঘাসের উপর খালি পায়ে হাঁটা শরীরের জন্য ভালো এবং শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকে। তাছাড়া ওজন কমাতে ও সুস্থ থাকার জন্য সবচেয়ে ভালো ব্যায়াম হল হাঁটা। এক নজরে ঘাসের উপর হাঁটার উপকারিতা জেনে নিন-
দৃষ্টিশক্তি শক্তিশালী করে
আমাদের পায়ে অনেক রিফ্লেক্সোলজি জোন রয়েছে যা চোখ সহ শরীরের অনেক অঙ্গের সাথে যুক্ত। খালি পায়ে হাঁটলে পুরো শরীরের ভার পায়ের ওপর ভর করে। যেহেতু ফুট রিফ্লেক্সোলজি জোনটি চোখের সাথেও সংযুক্ত, তাই ঘাসের উপর খালি পায়ে হাঁটা দৃষ্টিশক্তি শক্তিশালী করে। এছাড়া সবুজ রং চোখের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। তাই চোখের স্বাস্থ্যের জন্য প্রতিদিন সকালে ঘাসে হাঁটুন।
শরীরে গতি আনে
প্রতিদিন নিয়মিত খালি পায়ে হাঁটা মানবদেহের অন্যতম চালিকা শক্তি ইলেকট্রনের বিস্তার ও কর্মক্ষমতা বাড়ায়। এই ইলেকট্রনগুলো পায়ের তলায় নির্দিষ্ট আকু পয়েন্ট এবং মিউকাস মেমব্রেনের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। আমাদের মানবদেহে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ইলেকট্রন দিয়ে তৈরি, যা শরীরে উৎপন্ন ফ্রি র্যাডিক্যাল ধ্বংস করে। শরীরের অভ্যন্তরে বিভিন্ন কারণে প্রদাহ প্রতিরোধে আমাদের শরীরে ইলেকট্রনের উপস্থিতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যা বিভিন্ন প্রদাহের সঙ্গে লড়াই করতে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
পায়ের তলায় একাধিক সংবেদনশীল স্নায়ু সুইচ পয়েন্ট রয়েছে, যা খালি পায়ে হাঁটার সময় সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং শরীরের মধ্যে ইতিবাচক শক্তি উৎপন্ন করে। খালি পায়ে হাঁটা পায়ের তলায় থাকা সুইচগুলিকে সক্রিয় করে এবং ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। ফলে সহজেই সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
শরীরের বিভিন্ন ব্যথা ও যন্ত্রণা কমায়
আমরা আমাদের শরীরের উপর একটি গুরুত্বপূর্ণ চাপ বহন করি, তা হল মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব আমাদের শরীরকে ভারসাম্য বজায় রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। যদিও আমরা এটা নিয়ে বেশি আলোচনা করি না। কিন্তু গবেষণা বলছে, খালি পায়ে হাঁটার ফলে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, শরীরে ভারসাম্য ঠিক থাকে, যাঁরা নানা ধরনের যন্ত্রণা নিয়ে দিনযাপন করছেন, তাঁরা নিয়মিত মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে মাটিতে খালি পায়ে হাঁটেন, শরীরের অভ্যন্তরে আর্থিং করার ফলে ব্যথা কমানোর হরমোন সক্রিয় হয়, ফলে বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে, শরীরের ব্যথা কমে যায়। কিছু গবেষণা দেখায় যে খালি পায়ে হাঁটা দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। মাংসপেশি ও হাড় মজবুত করতে খালি পায়ে হাঁটার কোনো বিকল্প নেই।
মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়
খালি পায়ে হাঁটা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে। বয়সজনিত ভুলে যাওয়া, ভুল লাইফস্টাইলের কারণে স্মৃতিশক্তির ঘাটতির সমস্যা থাকলে, সকালে খালি পায়ে হাঁটার ফলে মস্তিষ্কের ভেতরের নিউরনগুলো ধীরে ধীরে সক্রিয় হয়।
হার্ট ভালো রাখে
যারা নিয়মিত হাঁটতে সাহস করেন না, অল্প দূরত্বে হাঁটতে পারেন এবং সিঁড়ি বেয়ে উঠতে অসুবিধা হয়, খালি পায়ে হাঁটলে কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে, এই সময়ে শিরায় প্রত্যাবর্তন বৃদ্ধি পায়, অর্থাৎ হৃৎপিণ্ডে বেশি রক্ত পৌঁছাতে শুরু করে। সেই সঙ্গে হৃদরোগের সম্ভাবনাও কমে।
মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করে
আধুনিক জীবনযাপনে হতাশা একটি বড় ব্যাধি, এটি এড়াতে খালি পায়ে হাঁটা দুশ্চিন্তা ও হতাশা থেকে মুক্তি দেয়। আমাদের শরীরের প্রায় ৭০ শতাংশ পানি দিয়ে গঠিত। তাই মাটির সাথে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের মাটির সাথে সম্পর্ক যত ঘনিষ্ঠ হবে, শরীরের বিভিন্ন তরল পদার্থের ভারসাম্য তত ভালো হবে। আমরা যেমন খাদ্য থেকে ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট গ্রহণ করি, তেমনি মাটির ইলেকট্রন মানসিক শক্তি ও মানসিক অবসাদকে প্রভাবিত করে।
শরীরে ‘ভিটামিন-ডি’ যোগ করে
ঘাসের উপর খালি পায়ে হাঁটলে সূর্যের রশ্মি আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি যোগ করে, ভিটামিন ডি আমাদের হাড়কে মজবুত করে এবং হাড়ের যেকোনো সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তাই সুস্থ থাকতে সকাল বা বিকেলের হালকা রোদে কিছুক্ষণ ঘাসের ওপর খালি পায়ে হাঁটুন।