November 27, 2024
হিজাব নিষিদ্ধ করল তাজিকিস্তান, বাতিল ঈদের ছুটিও

হিজাব নিষিদ্ধ করল তাজিকিস্তান, বাতিল ঈদের ছুটিও

হিজাব নিষিদ্ধ করল তাজিকিস্তান, বাতিল ঈদের ছুটিও

হিজাব নিষিদ্ধ করল তাজিকিস্তান, বাতিল ঈদের ছুটিও

তাজিকিস্তান প্রজাতন্ত্র মধ্য এশিয়ার একটি স্থলবেষ্টিত দেশ। এর উত্তরে কিরগিজস্তান, উত্তর ও পশ্চিমে উজবেকিস্তান, পূর্বে চীন এবং দক্ষিণে আফগানিস্তান। দুশানবে দেশের বৃহত্তম শহর এবং রাজধানী। দেশের অধিকাংশ মানুষ অর্থাৎ ৯৬ শতাংশ তাজিক সুন্নী মুসলমান। তারা তাজিক নামে একটি ফার্সি জাতীয় ভাষায় কথা বলে।

১৯২৯ সালে, তাজিকিস্তান সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি অংশ হয়ে ওঠে। এটি ১৯৯১ সালে স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতার পরপরই দেশে কমিউনিস্ট সরকার ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। জুন ১৯৯৭ সালে, উভয় পক্ষ একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করে। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং বৈদেশিক সাহায্য দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখতে শুরু করে। যাইহোক রাষ্ট্রপতি ইমোমালি রেহমান ১৯৯৪ সাল থেকে স্বৈরশাসক হিসাবে শাসন করেছেন। ধর্মীয় স্বাধীনতার উপর বিধিনিষেধ, দুর্নীতি এবং ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে সারা পৃথিবীতে থেকে নিন্দিত এই স্বৈরশাসক  ইমোমালি রেহমান।

প্রায় ৩০ বছর যাবত এই স্বৈরশাসক ক্ষমতায় থাকায় তার ধর্মনিরপেক্ষ মনোভাবকে নির্দ্বিধায় প্রকাশ করতে দেশটির মুসলমানদের হৃদয় বিভিন্নভাবে কঠিন আঘাত হানছে বলে মনে করছেন বিশ্বের মুসলিম নেতারা। তার মধ্যে হিজাব একটি।

৯৬% মুসলমানদের দেশ তাজিকিস্তান। এরপরও এদেশের সরকারের মনে জেগে উঠেছে ধর্মীয় নিরপেক্ষতা। যার দরুণ সরকার সেটাকে প্রকাশ করতে যাচ্ছে একটি ধর্মের উপরে। বিশেষ করে ইসলাম ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান হিজাবের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে। এবং মহান ইসলামের অত্যন্ত সৌন্দর্যপূর্ণ এবং প্রধান অনুষ্ঠান ঈদের ছুটিও বাতিল করতে বদ্ধপরিকর হয়ে বিল পাশ করে ফেলেছে তাদের বর্তমান ধর্মী-নিরপেক্ষ সরকার । এবং ঈদে ছোটদেরকে সালামি দেওয়ার যে প্রথা সেটাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে তাজিকিস্তান।

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ তাজিকিস্তানে হিজাব নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যদিও এদেশের ৯৬ শতাংশ মানুষ মুসলমান। সেখানে হিজাবকে ‘এলিয়েন পোশাক’ বলা হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান করা হয়েছে। একই সঙ্গে ঈদের দিনে বড়দের থেকে ছোটদের ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর প্রথাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, মধ্য এশিয়ার

এই দেশটিরর জনগণ নয় ,শুধুমাত্র সরকার নিজেকে ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে পরিচয় দিতে চায়। এ জন্য তারা বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশের জনসংখ্যা প্রায় এক কোটি। তাদের মধ্যে অন্তত ৯৬ শতাংশ মুসলমান।

তাজিকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইমোমালি রেহমান হিজাবকে লজ্জার পোশাক বলেছেন। নারীদের বোরকা, হিজাব নিষিদ্ধ করার বিলে সম্মত হয়েছে দেশটি

মধ্য এশিয়ার মুসলিম প্রধান দেশ তাজিকিস্তান মহিলাদের হিজাব পরা নিষিদ্ধ এবং মুসলিমদের প্রধান দুই ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-ফিতর ও ঈদ-উল-আযহায় স্কুল, কলেজ ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের ছুটি বাতিল করে একটি বিল পাস করেছে। একই সঙ্গে শিশুদের ঈদের সালামি আদায়ের নিয়মও বাতিল করা হয়েছে। এই আইন লঙ্ঘন ভারী জরিমানা দ্বারা শাস্তিযোগ্য.

