স্ত্রীকে খুঁজে পেতে সাগরে ৬০০ ডুব স্বামীর
বিবাহ পরবর্তী অবিস্মরণীয় প্রেমের গল্প লেখা আছে জিম এবং ডেলাকে নিয়ে সেটাও হয়তোবা অনেকের অজানা নয়। সুনামিতে হারিয়ে যাওয়া স্ত্রীকে ১৩ বছর যাবত সন্ধানরত এই কঠিন প্রেমিকের ৬ শতবারের বেশি সমুদ্রে ডুব দিয়ে তলদেশে স্ত্রীর সন্ধান করা প্রেমিক হয়তোবা পাওয়া অতটা সহজ নয়।
মানুষ তার সমগ্র সত্তা দিয়ে ভালোবাসে। মুঘল সম্রাট শাহজাহান সে ভালোবাসার এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা থেকেই তাজমহল তৈরি হয়েছিল। তবে পাগলের মতো কাউকে ভালোবাসতে কোনো বাধা নেই! সম্প্রতি এমন প্রেমময় স্বামীর দেখা মিলল উদীয়মান সূর্যের দেশ জাপানে।
ডুবুরিরা সমুদ্র থেকে মুক্তা বের করে আনে । কিন্তু রহস্যময় ঢেউয়ে ভেসে যাওয়া স্ত্রীর খোঁজে ১৩ বছর ধরে সমুদ্রে ডুব দিয়েছেন এমন এক ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। সমুদ্রে ডুব দিয়ে তার চামড়া নোংরা হয়ে কুচঁকে গেছে। তবে হাল ছাড়েন না তিনি। স্ত্রীকে খুঁজে বের করতে হবে- যেন জাপানি সেনাবাহিনীর প্রাক্তন সদস্য ইয়াসু তাকামাতসু মনে মনে এমন একটি বাজি রেখেছিলেন।
তাকামাতসু এখন ৬৭ বছর বয়সী। ২০১১ সালে, জাপানের ওনাগাওয়াতে বিধ্বংসী সুনামির পর তাকামাতসুর স্ত্রী ইয়োকো নিখোঁজ হন। ইয়োকো তার স্বামীকে শেষবারের মতো ছোট্ট বার্তায় লিখেছেন, “তুমি ঠিক আছো?” আমি বাড়ি যেতে চাই এটা তার স্ত্রীর কথাই ইয়োকোর খোঁজে তাকামাতসুকে এতদূর নিয়ে এসেছে। তাকামাতসু ১৩ বছর পরেও তার স্ত্রীকে খুঁজছেন।
সম্প্রতি মাদারশিপ নামের একটি ডিজিটাল কোম্পানি একটি ভিডিও ক্লিপ পোস্ট করেছে। তাকামাতসুকে সেখানে তার গল্প বলতে শোনা যায়। স্ত্রীর এমন ভালোবাসার গল্প ভাইরাল হয়েছে। কাঁদছেন নেটিজেনরা। সুনামি আঘাত হানার সময় ইয়োকো একটি ব্যাঙ্কে কাজ করছিলেন। সেই সময় তাকামাতসু তার শাশুড়িকে অন্য শহরে পৌঁছে দিতে যান।
সুনামি আঘাত হানার এক মাস পর ব্যাংকে ইয়োকোর মোবাইল ফোন খুঁজে পান তাকামাতসু। যখন তিনি তার মোবাইল ফোন চেক করেন, তখন তিনি দেখতে পান যে তার স্ত্রী একটি ছোট বার্তা পাঠিয়েছিলেন যে তিনি বাড়িতে যাচ্ছেন। এরপর তাকামাৎসু তার স্ত্রীকে খুঁজতে শুরু করেন। প্রথম আড়াই বছর তিনি তার স্ত্রীর খোঁজ করেন। তাকামাতসু আশ্রয় শিবির, পাহাড়, মর্গ ছেড়ে যাননি।
২০১৩ সালে, ৫৬ বছর বয়সে, তাকামাতসু তার স্ত্রীকে সমুদ্রে খুঁজে পাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এরপর থেকে তিনি ডাইভিং শেখা শুরু করেন। “আমি জানতাম এটা কঠিন হবে,” বলেছেন তাকামাতসু, যিনি ৬০০ বারের বেশি ডাইভ করেছেন। আমার খুব কষ্ট লাগে, তবে কি আর করা যায়। তাকে খুঁজে বের করা ছাড়া আমার কোনো উপায় নেই। আমি যখন সমুদ্রে যাই, আমি এটিকে কাছে অনুভব করি
‘আই ওয়ান্ট টু গো হোম’ নামে একটি বই বের হয়েছে তাকামাৎসুর স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসার গল্প নিয়ে। এছাড়া ‘দ্য ডাইভার’ এবং ‘নোহোয়ার টু গো বাট এভরিহোয়ার’ নামে দুটি তথ্যচিত্রও নির্মিত হয়েছে। ২০১১সালে ভূমিকম্পের পর, জাপানে বিধ্বংসী সুনামিতে ২০,০০০ এরও বেশি মানুষ মারা যায়। ২৫০০ জনের বেশি মানুষ এখনও নিখোঁজ রয়েছে।
