রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের সহজ উপায়
হাইপারটেনশনকে বা উচ্চ রক্তচাপকে বলা হয় ‘নীরব’ ঘাতক। কারণ অনেকেরই এই রোগ ধরা পড়ে না। আবার ধরা পড়লেও সঠিক চিকিৎসার অভাবে অনেকের মধ্যে এ রোগ জটিল আকার ধারণ করে। এখন শুধু বয়স্ক মানুষই নয়, যেকোনো বয়সের মানুষেরই উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। এটি সাধারণত অতিরিক্ত ওজন, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, সঠিক খাদ্যাভ্যাসের অভাবের কারণে হয়ে থাকে। এ সমস্যায় চিকিৎসকের নির্দেশিত ওষুধের পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা জরুরি।
অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিপুল সংখ্যক মানুষও এই নীরব ঘাতক উচ্চ রক্তচাপে ভোগে। ‘বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক হেলথ সার্ভে অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি চারজন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজন উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বের প্রায় দেড়শ কোটি মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। এবং সারা বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৭০ লক্ষ মানুষ এই সমস্যায় মারা যায়।
উচ্চ রক্তচাপ কি?
হৃদপিন্ডের ধমনীতে উচ্চ রক্তচাপ উচ্চ রক্তচাপ নামে পরিচিত। এই রক্তচাপ দুটি মান ব্যবহার করে রেকর্ড করা হয় – উচ্চ সংখ্যাকে সিস্টোলিক চাপ বলা হয়, এবং নিম্ন সংখ্যাটি ডায়াস্টোলিক চাপ।
প্রতিটি হৃদস্পন্দনের সময় অর্থাৎ হৃৎপিণ্ডের সংকোচন ও প্রসারণের সময় একবার সিস্টোলিক চাপ এবং একবার ডায়াস্টোলিক চাপ থাকে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের রক্তচাপ ১২০/৮০ মিলিমিটার পারদে থাকে। যদি একজন ব্যক্তির রক্তচাপ রিডিং ১৪০/৯০ বা তার বেশি হয় তবে তার উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। অন্যদিকে, রক্তচাপ ৯০/৬০ বা এর কাছাকাছি হলে তা নিম্ন রক্তচাপ হিসাবে বিবেচিত হয়।
যেসব খাবার উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে
বেশ কিছু খাবার আছে; যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে উপকারী ভূমিকা পালন করে। চলুন জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু খাবার সম্পর্কে-
রক্তচাপ বা রক্তচাপ বেড়ে গেলে তা নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। কারণ এই সমস্যা হার্ট অ্যাটাকের মতোও হতে পারে! আমাদের ভুল খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ ইত্যাদির কারণে রক্তচাপ বাড়তে পারে, সেখান থেকে শরীরে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। রক্তচাপ বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, কিছু ঘরোয়া উপায়ে তা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। প্রতিদিন কিছু খাবার খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে-
কলা
নিয়মিত কলা খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। উপকারী এই ফলটি পটাশিয়াম, ফাইবার এবং ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ। এই উপাদানগুলো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করে। কলা খাওয়া হজমে সাহায্য করে এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে।
তরমুজ
তরমুজ সারা বছর পাওয়া যায় না, তবে এটি গ্রীষ্মের সুস্বাদু ফলগুলির মধ্যে একটি। তরমুজের অনেক উপকারিতা রয়েছে। গরমে নিয়মিত খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সেই সঙ্গে শরীরে জলের ঘাটতিও অনেকটাই দূর হবে।
স্ট্রবেরি
স্ট্রবেরি বিভিন্ন পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি ফল। বিদেশি এই ফলটি এখন আমাদের দেশে চাষ হচ্ছে। স্ট্রবেরিতে রয়েছে অ্যান্থোসায়ানিন, ভিটামিন সি, পটাসিয়াম এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। এই উপাদানগুলো রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। স্ট্রবেরি বিভিন্ন ধরণের খাবার এবং মিষ্টান্ন তৈরিতেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
বেদানা
দরকারী ফল বেদানা। নিয়মিত বেদানা খেলে শরীরের অনেক উপকার হয়। এই ফলটি এনজাইম কমাতে সাহায্য করে। যার কারণে রক্তনালীর আকার নিয়ন্ত্রিত হয় এবং রক্তচাপ কমে যায় এর স্থিতিস্থাপকতার কারণে।
আম
আমের অনেক উপকারিতা রয়েছে। পাকা আম শুধু রসালো এবং সুস্বাদুই নয়, এটি ফাইবার, বিটা-ক্যারোটিন এবং পটাসিয়ামের একটি বড় উৎস। এই উপাদানগুলো রক্তচাপ কমাতে কার্যকরী। যতক্ষণ আম কেনার জন্য পাওয়া যায়, ততক্ষণ তাদের স্বাদ নিন। এতে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
সালাদ
প্রতিদিন সালাদ খাওয়ার অভ্যাস করুন। তাজা শাকসবজি ও ফলমূল দিয়ে সালাদ খান। এই খাবারটি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। নিয়মিত সালাদ খাওয়া আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে।
দই
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে দই খাওয়া উচিত কারণ এতে পটাসিয়াম এবং ক্যালসিয়াম রয়েছে। এই উপাদানগুলো উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমাতে কাজ করে। দইয়ে রয়েছে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া। দই মানসিক চাপ ও প্রদাহ দূর করতে কাজ করে। এগুলো আপনাকে সুস্থ রাখতে চমৎকারভাবে সাহায্য করবে।
ডাবের পানি
নিয়মিত ডাবের পানি পান করলে আপনাকে ভেতর থেকে হাইড্রেটেড রাখবে। এটি প্রাকৃতিকভাবে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
গাঢ় রঙের সবজি
গাঢ় সবুজ শাক-সবজি যেমন পালং শাক ও কলমি রসুন স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। বিশেষ করে যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তাদের জন্য। এটি ৬০০ টিরও বেশি কোষের বিভিন্ন স্তরে কাজ করে এবং নাইট্রিক অক্সাইডের উত্পাদন বাড়িয়ে রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে, যা রক্তনালীগুলিকে শিথিল করে।”
শাকসবজি ছাড়াও, অন্যান্য ম্যাগনেসিয়াম-সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে গোটা শস্য এবং লেবু।
মাছ
যদি আপনার উচ্চ রক্তচাপ থাকে, তাহলে আপনাকে অন্তত দুই ভাগ চর্বিযুক্ত সকল রকমের ছোট মাছ যেমন স্যামন এবং ম্যাকেরেল খেতে হবে। কারণ এটি ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
জার্নাল অফ নিউট্রিশনে প্রকাশিত আইসল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, সপ্তাহে তিনবার স্যামন বা সামুদ্রিক মাছ খাওয়া রক্তচাপ কমায় এবং অন্যান্য চর্বিযুক্ত মাছের চেয়েও সামুদ্রিক মাছ বেশি উপকারী।