পৃথিবী ১ সেকেন্ডের জন্য ঘূর্ণন বন্ধ করে দেয় তাহলে কি ঘটবে?
পৃথিবীর সুচারুরূপে ঘূর্ণন, দিন রাত্রির সঠিক পরিবর্তন, আবহাওয়ার ভারসাম্যপূর্ণ পার্থক্য। মানবসহ সকল সৃষ্টি জীবের তাত্ত্বিক নিয়ন্ত্রণ।সেটা এমনিই হচ্ছে না। কোন এক মহান কর্তৃত্বশালী ও পরাক্রমশালী একজনের নির্দেশেই হচ্ছে । আর তিনিই হচ্ছেন সৃষ্টি কর্তা ।
আর সেখানে সামান্যতম পৃথিবীর ঘূর্ণন বন্ধ হলে এক সেকেন্ড কেন এক ন্যানো সেকেন্ডের এদিক সেদিকের ভিতরেই ঘটে যাবে মহাপ্রলয় বা কেয়ামত । তাই ছোট্ট জীব মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর সীমাবদ্ধতার বাইরের আলোচনা যেটা বিশ্বাসের বন্ধন দেখায় । যা ঐশ্বরিক ও বৈজ্ঞানিকভাবে অকাট সত্য ।
২৪ ঘণ্টায় একদিন। এই সময়ে পৃথিবী তার নিজের অক্ষের চারপাশে একটি সম্পূর্ণ বিপ্লব ঘটায়। এইভাবে, পৃথিবী ৩৬৫দিনে একবার সূর্যের চারদিকে ঘোরে। কিন্তু পৃথিবী যদি হঠাৎ থেমে যায় বা ঘূর্ণন বন্ধ করে দেয়?
পৃথিবী ঘোরার সাথে সাথে দিন ও রাত হয় ২৪ ঘন্টায়। পৃথিবীর ঘূর্ণন থেমে গেলে দিন-রাত আর থাকবে না। সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত হবে না। ‘ছয় ঋতুর বাংলাদেশ’-এর আলোচনাও উধাও হয়ে যাবে। আর সেই সাথে একটা বিপর্যয় ঘটবে।
নিরক্ষরেখায়, পৃথিবী তার অক্ষের উপর প্রায় ১০০০ মাইল প্রতি ঘন্টা বেগে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঘোরে। এই অবস্থায় থেমে গেলে মহাপ্রলয় ঘটবে। ঘূর্ণন হঠাৎ থেমে গেলে মানুষ, পশু-পাখি, বাড়িঘর, নদী-সাগর, পাহাড়-পর্বত সবই মহাকাশে পূর্ব দিকে নিক্ষিপ্ত হবে। ঘরবাড়ি ভেঙ্গে পড়বে।
শুধু কি তাই? বাস বা গাড়ি চলতে চলছে দুম করে ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে পড়লে যেমন মানুষজন সামনের দিকে ছিটকে পড়ে, তেমনি পৃথিবী ঘূর্ণন বন্ধ করলে পৃথিবীর পৃষ্ঠের সবকিছু মহাকাশে নিক্ষিপ্ত হবে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর এই ঘূর্ণনই মহাকর্ষীয় বলের জন্মের কারণ। তাই ঘূর্ণন বন্ধ হয়ে গেলে, মাধ্যাকর্ষণ কাজ করা বন্ধ করে দেবে। পৃথিবীর পৃষ্ঠে কোনো প্রাণী জীব জড় বস্তু বেঁচে থাকতে পারে না। একটি পাল্টাপাল্টি শক্তি গড়ে উঠবে যা উল্টে দেবে এবং সবকিছুকে ছিটকে দেবে। সেই সঙ্গে বইতে থাকবে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়। বাতাসের গতি এবং দিকও পৃথিবীর ঘূর্ণনের উপর নির্ভর করে।
কারণ পৃথিবী ঘুরছে, বাতাস সব জায়গায় সমানভাবে বইছে। তাই যদি ঘূর্ণন ১ সেকেন্ডের জন্যও বন্ধ করা হয়, তবে উচ্চ গতির বাতাস থেমে যাবে এবং একই জায়গায় ঘুরতে থাকবে। হাজার হাজার হারিকেনের মতো ঝড় বইতে শুরু করবে। তখন জীবনের অস্তিত্ব সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যাবে।
পৃথিবী যদি চিরতরে তার ঘূর্ণন বন্ধ করে দেয়, তাহলে পৃথিবীতে দিন-রাত্রির অস্তিত্ব বন্ধ হয়ে যাবে, পৃথিবীর যে দিকে সূর্যের মুখোমুখি হবে, তার তাপমাত্রা বাড়বে এবং যে দিকে সূর্যের বিপরীতে থাকবে, তার হিম ক্ষমতা কমে যাবে। সেই সঙ্গে থেমে যাবে জোয়ার। কারণ চাঁদের সাথে পৃথিবীর এই আকর্ষণ ঘূর্ণনের উপর নির্ভরশীল।
যদিও জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা অবশ্য বলছেন যে কৌণিক ভরবেগের স্থায়িত্বের নিয়ম অনুযায়ী পৃথিবীর ঘূর্ণন থামার কোনো কারণ নেই। এই প্রক্রিয়া হাজার হাজার কোটি বছর ধরে চলতে থাকবে।
পৃথিবীর সৃষ্টি ও তার বেঁচে থাকার পুরো ব্যাপারটাই জটিল, রহস্যময়। বিভিন্ন কার্যকারণ সম্পর্ক আছে। সেই সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে প্রায়ই একটি প্রশ্ন জাগে যে, কোটি কোটি বছর ধরে ঘুরতে থাকা এই পৃথিবী থেমে গেলে কী হবে?
