দিনে ২০ টি সিগারেটে চুমুক মানে ১৩ বছর আয়ু শেষ: চিকিৎসকদের সতর্কবার্তা
অতিরিক্ত ধূমপান অনেক সময় চোখের কর্নিয়ার ক্ষতি করে, ফলে অন্ধত্ব হয়! একটি আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭১ জনের একটি গবেষণা হয় । তাদের মধ্যে শুধু ১৫ জন দিনে ১৫ টিরও কম সিগারেট খান এবং বাকি ৬৩ জন দিনে ২০ টির বেশি সিগারেট খান। যারা দিনে ২০ টির বেশি সিগারেট পান করে তারা কঠিন আসক্ত এবং তারা ছাড়তে চায় না।
যারা দিনে ২০ টি সিগারেট ধূমপান করেন তাদের গড় আয়ু ১৩ বছর কমে যায়। তাদের মধ্যে ২৩ শতাংশই ৬৫ বছর বয়সের আগেই মারা যায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২৩ সালের তথ্য অনুসারে, তামাক ব্যবহার প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী ১ কোটিরও বেশি লোককে হত্যা করে। তামাক এবং ধূমপান হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং ফুসফুসের ব্যাধি সহ মুখ, গলা, ফুসফুস, অগ্ন্যাশয়, মূত্রাশয়, কিডনি, লিভার এবং পাকস্থলীর মতো একাধিক অঙ্গকে প্রভাবিত করে এবং ২০ টিরও বেশি বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সার সৃষ্টি করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, তামাকের নিকোটিন অত্যন্ত আসক্তির , এবং তামাকের ব্যবহার হূদরোগ এবং শ্বাসযন্ত্রের রোগ সহ দুর্বল স্বাস্থ্য এবং মৃত্যুর জন্য একটি বড় ঝুঁকির কারণ। এমনকি অধূমপায়ীদের জন্যও তামাক মারাত্মক হতে পারে। সেকেন্ড-হ্যান্ড ধোঁয়া স্বাস্থ্যের প্রতিকূল ফলাফলের সাথে যুক্ত।
এর ফলে প্রতি বছর ১২ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়। প্রায় অর্ধেক শিশু তামাকের ধোঁয়া দ্বারা দূষিত বায়ুতে শ্বাস নেয় এবং প্রতি বছর ৬৫,০০০ শিশু গর্ভাবস্থায় ধূমপানের কারণে মারা যায়। গর্ভাবস্থায় ধূমপান শিশুর আজীবন স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই তামাক-সম্পর্কিত অসুস্থতা এবং মৃত্যুহার প্রতিরোধ ও কমাতে তামাক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা অপরিহার্য।
প্রতি বছরের মতো এবারও সারা বিশ্বে পালিত হয়েছে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘তামাকজাত দ্রব্য থেকে শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা’। কারণ বহু চেষ্টা করেও যুবসমাজকে তামাকজাত দ্রব্য বা ধূমপানের আসক্তি থেকে পুরোপুরি দূরে রাখা সম্ভব নয়। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তামাকজাত দ্রব্যের প্রভাব থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।
তাই বলা যায়,
- ধূমপানে ক্যান্সার হতে পারে
- দিনে ২০ টি সিগারেট ধূমপান করলে আয়ু ১৩ বছর কমে যায়
- বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তামাকজাত দ্রব্য চিবিয়ে খেলেও মাথা ও ঘাড়ের ক্যান্সার হতে পারে
ধূমপান বা তামাক সেবন স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর তা সবারই জানা। তামাকজাত পণ্যের প্যাকেটে স্বাস্থ্য সতর্কতাও রয়েছে। কিন্তু ধূমপান বা তামাকজাত দ্রব্যের প্রতি আসক্ত ব্যক্তিরা সেসবকে পাত্তা দেন না। তাদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে জেনেও আসক্তিযুক্ত পদার্থ থেকে দূরে থাকা ‘অত্যন্ত কঠিন’ বলে মনে হয়। বাজারে পাওয়া বিড়ি, সিগারেট ও গুটখা সেবনে অনেক রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তামাক ব্যবহারের ফলে সৃষ্ট ক্ষতি সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে প্রতি বছর ৩১ মে বিশ্ব জুড়ে পালিত হয় বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। তামাক আসক্তির ভয়ানক বিপদ সম্পর্কে এখনও অনেকেই সচেতন নন।