দুধ: সর্বোচ্চ আদর্শ পানীয়
পৃথিবীর সর্বোচ্চ আদর্শ পানীয় বা খাবার হলো দুধ। কারণ চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরীক্ষা অনুযায়ী দুধ এমন একটি আদর্শ খাবার যেখানে শুধুমাত্র ভিটামিন সি ছাড়া সমস্ত খাদ্য খাদ্যগুণ রয়েছে।
মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য সুষম খাদ্য অপরিহার্য। সুষম খাদ্যের অন্যতম উপাদান দুধ। দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার মানুষকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে। দুধে এমন পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষের জন্য উপকারী।
শিশুদের মতো, অনেক বড়রা দুধ অপছন্দ করে। কেউ কেউ শুধু ভাতের সঙ্গে দুধ-কলা খেতে পছন্দ করেন। তবে এক গ্লাস দুধ পানে তাদের খুব অনীহা। কিন্তু এই দুধকে বলা হয় সুপার ফুড বা কমপ্লিট ফুড। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ফসফরাস, প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি-১২, নিয়াসিন এবং রিবোফ্লাভিন। দুধের বিভিন্ন পুষ্টিগুণ আপনাকে সুস্থ, সবল ও সুস্থ রাখতে পারে।
দুধ সবচেয়ে ভালো খাবার। মানুষের জীবন শুরু হয় দুধ দিয়ে। শিশু-কিশোরসহ সব বয়সের মানুষের জন্য দুধ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় খাবার। যেসব শিশু জন্মের পর সঠিকভাবে দুধ পান করতে পারে না, তারা প্রায়ই বিভিন্ন অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভোগে।
দুধের অত্যাবশ্যকীয় উপাদান ল্যাকটোজ, যা শারীরিক বিকাশ ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে সাহায্য করে। এটি মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষার প্রধান উপাদান। এই পানীয়টিতে অ্যামিনো অ্যাসিড, বিভিন্ন ভিটামিন, খনিজ যেমন ক্রোমিয়াম, আয়রন, কোবাল্ট, ম্যাঙ্গানিজ, তামা, জিঙ্ক এবং আয়োডিন রয়েছে। গরুর দুধে ৮৬.৫% পানি, ৪.৮% ল্যাকটোজ, ৪.৫% চর্বি, ৩.৫% প্রোটিন এবং ০.৭% ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে।
দুধের সবচেয়ে উপকারী দিক হল এর ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম মানুষের হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। এটি ভিটামিন ডি এর একটি ভালো উৎস। ভিটামিন ডি হাড়, দাঁত, নখ, চুল এবং ত্বকে পুষ্টি জোগায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন এ, যা সব বয়সের মানুষের চোখের জন্য উপকারী।
দুধে রয়েছে ফোলেট এবং ম্যাগনেসিয়াম, যা আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে এবং প্যাথোজেনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সাহায্য করে।
অ্যাসিডিটির সমস্যা, পিরিয়ডের সময় প্রচণ্ড ব্যথা, কাজের চাপের কারণে অস্থিরতা- এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারে এক গ্লাস দুধ। প্রতিদিন মাত্র এক গ্লাস দুধ পান করলে আমরা এমন অনেক সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারি। এবার জেনে নেওয়া যাক দুধের নানা উপকারিতা-
ক্যালসিয়াম বৃদ্ধিতে:
ক্যালসিয়াম দাঁত ও হাড়কে শক্তিশালী করে। দুধে থাকা ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি হাড় এবং দাঁত দ্বারা শোষিত হয় এবং তাদের গঠন মজবুত করে। প্রতিদিন দুধ পান করলে দাঁতের ক্ষয়, দাঁতের ক্ষয় ও হলুদ দাগ, হাড় ক্ষয়ের মতো সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে:
প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ পান করলে অন্যান্য খাবারের চাহিদা অনেকাংশে পূরণ হয়। সকালের নাস্তায় দুধ পান করলে তা অনেকক্ষণ পেটে থাকে। ফলে ক্ষুধা কম লাগে। এছাড়া দুধ খেলে শরীরের অনেক ধরনের পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয়। তাই আপনি যদি ওজন বৃদ্ধিতে ভুগছেন এবং স্বাস্থ্যকর উপায়ে কম সময়ে ওজন কমাতে চান, তাহলে আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় দুধ অন্তর্ভুক্ত করুন।
মানসিক চাপ দূর করে শান্তির ঘুম:
দুধে থাকা ভিটামিন এবং খনিজ ফিটনেস বাড়ায় এবং মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করে। দুধ পান করলে ঘুম হয়, যার ফলে মস্তিষ্ক শিথিল এবং চাপমুক্ত থাকে। সারাদিনের মানসিক চাপ দূর করে শান্তির ঘুম নিশ্চিত করতে প্রতিদিন রাতে এক গ্লাস গরম দুধ পান করুন।
ডিহাইড্রেশন দূর করতে:
দুধ শরীরকে পুনরায় হাইড্রেট করতে সাহায্য করে। ডিহাইড্রেশনে ভুগলে এক গ্লাস দুধ পান করুন। সুস্থ বোধ করুন।
কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে:
যদি আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকে এবং দুগ্ধজাত খাবারে অ্যালার্জি না থাকে তাহলে ঘুমানোর আগে প্রতিদিন এক গ্লাস গরম দুধ পান করুন।
অ্যাসিডিটি দূর করতে:
শরীরে ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়ামের মাত্রা ঠিক না থাকলে প্রিমেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম হতে পারে। তাই পিরিয়ডের সময় পেটে ব্যথা ও অ্যাসিডিটির সমস্যা থাকলে এক গ্লাস দুধ খান।
পেশী গঠনে:
দুধে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে যা পেশী গঠনে সাহায্য করে এবং পেশী শক্ত হয়ে যাওয়া থেকে মুক্তি দেয়। প্রতিদিন এক থেকে দুই গ্লাস দুধ নিয়মিত ব্যায়ামের জন্য খুবই উপকারী। পেশী গঠন উন্নত করতে শিশুদের প্রতিদিন দুধ পান করা উচিত।
পেট ঠান্ডা রাখতে:
প্রতিদিন আমরা অনেক ধরনের খাবার খাই যা অ্যাসিডিটি এবং বুকজ্বালা সৃষ্টি করে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ সমাধান হচ্ছে প্রতিদিন দুধ পান করা। দুধ পেট ঠান্ডা রাখে এবং বুকজ্বালা দূর করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে:
দুধে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। প্রতিদিন দুধ পান করলে ত্বক নরম, কোমল ও মসৃণ হয়।
রক্ত সঞ্চালন সঠিক রাখতে:
দুধ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং রক্ত সঞ্চালন উন্নত করার পাশাপাশি রক্ত পরিষ্কার করে।