তার বয়স এখন ৬৭ বছর। সমুদ্রের জল তার ত্বকে দাগ দিয়েছে। কিন্তু প্রেমে দাগ পারেননি। ১৩ বছর আগে তিনি তার স্ত্রী ইয়োকোকে হারিয়েছিলেন। ২০১১সালে, উত্তর-পূর্ব জাপানের ওনাগাওয়া সমুদ্র সৈকতে সুনামিতে ইয়োকো নিখোঁজ হয়েছিলেন। কিন্তু এত বছর পরও তার প্রিয় স্ত্রীর স্মৃতি তাকে তাড়া করে। তাই আজও তাকে খুঁজে পাওয়ার আশায় সে ছুটে যায় সমুদ্রের দিকে।
এই প্রেমের গল্প জাপানি নাগরিক ইয়াসু তাকামাতসুর।
তুমি ঠিক আছ? আমি বাড়ি যেতে চাই’—এটাই শেষ ইয়াসু তার স্ত্রী ইয়োকোর কাছ থেকে শুনেছে। এটাই ইয়াসুকে আজও তার সন্ধানে সমুদ্রের দিকে ছুটে যেতে উদ্বুদ্ধ করে। তিনি এখনও তার স্ত্রীর সন্ধানে আশাবাদী। সেই আশা থেকেই ইয়াসু ডুবুরির পোশাকে সাগরে ডুব দিতে থাকে।
১১ মার্চ ২০১১, একটি বিপর্যয়কর সুনামি (সমুদ্রের তরঙ্গ) জাপানের মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানে। দেশের উত্তর-পূর্ব উপকূলের একটি বড় অংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ মারা যায়। অনেকেই নিখোঁজ হন। ইয়োকো তাদের একজন।
আমি ভেবেছিলাম এটা কঠিন কাজ। আমি বাস্তবে এটি খুব কঠিন বলে মনে করেছি। কিন্তু বউ পাওয়াটাই আমার সামনে একমাত্র কাজ। তাকে খোঁজ চালিয়ে যাওয়া ছাড়া আমার কোনো উপায় নেই। আমি যখন সমুদ্রে যাই, আমি তাকে খুব তীব্রভাবে অনুভব করি।
ইয়াসু ইয়োকোকে উদ্ধারের জন্য গভীর সমুদ্রে যাওয়ার জন্য ৫৬ বছর বয়সে ডুবানো শেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ২০১৩ সাল থেকে, তিনি কমপক্ষে ৬০০ বার ইয়োকোকে অনুসন্ধান করেছেন। দুর্ভাগ্যক্রমে তার দেহাবশেষ এখনও পাওয়া যায়নি। যাইহোক, ইয়োকোর প্রতি তাকামাতসুর অবিরাম ভালোবাসা তাকে একটুকুও অধৈর্য করে তুলতে পারেনি। তিনি বিশ্বাস করেন যে একদিন তিনি তাকে খুঁজে পাবেন।
নিউইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ইয়োকো-ইয়াসু জুটির প্রথম দেখা হয়েছিল ১৯৮৮ সালে। ইয়োকোর বয়স ছিল ২৫ বছর। ওনাগাওয়ার সেভেন্টি সেভেন ব্যাঙ্কে কাজ করেন। অন্যদিকে তাকামাতসু ছিলেন জাপানের গ্রাউন্ড সেলফ ডিফেন্স ফোর্সের একজন সৈনিক। একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাকে ইয়োকোর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।
ইয়োকো-ইয়াসু প্রথম দর্শনেই প্রেমে পড়েছিলেন। এক পর্যায়ে বিয়ে হয়ে যায়। ইয়াসু তার স্ত্রী সম্পর্কে বলেন, “তিনি ছিলেন ভদ্র। আমি তার হাসি এবং কোমল স্বভাব পছন্দ করতাম।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইয়োকো শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শুনতে পছন্দ করতেন। ছবি আঁকার প্রতি তার ছিল প্রবল ঝোঁক। ক্যানভাসে জল রং ব্যবহার করা হয়েছে। তবে এই ছবিগুলো আমাকে ছাড়া আর কাউকে দেখানো হয়নি।
সমুদ্রে হারিয়ে যাওয়া তার স্ত্রীর দেহাবশেষ খুঁজে পাওয়া তাকামাৎসুর পক্ষে সহজ কাজ নয়; এবং যখন ১৩ বছর কেটে গেছে। অনেকেই তাকে এই কঠিন কাজ চালিয়ে যেতে নিরুৎসাহিত করেছেন। কারণ বিশাল সমুদ্রের তলদেশ থেকে ইয়োকোর দেহাবশেষ টেনে তোলা বড় খড়ের গাদা থেকে সুই বের করার মতো। কিন্তু তাকামাতসু অদম্য। তিনি বলেন, ‘আমি ৫৬ বছর বয়সে ডাইভিং শিখেছি কারণ আমি সমুদ্র থেকে আমার স্ত্রীকে খুঁজে আনবোই ।