পৃথিবী প্রায় ২৪ ঘণ্টায় একবার ঘুরতে পারে। পৃথিবীর ঘূর্ণনের এই গতি ঘন্টায় প্রায় ১০০০ মাইল বলে অনুমান করা হয়। মানুষ অবশ্য এই গতি বোঝে না, কারণ তারাও এর সাথে চলে। পৃথিবী এক সেকেন্ডের জন্যও ঘূর্ণন বন্ধ করলে কী হবে?
এ নিয়ে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন কাল্পনিক মডেল তৈরি করেছেন। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে বর্তমানে হিমায়িত পৃথিবী যদি হঠাৎ ঘূর্ণন বন্ধ করে দেয় তবে বেশিরভাগ গ্রহ ধ্বংস হয়ে যাবে। ধরা যাক, কোনো দ্রুতগামী যান চলাচলের সময় হঠাৎ ব্রেক কষলে তার যাত্রীরা হঠাৎ সামনের দিকে ছুড়ে পড়বে , ঠিক যেমন পৃথিবী, যেটি এত দ্রুত গতিতে ঘোরে, হঠাৎ ঘূর্ণন বন্ধ করে দেয়, তাহলে পৃথিবীর উপরিভাগের সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে। এক মুহূর্তের মধ্যে এগিয়ে নিক্ষেপ করা হবে সবই।
মহাকর্ষীয় শক্তিতে প্রচণ্ড বিশৃঙ্খলা হবে। সমস্ত আবাসন আর নির্মাণ কাঠামো ধসে পড়বে। মহা প্লাবন হবে। সমুদ্র অদ্ভুত আচরণ শুরু করবে। আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তন হবে। বাতাস গরম হবে। বাতাসের দিকও বদলে যাবে। এখন বলি, ১ সেকেন্ড নয়, পৃথিবী যদি চিরতরে থেমে যায়? তাহলে কি হয়? উপরে যা লেখা আছে তাই হবে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এমনটা হলে গ্রহের অর্ধেককে সূর্যের তাপে ক্রমাগত উত্তপ্ত হতে হবে, বাকি অর্ধেককে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা অনুভব করতে হবে। এ কারণে অনেক প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত, ধ্বংস, বিলুপ্ত হবে। মানবজাতি বিলুপ্ত হবে। পৃথিবী তার নিজস্ব কক্ষপথ থেকে ছিটকে পড়বে। হয়তো চিরতরে মহাকাশে মিলিয়ে যাবে। যাইহোক, পৃথিবী থেমে গেলে আর কী হবে তা পুরোপুরি কল্পনা করা কঠিন।
যদি পৃথিবী ঘূর্ণন বন্ধ করে দেয়, তবে এটি পৃথিবীর কার্যকলাপ এবং সমস্ত জীবের জীবনের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। এটি একটি অত্যন্ত কল্পনাপ্রসূত অবস্থান।
কারণ এটি মানব জীবনের বাস্তবতা সম্পর্কে ব্যাপক নয়। যাইহোক, কিছু সম্ভাব্য প্রভাব এবং উল্লেখযোগ্য সমস্যা এই সময়ে বিবেচনা করা যেতে পারে যাহা কোনোরূপ মিথ্যা নয়।