ঘুম প্রতিযোগিতার এক ব্যতিক্রমী আয়োজন করল দক্ষিণ কোরিয়া
মানুষের ব্যস্ত জীবনে দম ফেলার সময় নেই। সময় ও যুগের সাথে তাল মিলিয়ে মানুষ দিন দিন যন্ত্রে পরিণত হচ্ছে। মানুষের আবেগ-অনুভূতি ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। তাই ব্যস্ত মানুষদের জন্য দক্ষিণ কোরিয়ায় হয়েছে ব্যতিক্রমী আয়োজন। এই ব্যস্ত জাতির মানুষকে নিয়ে আয়োজন করা হয়েছে ঘুমের প্রতিযোগিতা। রোববার (১৯ মে) বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
দক্ষিণ কোরিয়ানরা বিশ্বের সবচেয়ে কম ঘুমানো দেশগুলির মধ্যে একটি। (তবে ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস এবং অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকরা বিশ্বে রাতে সবচেয়ে বেশি ঘুমায়। অন্যদিকে, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষ সবচেয়ে কম ঘুমায়।) ব্যস্ত এই জাতির দম ফেলার সুযোগ নেই। ফলে এমন বিশ্রাম নেওয়ার অভ্যাস নেই। তাই, শনিবার (১৮ মে ) সিউলের হান রিভার পার্কে একটি জাতির লোকদের নিয়ে ন্যাপ প্রতিযোগিতা বা ন্যাপ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
ব্যতিক্রমী এই প্রতিযোগিতার আয়োজক লিম জি-হিয়েন বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষ খুব কম ঘুমায়। এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মানুষ বিশ্রাম সম্পর্কে সচেতন হবে। আমাদের লক্ষ্য হল ঘুমের গুরুত্ব সম্পর্কে মানুষকে শিক্ষিত করা।
ঘুমন্ত প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন স্থানীয়রা। একজন প্রতিযোগী বলেন, “আমরা সারা সপ্তাহে অনেক কাজ করি। ফলে আমি ক্লান্ত হলেও ঘুমাতে পারি না। প্রতিযোগিতাটি দুর্দান্ত ছিল। আমি ঘুমাতে পারবো শুনে অংশগ্রহণ করতে এসেছি।
আরেক প্রতিযোগী বলেন, আমাদের দেশ তার প্রতিযোগিতামূলক সমাজ ব্যবস্থার জন্য পরিচিত। এখানে ঘুমের গুরুত্বকে অবমূল্যায়ন করা হয়। এই ধরনের প্রতিযোগিতা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা খুব ভালো হবে।
সংবাদমাধ্যম জানায়, ব্যতিক্রমী এই প্রতিযোগিতায় প্রায় শতাধিক মানুষ অংশ নেন। নিয়ম অনুযায়ী তাদের প্রত্যেককে দেড় ঘণ্টা ঘুমাতে হয় । কে ভালো ঘুমায় তা পরিমাপের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে এই প্রতিযোগিতায়। এটি হৃদস্পন্দনের পার্থক্য পরিমাপ করে নির্ধারিত হয়।
উল্লেখ্য,পরীক্ষার সময় পড়াশোনার চাপ কমাতে এই ঘুম প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় । দক্ষিণ কোরিয়ার একদল শিক্ষার্থী পরীক্ষা নিয়ে তাদের সহপাঠীদের উদ্বেগ কমাতে ঘুমের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল।
তারা সিউলের একটি মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস চলাকালীন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।
তাদের ঘুমানোর জন্য কম্বল ও বালিশও দেওয়া হয়। দিনের আলো যাতে তাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে না পারে সেজন্য তারা চোখের মাস্কও পরতেন।
ঐ সময় আয়োজকরা তাদের ঘুমানোর জন্য পাঁচ মিনিট সময় দেন। তারপর বিচার করা হয় কে গভীর ঘুম পেয়েছে।
এর জন্য, অংশগ্রহণকারীদের বেশ কয়েকটি পরীক্ষা পরিচালনা করে নম্বর দেওয়া হয়। হয়। যেমন তাদের মুখের ওপর ফু দেওয়া এবং কৌতুক পড়ে শোনানো।
আয়োজকরা বলছেন, এই ঘুম প্রতিযোগিতা আয়োজনের উদ্দেশ্য ছিল পরীক্ষার পর মন ও শরীরকে শান্ত করা যাতে পরীক্ষার্থীরা ক্লাবে না গিয়ে ঘুমাতে পারে। পরীক্ষার চাপে শিক্ষার্থীদের ঘুমহীন রাত্রি সম্পর্কে সচেতন করার চেষ্টাও ছিল।
সরকারি পরিসংখ্যান দেখায় যে ১৩ থেকে ২৪ বছর বয়সী প্রতি দশজন ছাত্রের মধ্যে তিনজন ছয় ঘণ্টার কম ঘুম পায়।
এই প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের চকলেট, এনার্জি ড্রিংকস এবং কিছু নগদ টাকা দেওয়া হয়।
ঘুম কেন প্রয়োজন?
রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিরোধ বা শরীরের সঠিক কাজ করার জন্য ঘুম অপরিহার্য। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, স্থূলতা এবং বিষণ্নতা বাড়াতে পারে। এমনকি ঘুমহীন থাকলে স্বাস্থ্যের অবনতিও অস্বাভাবিক নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি ২৪ ঘণ্টায় সমান বিরতিতে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। তবে বিশেষ প্রয়োজনে একটানা ২৪ ঘণ্টা জেগে থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। বিশেষ করে, শিক্ষার্থীদের জন্য। তবে এটা না করাই ভালো।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের স্লিপ মেডিসিন ফেলো ডা. ওরেন কোহেনের মতে, ২৪ ঘন্টা না ঘুমিয়ে কাটানোর পরে, ব্যক্তিটি জেগে আছে নাকি ঘুমিয়ে আছে তা জানা তার পক্ষে কঠিন। এই অবস্থায় যে ব্যক্তি ঘুমায় না তার মস্তিষ্ক ঘুমের সংকেত পাঠাতে থাকে। এ সময় তিনি ঘুম ও জাগরণের মাঝখানে অবস্থান করে। যদিও দেখে মনে হচ্ছে সে জেগে আছে।
একে ঘুমের ব্যাঘাত বা মাইক্রোস্লিপ বলে। যারা ঘুম ছাড়া ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটায়, তাদের মস্তিষ্ক অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও ঘুমের মধ্যে চলে যায়। ফলে তার হ্যালুসিনেশন হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্লিপ ডিজঅর্ডার বা ঘুমের সমস্যা কেন্দ্রের চিকিৎসক অ্যালন আভিডান বলেন, “যখন কেউ আমার কাছে আসে এবং বলে, ‘আমি কয়েক সপ্তাহ ধরে ঘুমাইনি,’ তখন আমি বলি, ‘এটা প্রায় অসম্ভব’,”
1 Comment