ধূমপানের কারণে প্রতি বছর ৮০ লাখ মানুষ মারা যায়
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বে ধূমপায়ীর সংখ্যা ধীরে ধীরে কমেছে। মঙ্গলবার এমন তথ্য জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটি দেশগুলিকে তামাক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছে তামাক আসক্তির কারণে বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মৃত্যু রোধ করতে।
২০২০ সালের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী প্রায় ১.৩ বিলিয়ন মানুষ তামাকজাত দ্রব্য সেবন করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৩২ কোটি লোকের ধুম্পান।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষা অনুসারে, ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ধূমপায়ীদের সংখ্যা ১২৭ মিলিয়নে নেমে আসবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় এখন পর্যন্ত ইঙ্গিত করা হয়েছে যে সাত বছরে প্রায় ৫০ মিলিয়ন মানুষ ধূমপান ছেড়ে দিয়েছে। সারা বিশ্বে যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে তাতে ধূমপায়ীর সংখ্যা এতটাই কমেছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যথেষ্ট আশাবাদী। তার পরেও কমছেনা মৃর্ত্যু।
তামাক সেবনের কারণে প্রতি বছর৮০ লাখ মানুষ মারা যায়
ঢাকা: তামাক সেবনে প্রতিবছর ৮০ লাখ মানুষ মারা যায়। শুধু বাংলাদেশেই এই সংখ্যা ১ লাখ ৬১ হাজার। এর মধ্যে ১২ লাখ মানুষ প্যাসিভ স্মোকিং বা পরোক্ষ ধূমপানের শিকার।
এছাড়াও, দ্বিতীয় হাতের ধোঁয়া হৃদরোগের ঝুঁকি ৮৫% বাড়িয়ে দেয়। এমনকি পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের ক্যান্সার এবং হৃদরোগের সম্ভাবনা ২৫ শতাংশ বেশি।
সেকেন্ড হ্যান্ড স্মোকের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, গর্ভাবস্থায় সেকেন্ড হ্যান্ড স্মোক করলে জন্মের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু বা মৃত সন্তান জন্ম দেওয়ার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যায়। এমনকি, মায়ের বুকের দুধও কমে যায়।
শুধু নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নয়, তামাকজাত পণ্যের ওপর উচ্চহারে কর আরোপ করে প্রায় ১০ লাখ তরুণ-তরুণীকে তামাক সেবন থেকে বিরত রাখা যাবে এবং প্রায় ৫ লাখ তরুণ-তরুণীকে অকাল মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করা যাবে। এছাড়াও, প্রয়োগের মাধ্যমে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত রাজস্ব সংগ্রহ করা যেতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে , বিশ্বে এক বিলিয়ন মানুষ ধূমপান করে। এর মধ্যে ২০ কোটি নারী। কিন্তু প্রতি বছর প্রায় ২২ কোটি নারী তামাক সেবনের কারণে মারা যায়। এদের মধ্যে ৭১ শতাংশেরও বেশি নারী বাংলাদেশের মতো মধ্যম ও নিম্ন আয়ের দেশে বসবাস করেন। এসব এলাকায় তামাকজনিত অসুস্থতা ও মৃত্যুর ঝুঁকিও বেশি।
বিশ্বের অনেক দেশেই নারীদের মধ্যে ধূমপানের হার বেশি। এছাড়াও, তামাক এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিবেশগত ক্ষতির কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের ৮০ শতাংশই নারী।
বাংলাদেশ সরকারের হিসাব অনুযায়ী, তামাকজনিত রোগে প্রতি বছর ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ মারা যায় এবং তামাকজনিত রোগ এবং অকাল মৃত্যুর কারণে প্রতি বছর ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা ব্যয় হয়।
দেশে ১৫ লাখের বেশি প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ এবং ৬১ হাজারের বেশি শিশু তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, তামাকের কারণে বিশ্বে প্রতি ৬ সেকেন্ডে একজনের মৃত্যু হয়। সংস্থাটির পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০৩০ সাল নাগাদ তামাকের কারণে প্রতি বছর ১ কোটি মানুষ মারা যাবে, যার মধ্যে বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের মানুষ হবে ৭ কোটি। ফলস্বরূপ, বিশ্বব্যাপী ধূমপান এবং তামাকজনিত মৃত্যু এইচআইভি এবং এইডস, যক্ষ্মা, ট্র্যাফিক দুর্ঘটনা, আত্মহত্যা, নরহত্যা এবং প্রসবকালীন মৃত্যু সহ সমস্ত মৃত্যুকে ছাড়িয়ে যাবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ সরকার প্রতি বছর তামাক থেকে যে পরিমাণ রাজস্ব আয় করছে তা তামাকের কারণে সৃষ্ট বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যয় হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তামাকের কারণে সৃষ্ট এই ভয়াবহ পরিস্থিতি এড়াতে বাংলাদেশে তামাক উৎপাদন বন্ধ করতে হবে এবং একই সঙ্গে বহির্বিশ্ব থেকে তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য বাংলাদেশে প্রবেশ রোধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদের মতে, তামাকের কবল থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করতে এ বিষয়ে আপস করার কোনো সুযোগ নেই।
তামাকের স্বাস্থ্যগত প্রভাব বলতে মানব স্বাস্থ্যের উপর তামাকের নিয়মিত ব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাবকে বোঝায়। প্রাথমিকভাবে গবেষণা করা হয়েছিল মূলত তামাক ধূমপান নিয়ে। ১৯৫০ সালে, বিজ্ঞানী রিচার্ড ডল ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে একটি গবেষণা প্রকাশ করেন যেখানে তিনি ধূমপান এবং ফুসফুসের ক্যান্সারের মধ্যে একটি সম্পর্ক উল্লেখ করেছিলেন। মাত্র চার বছর পরে, ১৯৫০সালে, ব্রিটিশ ডাক্তার স্টাডি নামে আরেকটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছিল, যা চল্লিশ হাজার ডাক্তারের বিশ বছরের গবেষণার ফলাফল ছিল। সেখানে ধূমপান এবং ফুসফুসের মধ্যে যোগসূত্র নিশ্চিত করা হয়, যার ভিত্তিতে সরকার ঘোষণা করে যে ধূমপান ফুসফুসের ক্যান্সারের হার বাড়ায়।