স্বামী প্রবাসে থাকলে স্ত্রী কী করবেন?
স্বামী প্রবাসে থাকলে অনেক স্ত্রীই বিভিন্নভাবে চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করে। স্ত্রী যদি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে তবে বড় বা ছোট দেখে না। তাছাড়া অনেক ক্ষেত্রেই সম্মানের কথা মাথায় রাখা হয় না। তাই অনেক প্রবাসীর স্ত্রী সময়ে সময়ে অন্যের সাথে খারাপ সম্পর্ক করে থাকে। তখন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটে।
স্বামী বিদেশে থাকলে স্ত্রীকে তার চাহিদা মেটাতে অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। এই চ্যালেঞ্জগুলি হল:
অর্থনৈতিক চাহিদাঃ
স্ত্রী ও সন্তানদের অর্থনৈতিক চাহিদা প্রবাসী স্বামীর আয়ের উপর নির্ভর করে। স্বামীর অনুপস্থিতিতে স্ত্রীর এসব চাহিদা পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
মানসিক চাহিদা:
স্বামীর অনুপস্থিতিতে স্ত্রী অনেক মানসিক চাপ অনুভব করেন। এটি একাকীত্ব, বিষণ্নতা এবং উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
সামাজিক চাহিদা:
স্বামীর অনুপস্থিতিতে স্ত্রীকে সামাজিকভাবে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।
এই চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করার জন্য স্ত্রীকে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করা উচিত:
স্বামীর সাথে যোগাযোগ বজায় রাখা:
স্বামীর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ স্ত্রীর উপর চাপ কমাতে সাহায্য করবে । এছাড়াও, স্বামীর কাছ থেকে আর্থিক এবং মানসিক সমর্থন পাওয়া স্ত্রীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আত্মনির্ভরশীল হওয়া:
একজন স্ত্রীর উচিত স্বামীর অনুপস্থিতিতে স্বাবলম্বী হতে শেখা। শুধু আর্থিক ভাবে নয় সকল দিক দিয়ে নিজের উপর নির্ভর করার চেষ্টা করুন। এবং নিজের এবং আপনার সন্তানদের দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত হন।
এবং নিম্নের কাজগুলো অবশ্যই করতে হবে যা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো
- ঘুম থেকে উঠলে শুভ সকাল বলুন।
- গোসল করুন এবং সুন্দরভাবে পোশাক পরুন এবং ভিডিও কল করুন।
- কখন কী বলবেন তা খুঁজে বের করুন।
- মাঝে মাঝে হোয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেস পাঠান।
- প্রতিদিন বিকেলে একটি সুন্দর সেলফি তুলে পাঠান।
- রাতের পোশাক পরে রাতে ভিডিও কল করুন।
- প্রতিদিনের ভাল ঘটনা, খারাপ ঘটনা শেয়ার করুন।
- তাকে বলুন আপনি তাকে কতটা ভালবাসেন।
- একে অপরের পাশে না থাকার মাধ্যমে উভয়েই একে অপরকে কতটা মিস করে তা বোঝান।
- দিনে অন্তত দুবার ভিডিও কল, দুবার অডিও কল, সময় থাকলে হোয়াট অ্যাপ মেসেজ করুন
এভাবে দূর থেকেও খুশি রাখা যায় ।
বাংলাদেশে প্রবাসী স্বামীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এ কারণে প্রবাসী স্বামীদের স্ত্রীদের চাহিদা পূরণে সরকারসহ বিভিন্ন সংস্থার উদ্যোগ নেওয়া উচিত। এছাড়াও, প্রবাসী স্বামীদের স্ত্রীদের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ করার জন্য সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।
নীচে প্রবাসী স্বামীদের জন্য কিছু নির্দিষ্ট টিপস দেওয়া হল:
- আপনার স্ত্রীর সাথে নিয়মিত ফোন বা ভিডিও কলে কথা বলুন। এতে আপনি মানসিকভাবে অনেক ভালো থাকবেন।
- আপনার এবং আপনার সন্তানদের জন্য একটি রুটিন তৈরি করুন এবং সেই রুটিনে লেগে থাকার চেষ্টা করুন। এটি আপনার জীবনে কিছুটা নিয়মানুবর্তিতা আনবে এবং আপনাকে মানসিকভাবে শান্ত রাখবে।
- আপনার আর্থিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে একটি বাজেট পরিকল্পনা করুন এবং সেই বাজেটে লেগে থাকার চেষ্টা করুন। এতে আপনার আর্থিক অবস্থারও উন্নতি হবে।
- আপনার সন্তানদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ ক্রুন। তারা আপনার কাছ থেকে ভালবাসা এবং যত্ন পাবে এবং তারাও মানসিকভাবে সুস্থ থাকবে।
- আপনার পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রাখুন। আপনি সামাজিকভাবে ভালো থাকবেন।
- মানসিক চাপ অনুভব করলে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞেরও পরামর্শ নিতে পারেন।
আশা করি এই পরামর্শগুলো আপনাকে প্রবাসী স্বামী স্ত্রীদের সকল প্রকার চাহিদা মেটাতে সাহায্য করবে।
ইসলামতো মানব জীবনের সকল কাজ অত্যন্ত সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে বলে। এটিতে জীবনের সবকিছুর জন্য সঠিক নীতি রয়েছে। ইসলামে যেমন বিয়ের মতো পবিত্র নিয়ম রয়েছে, তেমনি বিয়ের পর স্ত্রীর চাহিদা পূরণের জন্যও রয়েছে আদর্শ নিয়ম। এগুলোও জানা দরকার।
স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে আস্থা ও বিশ্বাসের ওপর। দুজনের সম্পর্ক তাদের দুজনের উপরই নির্ভর করে। দুজনেই যদি একে অপরকে সমান গুরুত্ব দেয়, বিশ্বাস করে তাহলে সম্পর্ক ভাঙার কোনো সুযোগ থাকে না। এই মধুর সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে দুজনকেই সকল বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।
অবশেষে বলা যেতে পারে যে একজন স্ত্রী একজন সহধর্মিণী, সন্তানের মা, তাই একজন স্ত্রী সম্মানের কেন্দ্রবিন্দু । একজন স্ত্রীর অনেক অধিকার এবং দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। স্বামী-স্ত্রী এবং উভয়ে যদি তাদের অধিকার ও কর্তব্যের সীমাবদ্ধতা জেনে অনুশীলন করে তাহলে তাদের দাম্পত্য জীবন অনেক সুন্দর হবে।