বৃহস্পতিবার (২০ জুন) সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সংসদের উচ্চকক্ষ সংসদ সদস্যরা বিলটি পাস করেন। এর আগে ৮ মে সংসদের নিম্নকক্ষ মজলিশী নমোয়ন্দগান বিলটি পাস করে।

বৃহস্পতিবার সংসদে বিলটি পাস হওয়ার পর একটি মুসলিম মিলিশিয়ার প্রেস সেন্টারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হিজাব বা মাথা ঢেকে রাখার সংস্কৃতি মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানি করা হয়েছে। এটি তাজিকিস্তানের নিজস্ব সংস্কৃতি নয়। তদুপরি, এই পোশাকটি উগ্রবাদের সাথে জড়িত। কেউ আইন লঙ্ঘন করলে শাস্তি হিসেবে বড় জরিমানার বিধান রয়েছে বিলে।

নতুন আইনের অধীনে, হিজাব বা অন্যান্য নিষিদ্ধ ধর্মীয় পোশাক পরা ব্যক্তিদের ৭.৯২০ সোমনি (প্রায় $৭০০) পর্যন্ত জরিমানা করা যেতে পারে। যেসব কোম্পানি কর্মীদের নিষিদ্ধ পোশাক পরতে দেয় তাদের ৩৯.৫০০ সোমনি ($৩.৫০০) জরিমানা করা হবে। এছাড়াও, এই আইন লঙ্ঘনকারী সরকারী কর্মকর্তা এবং ধর্মীয় নেতাদের ৫৪,০০০ থেকে ৮৭,৬০০ সোমনি (৪,৮০০-৫,১০০ ডলার) জরিমানা করা হবে।

২০০৭ সাল থেকে, তাজিকিস্তানে হিজাব, ইসলামিক এবং পশ্চিমা পোশাকের বিরুদ্ধে একটি প্রচারণা শুরু হয়েছে। পরবর্তী বছরগুলোতে দেশে হিজাবের ওপর অলিখিত নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। এমনকি নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে তৃণমূল পর্যায়ে কমিটিও করেছে স্থানীয় প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ।

মূলত তাজিকিস্তানের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও পোশাককে বাঁচিয়ে রাখতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ২০১৭ সালে, তাজিকিস্তানের জাতীয় দিবসে, সরকার দেশটির মহিলাদের হিজাব এবং পশ্চিমা পোশাক পরিহার করতে এবং তাজিকিস্তানের নিজস্ব সংস্কৃতির পোশাক পরিধান করার আহ্বান জানিয়েছিল।

২০০৯ সালে তাজিকিস্তানে ইসলামকে সরকারী ধর্ম হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তবে তাজিকিস্তানে অন্য কোন ধর্ম পালনের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে। ২০০৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৯৮ শতাংশ মানুষ মুসলিম। তাদের মধ্যে ৯৫  শতাংশ সুন্নি এবং ৩ শতাংশ শিয়া মুসলিম। আর বাকি দুই শতাংশের মধ্যে রয়েছে অর্থোডক্স, প্রোটেস্ট্যান্ট এবং ক্যাথলিক খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ও ইহুদি। তাজিকিস্তানে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও অধিকার উপভোগ করতে ধর্মীয় সম্প্রদায়কে নিবন্ধন করতে হবে। এই নিবন্ধন ব্যতীত কোন দল উপাসনার জন্য একত্রিত হতে পারে না। এর ব্যতিক্রম করলেই কঠিন  জরিমানা এবং সেইসাথে তাদের উপাসনালয়গুলি বন্ধ করে দেয়া হবে।

আরও জানুন

হিজাব আন্দোলনের সেই প্রতবাদি তাবাসসুম দ্বাদশের পরীক্ষায় পুরো রাজ্যে প্রথম

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X