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বে তামাক সেবনের কারণে প্রতি বছর ১ কোটি ৩৫ লাখ মানুষ মারা যায়। যারা দিনে ২০ টি সিগারেট ধূমপান করেন তাদের গড় আয়ু ১৩ বছর কমে যায়। তাদের মধ্যে ২৩ শতাংশই ৬৫ বছর বয়সের আগেই মারা যায়। ডব্লিউএইচওর একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, সবাইকে সচেতনতার বার্তা জানানোর পাশাপাশি আমাদের প্রতিপাদ্য হচ্ছে শিশুদের তামাক আসক্তি থেকে রক্ষা করা। শিশুদের তামাকের অভ্যাস থেকে রক্ষা করা জরুরি। পরিসংখ্যান অনুসারে, ১০ জনের মধ্যে নয়জন ১৮ বছর বয়সের আগে বয়সের আগেই ধূমপান শুরু করে। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বোঝা সত্ত্বেও তারা ধূমপানে আসক্ত হয়ে পড়ছে।
তামাক সেবন ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। তামাক সেবনের ফলে মুখ, গলা ও ফুসফুসের পাশাপাশি পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয়, কিডনি এবং মূত্রাশয়ের ক্যান্সার হতে পারে। তামাকজাত দ্রব্য চিবানোর ফলে মাথা ও ঘাড়ের ক্যান্সারও হতে পারে। বিশেষ করে মুখের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। অন্যদিকে, ধূমপানের কারণে ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
এক কথায়, তামাক সেবন ও ধূমপান প্রতিরোধে তরুণ ও স্কুলের শিশুদের ওপর নজর দিতে হবে। তাদের সচেতন করা জরুরি। তামাক আসক্তির বিরুদ্ধে বিজ্ঞাপন দিলেও তা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেনি। শিশুদের তামাকজাত দ্রব্য সেবন থেকে বিরত রাখতে হবে। প্রথম সমাধান হল তাদের সিগারেট ছাড়ানো। অন্যদিকে, লক্ষাধিক অধূমপায়ীদেরও সেকেন্ড-হ্যান্ড স্মোকের প্রভাবে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) সদস্য দেশগুলি ১৯৮৭ সালে ‘বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস’ চালু করে।
ইলেকট্রনিক সিগারেট আরও বিপজ্জনক:
ধূমপান ছাড়তে সাহায্য করে এমন ইলেকট্রনিক সিগারেটের বিজ্ঞাপন আসলে উল্টো ধূমপানের আসক্তি বাড়ায়। ইউরোপীয় দেশগুলিতে, ১২.৫% কিশোর-কিশোরী ইলেকট্রনিক সিগারেট ব্যবহার করে। একই অবস্থা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্কুল ছাত্রদের ক্ষেত্রেও । তরুণদের মধ্যে ইলেকট্রনিক সিগারেটের প্রতি আসক্তি দ্রুত বাড়ছে।
ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) এর একটি সমীক্ষা অনুসারে, যারা ২১ বছর বয়সের আগে তামাকের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে তাদের নিকোটিন নির্ভরতা এবং আজীবন তামাক ব্যবহারের হার সবচেয়ে বেশি। প্রসঙ্গত, তামাক বিশ্বের একমাত্র বৈধ পণ্য, যা অনিবার্যভাবে এর ভোক্তার মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। যে কিশোর-কিশোরী আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ হয়ে আজ তামাক সেবন করে, সে আগামীকাল তামাক কোম্পানির আজীবন গ্রাহক হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকদের মতে, আইন জোরদার ও প্রয়োগ করে এই প্রজন্মকে তামাক কোম্পানির হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।