January 31, 2025
কিভাবে তাকবীরে তাশরীক পড়ার বিধান এলো

কিভাবে তাকবীরে তাশরীক পড়ার বিধান এলো

কিভাবে তাকবীরে তাশরীক পড়ার বিধান এলো

কিভাবে তাকবীরে তাশরীক পড়ার বিধান এলো

তাকবীরে তাশরীক ও ঈদুল আযহা এক সুত্রে বাঁধা। তাকবীরে তাশরীকের ইতিহাস ঈদুল আযহার সাথে বিশেষভাবে জড়িত। তাশরীক হল আল্লাহর মহত্ত্বের প্রশংসা ও ঘোষণায় পরিপূর্ণ একটি তাকবীর। কুরবানী বা আত্মত্যাগ আল্লাহর একমাত্র অধিকারে পরিণত হওয়ার অন্যতম উপায়। আল্লাহর একান্ত প্রিয় হয়ে ইবাদত পালনকালীন সময়েই তাকবিরে তাশরিকের প্রচলন শুরু হয়।

হিজরির ৯ই জিলহজের ফজরের নামায থেকে শুরু করে ১৩ই জিলহজের আসরের সালাত পর্যন্ত প্রতি ফরজ নামাজের পর শুধুমাত্র একবার করে মোট মোট ২৩ বার তাকবীরে তাশরীক পাঠ করা ওয়াজিব।

 তবে আমরা মনে রাখবো কোরবানি শুধু একদিনই নয় বরং ১০ জিলহজ ঈদুল আজহার দিনসহ আরও দুইদিন কোরবানি করা যাবে। জিলহজ মাসের ১০ তারিখ ঈদের নামাজ পড়ার পর থেকে শুরু করে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত কোরবানি করা যাবে। তবে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের পর কোরবানি বৈধ নয়।

তাকবীরে তাশরীক পাঠের সূচনা আল্লাহর প্রিয় দুই নবীর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত। তাকবীরে তাশরীক কীভাবে শুরু হয়েছিল তা জানতে হলে হজরত ইব্রাহিম ও হজরত ইসমাইলের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ স্মরণীয় ঘটনা উল্লেখ করা প্রয়োজন। আর তা হল-

তাকবিরে তাশরিকের বাংলা উচ্চারণ

আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ।

তাকবিরে তাশরিকের বাংলা অর্থ

আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান, তিনি ছাড়া সত্যিকার আর কোনো উপাসক নেই। আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান আর সমস্ত প্রশংসা শুধুমাত্র তাঁরই জন্য।

কুরবানীর বিধান জারি করে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন-

অতঃপর যখন তিনি (ইসমাঈল) পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হলেন, তখন ইব্রাহিম তাকে বললেন, হে পুত্র! আমি তোমাকে জবাই করার স্বপ্ন দেখি; এখন তোমার মতামত কি? তিনি বললেন, হে পিতা! আপনাকে যেভাবে আদেশ করা হয়েছে সেভাবেই করেন । আল্লাহর ইচ্ছায় আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন।’ (সূরা সাফফাত: আয়াত ১০২)

হজরত ইব্রাহিম (আ.) স্বপ্নে তাঁর প্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইলকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোরবানি করার নির্দেশ পান। আল্লাহর নবী যখন স্বপ্নে তার পুত্রের বর্ণনা দেন, তখন মহিমান্বিত শিশু ইসমাঈল স্বপ্নে কাজটি সম্পন্ন করার বিষয়ে তার অভিমত এক বাক্যে ব্যক্ত করেন এবং তাকে আশ্বস্ত করেন যে, তাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাওয়া যাবে।

যখন হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম কোরবানি করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তখনই এই তাকবীরে তাশরীক শুরু হয়। কিয়ামত পর্যন্ত ইসলামে প্রতি বছর ৫ দিন এ তাকবীর পড়া ওয়াজিব বলে বিবেচিত হয়।

তাকবীরে তাশরীকের শুরু যেভাবে

হজরত ইব্রাহিম (আ.) যখন তার শিশুপুত্র ইসমাইলকে কোরবানির আদেশ পালনের জন্য মাটিতে শুইয়ে দেন, তখন আল্লাহ তায়ালা হজরত জিব্রাইল (আ.)-কে বেহেশত থেকে দুম্বা তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেন।

হজরত ইসমাইলকে জবাই করার আগে, হজরত জিবরীল (আ:) আকাশে থাকা অবস্থায় আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করতে থাকেন যাতে তিনি হজরত ইব্রাহিম (আ)-এর ছুরির নিচে দুম্বা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেন এবং তাকবীরের আওয়াজ হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর কানে পৌঁছে যায়।-

اَللهُ اَكْبَر – اَللهُ اَكْبَر (আল্লাহু আকবার; আল্লাহু আকবার। অর্থ : আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান)

অতঃপর হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম এ তাকবিরের আওয়াজ শুনে কাপড় দ্বারা আবৃত চোখ খুলে দেখলেন হজরত জিবরিল আলাইহি সালাম আনিত দুম্বা হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালামের পরিবর্তে কুরবানি হয়ে যায়। তখন তিনি তাওহিদের কালেমা ও তার শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করে বলেন-

لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ اَللهُ اَكْبَر (লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার। অর্থ : আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই; আপনিই শ্রেষ্ঠ)

হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে তাওহিদের কালেমা ও আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করতে দেখে হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও প্রশংসা করে বলেন-

اَللهُ اَكْبَر وَ لِلهِ الْحَمْد (আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ। অর্থ : আল্লাহ মহান, সব প্রশংসা শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য)

হজরত জিবরীল আলাইহিস সালাম, হজরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম ও হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম-এর তাকবীর, তাওহীদের কালেমার প্রশংসা আল্লাহর কাছে এতই ভালোবাসার  হয়ে ওঠে যে, , হজ পালনকারী, কুরবানি দাতাসহ মুসলিম উম্মাহর জন্য জিলহজ মাসের ৯-১৩ পর্যন্ত এ ৫ দিন তাকবিরে তাশরিক পড়া আবশ্যক হয়ে যায়।

তাই এই তাকবীরে তাশরীক আল্লাহর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার অন্যতম টনিক। কুরবানী অর্থাৎ আত্মত্যাগ তখনই সফল হবে যদি আমরা এই তাকবীরে তাশরীকের অর্থ ও শিক্ষাকে লালন করি।

তাই মুসলিম উম্মাহর সকল প্রাপ্তবয়স্ক নর-নারী, মুকিম-মুসাফির, গ্রাম-শহরবাসী এবং যারা জামাতে বা একাকী নামায পড়েন তাদের প্রত্যেক ফরয নামাযের পর তাকবীরে একবার তাশরীক  পাঠ করা ওয়াজিব

তাকবীরে তাশরীকের ইতিহাস জানার পর আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে কৃতজ্ঞতার নিদর্শন হিসেবে উল্লেখিত দিনগুলোতে যথাযথ গুরুত্ব সহকারে এই ফরজ কাজটি করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

আরও পড়ুন

 

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X