November 24, 2024
তারাবীহ নামাযে আল-কুরআন

তারাবীহ নামাযে আল-কুরআন

তারাবীহ নামাযে আল-কুরআন

তারাবীহ নামাযে আল-কুরআন

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

, شَهۡرُ رَمَضَانَ الَّذِیۡۤ اُنۡزِلَ فِیۡهِ الۡقُرۡاٰنُ هُدًی لِّلنَّاسِ وَ بَیِّنٰتٍ مِّنَ الۡهُدٰی وَ الۡفُرۡقَانِ ۚ فَمَنۡ شَهِدَ مِنۡکُمُ الشَّهۡرَ فَلۡیَصُمۡهُ ؕ

রমযান মাস, যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াতস্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে।(সুরা-বাকারা, আয়াত: ১৮৫)

এই আয়াত থেকে বুঝা যায় অন্যান্য ১১ মাসের উপর রমজান মাসের কেন গুরুত্ব। মানবতার মুক্তির একমাত্র পথ আল কুরআন এ রমজান মাসে নাযিল হয়েছে । তাই এ রমজানের গুরুত্ব এত বেশি।  এবং রমজানের সাথে সম্পৃক্ত সকল কাজের গুরুত্ব ততই  বেশি । আর এই রমজানকে পালনকারী যে সকল মানুষ রয়েছেন, যাদেরকে আল্লাহ পছন্দ করে মুসলিম বানিয়েছেন তারাও ততটাই গুরুত্বের অধিকারী।

হ্যা এভাবেই বছর ঘুরে রমজান মাস এসে এক এক করে চলেও যাচ্ছে আমাদের কাছ থেকে। রহমত, বরকত ও ক্ষমার মাস। আর এ মাসেই অবতীর্ণ হয় মানবজাতির মুক্তির একমাত্র  দলিল সন্দেহাতীত  পবিত্র আল-কোরআন। আল্লাহ এই মাসে কুরআন নাজিল করেছেন। বছরের বাকি ১১ মাসে কেমন কোরআন তেলাওয়াত না হলেও এ মাসে মুসলমানরা বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করেন। রমজান মাসে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের বেশি সওয়াব রয়েছে। আর শুদ্ধতা  বা তারতিলের সাথে কুরআন তিলাওয়াত ওয়াজিব। পবিত্র রমজান মাসে তারাবির নামাজে কোরআন খতম হয়। যাকে খতমে তারাবী বলা হয়।

তিলাওয়াতের গুরুত্ব পবিত্র কোরআনেই বর্ণিত হয়েছে। সর্বশক্তিমান আল্লাহ আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর কাছে পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ করেছেন। তাই কুরআন তিলাওয়াত কুরআনের  অন্যতম হক। আমাদের প্রত্যেকের উচিত আল-কুরআন যথাযথভাবে এবং ধীরে ধীরে তেলাওয়াত করা। কুরআন নির্দেশ করে, “তোমার প্রতি অবতীর্ণ কিতাব পাঠ কর এবং সালাত কায়েম কর।” প্রকৃতপক্ষে নামাজ অশ্লীল ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে। আল্লাহর স্মরণ সর্বোত্তম। তোমরা যা কর আল্লাহ তা জানেন।

কুরআন তিলাওয়াতের মধ্যে রয়েছে মহা সওয়াব।

আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলার কিতাবের একটি হরফ যে ব্যক্তি পাঠ করবে তার জন্য এর সাওয়াব আছে। আর সাওয়াব হয় তার দশ গুণ হিসেবে। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ, বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ। সুনান আত-তিরমিযী: ২৯১০।

হে সৎ মানুষ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা বিরত থাকতে পার।’ পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের নিয়ম রয়েছে। সঠিকভাবে কুরআন তেলাওয়াত করতে হবে। আবৃত্তির আচার-আচরণ রক্ষা করতে হবে।

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি সুন্দর উচ্চারণে কুরআন তেলাওয়াত করে না, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়” সহীহ বুখারি: ৭৫২৭।

