কোরবানির মাসআলা, কোরবানির পশুর বৈশিষ্ট্য
কুরবানী
ঈদুল আজহার দিন আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যে পশু কোরবানি করা হয় তাকে কুরবানি বলে। এই দিনটিকে ইয়াওমুল আযহা বলা হয়। সকালে সূর্যোদয়ের পর থেকে নিয়ম মেনে ‘কুরবানী’ করা হয়। তবে কুরবানী সেদিন সারা দিন এবং পরবর্তী দুই দিন করা যাবে।
উদ্দেশ্য
কুরবানীর মূল উদ্দেশ্য হল খোদাভীতি লাভ করা। যাতে মানুষ বুঝতে পারে যে, আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহের কারণেই সবল প্রাণীরা তাদের মতো দুর্বলদের অনুগত থাকে এবং তাদের মাংস, হাড়, মজ্জা ইত্যাদিতে তাদের জন্য রিজিক তৈরি হয়।
কোরবানি পুণ্যময় ইবাদত। খুবই তাৎপর্যপূর্ণ সময়কাল। এর সাথে আত্মত্যাগের মহিমা এবং সেবার মহিমা জড়িত। যাদের নিসাব শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে সক্ষম তাদের উপর কোরবানি ওয়াজিব। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যদি কেউ কুরবানী না করে তাহলে গুনাহ হবে।
কয়দিন কোরবানি করা যায়
কোরবানি শুধু একদিনই নয় বরং ১০ জিলহজ ঈদুল আজহার দিনসহ আরো দুইদিন কোরবানি করা যাবে। জিলহজ মাসের ১০ তারিখ ঈদের নামাজ পড়ার পর থেকে শুরু করে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত কোরবানি করা যাবে। তবে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের পর কোরবানি বৈধ নয়।
যদি কেউ নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়, ১০ ও ১১ জিলহজ সফরে থাকে। তারপর ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের আগে বাড়ি ফিরে আসে, তবে তার উপর কোরবানি করা ওয়াজিব হবে।
তবে ‘ঈদুল আজহার দিন নামাজের আগে কোরবানি করা বৈধ নয়। কিন্তু যে স্থানে ঈদের নামাজ বা জুমার নামাজ বৈধ নয় বা ব্যবস্থা নেই, সে স্থানে ১০ জিলহজ ফজরের নামাজের পর সূর্যোদয় শেষ হলে কোরবানি করা বৈধ হবে।’
কোরবানি করা যায় এমন পশু
কোরবানির জন্য পশুর স্বাস্থ্য ও গুণাগুণের কিছু দিক বিবেচনা করতে হবে। সব জায়েয পশু কোরবানি করা যাবে না। শরীয়ত কোরবানির জন্য পশু নির্ধারণ করেছে। মোট ছয় প্রকার পশু দিয়ে কুরবানী করা জায়েয। সেগুলো হলো উট, গরু, মহিষ, দুম্বা, ভেড়া ও ছাগল। এগুলো ছাড়া অন্য কোনো পশু দিয়ে কুরবানী করা জায়েয নয়।
কোরবানির জন্য ছাগল, ভেড়া ও ছাগলের বয়স কমপক্ষে ১ বছর হতে হবে। তবে যদি ছয় মাস বয়সী ভেড়া দেখতে মোটা হয় এবং দেখতে এক বছরের মতো হয়, তাহলে তাও কুরবানী করা জায়েয।
- গরু ও মহিষের বয়স দুই বছর হতে হবে।
- আর উটের বয়স হতে হবে পাঁচ বছর।
- একসাথে কতজন কুরবানী করতে পারবে।
- ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ইত্যাদি পশুর ক্ষেত্রে একজনই কুরবানী করতে পারবেন। এতে একাধিক ব্যক্তি অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
- এছাড়া সর্বোচ্চ সাতজন অংশগ্রহণ করে গরু, মহিষ ও উট কোরবানি দিতে পারবেন।
উট, গরু ও মহিষ সম্পর্কে হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একথা বলেছেন। তিনি বললেন, ‘কোরবানির জন্য একটি উট ও একটি গরু-মহিষ সাতজন ভাগ করে নিতে পারে।’ (মুসলিম)
যে দোষ-ত্রুটি থাকলে কোরবানি হবে না
কোরবানির পশু হতে হবে নির্দোষ। পশুতে যে ত্রুটি থাকলে কুরবানী করা যাবে না। সেগুলো এখানে উল্লেখ করা হলো-
১. দৃষ্টিশক্তির অভাব, ২. শ্রবণশক্তির অভাব, ৩. খুব দুর্বল এবং জীর্ণ, ৪. এই পরিমাণ লেংড়া যে জবাই করার স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে অক্ষম, ৫. লেজের বেশির ভাগ কাটা, ৬. জন্মগতভাবে কান না থাকা, ৭. বেশিরভাগ কান কাটা, ৮. গোড়া সহ শিং উপড়ে ফেলা, ৯. পাগলামির কারণে ঘাস-পানি ঠিকমতো না খাওয়া, ১০ . বেশিরভাগ দাঁতের অভাব, ১১ রোগের কারণে বুকের দুধ শুকিয়ে যাওয়া, ১২. ছাগলের দুটি দুধের যেকোনো একটি কাটা, ১৩. গরু বা মহিষের চারটি দুধের যেকোনো দুটি কাটা।
মোটকথা, কোরবানির পশু বড় দোষ থেকে মুক্ত থাকবে। যেমন হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘চার প্রকারের পশু আছে যেগুলোর দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়। অন্ধ-যার অন্ধত্ব স্পষ্ট, অসুস্থ-যার রোগ স্পষ্ট, খোঁড়া-যার পঙ্গুতা স্পষ্ট, এবং আহত-যার অঙ্গ ভেঙে গেছে।’ (ইবনে মাজাহ)
যেসব ত্রুটি থাকলেও কোরবানি দেওয়া যাবে
পশুতে কিছু ত্রুটি থাকলেও কোরবানি দেওয়ার সুয়োগ রয়েছে বা জায়েজ। সেগুলো হলো
১. পশু পাগল, তবে ঘাস-পানি ঠিকমতো খায়; ২. লেজ বা কানের কিছু অংশ কাটা, তবে বেশির ভাগ অংশ আছে; ৩. জন্মগতভাবে শিং নেই, ৪. শিং আছে, তবে ভাঙা; ৫. কান আছে, তবে ছোট; ৬. পশুর একটি পা ভাঙা, তবে তিন পা দিয়ে সে চলতে পারে; ৭. পশুর গায়ে চর্মরোগ, ৮. কিছু দাঁত নেই, তবে বেশির ভাগ আছে। স্বভাবগত-ভাবেই এক অণ্ডকোষের পশু; ৯. পশু বয়োবৃদ্ধ হওয়ার কারণে বাচ্চা জন্মদানে অক্ষম, ১০. পুরুষাঙ্গ কেটে যাওয়ার কারণে সঙ্গমে অক্ষম। তবে উত্তম হচ্ছে ত্রুটিমুক্ত পশু দিয়ে কোরবানি দেওয়া, ত্রুটিযুক্ত পশু দ্বারা কোরবানি দেওয়া অনুচিত।
1 Comment