কুরআনে বলা হয়েছে ধীরে ধীরে তেলাওয়াত করতে। এ কারণে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, কোরআন তেলাওয়াত কর তারতিলের সঙ্গে অর্থাৎ ধীরে ধীরে। সূরা আল-মুজ্জাম্মিল : ৪

বুখারি ও মুসলিমের হাদিস অনুসারে, এই মাসে জিব্রাইল (আ.) রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। আর রাসুল (সাঃ) নিজেও তার সাহাবীদের নিয়ে কয়েক রাতে দীর্ঘ তিলাওয়াত করেছেন কয়েক। সেই সূত্রে তারাবীহ নামাযে বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করা হয়।

অন্তত একটি সম্পূর্ণ কুরআন তেলাওয়াত উলামাদের দ্বারা সুন্নাত বলে বিবেচিত হয়। যাইহোক, যদিও প্রতিটি রাকাতে কয়টি আয়াত পাঠ করতে হবে সে সম্পর্কে কোনো নির্দিষ্ট হাদিস না থাকলেও হজরত ওমর (রা.) ৩০টি আয়াত পাঠ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। হানাফী মাযহাবের একজন বিখ্যাত ফকীহ ইমাম সরখাসী বলেন, “প্রতি রাকাতে ২০ বা ৩০ আয়াত পাঠ করুন।” এভাবে তেলাওয়াতের মূল উদ্দেশ্য হলো রমজানের শেষে সকল মুসলমানকে একটি পূর্ণাঙ্গ কুরআন তিলাওয়াত করা এবং কুরআনের সাথে সম্পর্ক তৈরি করা। আর এর মাধ্যমে মমিন বান্দা হবেন সৌভাগ্যবান, হবেন ধার্মিক ও বিচক্ষণ।

হাফেজদের তেলাওয়াতের চর্চা ঠিক রাখার জন্য এবং প্রতিদিন নিয়মিত নির্দিষ্ট একটি পরিমাণ তেলাওয়াত করার জন্য। যেমন একপারা করে তেলাওয়াত করলে ২০ রাকাতে ২০ পৃষ্ঠা এবং প্রতি রাকাতে ১৫ লাইন করে পড়া যায় । কারণ যদি পৃষ্ঠাতে লাইন রয়েছে ১৫ টি।

আমাদের দেশের প্রায় সব মসজিদেই প্রথম ছয়টি তারাবি দেড় পারা এবং পরে এক পারায় পড়া হয়। ২৭ তারাবিতে কোরআন খতম হয়। কুরআনের মাসে কুরআন শোনার এটি একটি চমৎকার উপায়। রমজানের পুরষ্কারের মাধ্যমে সাফল্য অর্জনের একটি দুর্দান্ত সুযোগ। এ ব্যাপারে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, কোরান খতমের চেয়ে কোরআন পরিশুদ্ধ, স্পষ্ট ও তারতিলের সঙ্গে তিলাওয়াত করাই আবশ্যকীয়। তিলাওয়াতের সৌন্দর্যের সঙ্গে সঙ্গে বিশুদ্ধতা ও ধীরস্থিরতা কাম্য। অনেক হাফেজকে দ্রুত গতিতে তিলাওয়াত করতে দেখা যায়। সেক্ষেত্রে বিশুদ্ধতা এবং ধীরগতির যত্ন নেওয়া বাঞ্ছনীয়। মূলত আমাদের দেশের অধিকাংশ হাফেজই সুরেলা সুরে   দ্রুত তেলাওয়াত করে থাকেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সুরেলা সুর ও গতির চেয়ে যে খাঁটি ও ধীরগতির প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। আমরা কেন যেন  সেদিকে মনোযোগ দিই না।

পবিত্র রমজান মাস। রহমত, বরকত ও ক্ষমার মাস। এ মাসে রোজা রাখার পাশাপাশি বেশি বেশি যিকির ও কোরআন তেলাওয়াত করতে পারি এবং তারাবিহ নামাজে তারতিলের সঙ্গে কোরআন তেলাওয়াত করতে পারি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেদায়েত দান করুন। আমীন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X