প্রাকৃতিক উপায় চিরদিন ডায়াবেটিস মুক্ত থাকুন
ডায়াবেটিস আক্রান্তদের সমস্যা বাড়ছে। শুধু বয়স্করাই নয়, তরুণরাও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে এবং এর কারণে হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়ছে। এদিকে আরেকটি গবেষণায় জানা গেছে, আগামী ২০ বছরে বিশ্বে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দ্বিগুন হবে। এই গবেষণার তথ্য সবার জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনে এ রোগ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক পরিশ্রম, নিয়মিত চেকআপ, ওজন নিয়ন্ত্রণের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। যদি কোন সমস্যা হয়, আপনি অবিলম্বে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
যুগ যুগ ধরিয়া প্রাকৃতিক উপায়ে চিকিৎসার মাধ্যমে সকল রোগ থেকে মুক্তি থাকা সম্ভব হয়েছে। এবং আজও সে নিয়মকে নিয়ম-তান্ত্রিকভাবে পালন করলে অবশ্যই সকল রোগ সহকারে ডায়াবেটিস রোগীরাও ডায়াবেটিস মুক্তথাকতে পারবেন । তো অবশ্যই মনে রাখবেন আপনার প্রাকৃতিক উপায়ে কোনরূপ সমাধান না পেলে রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে । চলুন আমরা সেই বিষয়ে আলাপ সেরে নেই । তাতে আশা করি উপকার বৈ ক্ষতি হবেনা।
ডায়াবেটিস রোগ প্রধানত দুই প্রকার
টাইপ-১ এবং টাইপ-২। টাইপ ১ ডায়াবেটিস প্রধানত জেনেটিক সমস্যার কারণে হয় এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়। টাইপ২ ডায়াবেটিস খাদ্য বা ওজনের কারণে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, এর লক্ষণগুলি ধীরে ধীরে প্রদর্শিত হয়।
টাইপ ১ ডায়াবেটিস:
টাইপ ১ ডায়াবেটিসকে অটোইমিউন রোগ বলা হয়। যখন অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং শরীর সম্পূর্ণরূপে ইনসুলিন উৎপাদন বন্ধ করে দেয়, তখন সেই অবস্থাকে টাইপ ১ডায়াবেটিস বলা হয়।
টাইপ ২ ডায়াবেটিস:
টাইপ ২ ডায়াবেটিসে, অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন উত্পাদনকারী কোষগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। কিন্তু শরীর ইনসুলিন নেওয়া বন্ধ করে দেয়। অন্য কথায়, টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে, মানবদেহ ইনসুলিনের সম্পূর্ণ ব্যবহার করতে অক্ষম হয়ে পড়ে। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা অতিরিক্ত হারে বেড়ে যায়।
তবে উভয় ধরনের ডায়াবেটিসের লক্ষণ প্রায় একই রকম।
যেমন ডায়াবেটিসের কিছু সাধারণ লক্ষণ হল ক্লান্তি, ওজন হ্রাস, অত্যধিক তৃষ্ণা, ঘন ঘন প্রস্রাব, কাটা বা ক্ষত ধীরে ধীরে নিরাময় হওয়া এবং ঝাপসা দৃষ্টি ইত্যাদি ।
কিন্তু ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো বুঝতে পারলে ঘরে বসেই প্রাকৃতিক উপায়ে নিরাময় করা সম্ভব।
নয়ন তারা গাছ
ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি পেতে নয়নতারা ফুলের গুরুত্ব অপরিসীম। নয়ন তারার ফুল ও মূল, শুকনো হলে ১ গ্রাম এবং কাঁচা হলে ২ গ্রাম,১মাঝারি কাপ পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। সকালে পানি ছেঁকে আধা কাপে ফুটিয়ে নিন। এবার সেই পানির অর্ধেকটা সকালে ও রাতে পান করুন। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
পনির ফুল
পনির ফুল ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। প্রকৃতিবিদদের মতে, পানির ফুল একটি বন্য প্রজাতির ফুল যা সোলান পরিবারের অন্তর্গত। প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে একটি গ্লাসে ১০ থেকে ১২ টি ফুল রাখুন এবং সারারাত রেখে দিন। তারপর এই পানিতে ছেঁকে সকালে খালি পেটে পান করুন। বিশেষজ্ঞদের দাবি, সুষম খাদ্য এবং পনির ফুলের সাহায্যে আমরা অবশ্যই ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।
করলা
করলা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কারণ এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে। করলা ইনসুলিনের ক্ষরণ বাড়াতে সাহায্য করে। দুই বা তিনটি করলার বীজ ফেলে দিয়ে রস বের করে নিন। করলার রস পানিতে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খান।
দারুচিনি
ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্য দারুচিনি খুবই উপকারী। এটি অগ্ন্যাশয়কে ইনসুলিন তৈরি করতে উদ্দীপিত করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা কমায়। দারুচিনি গুঁড়ো চা, পানি বা অন্যান্য পানীয়ের সাথে মেশাতে পারেন।
ঘৃতকুমারী
ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা জেলে ফাইটোস্টেরল নামক শক্তিশালী যৌগ রয়েছে যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। পানিতে অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে দিনে দুবার পান করুন।
আম পাতা
৩-৪টি আম পাতা পানিতে সিদ্ধ করুন। প্রতিদিন সকালে এই মিশ্রণটি খেলে ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা কমে যায়। আমের পাতা শুকিয়ে গুঁড়ো করে নিতে পারেন। এই আম পাতার গুড়া আধা চামচ দিনে দুবার খেতে পারেন।
মেথি
ডায়াবেটিসের অন্যতম সেরা প্রতিকার হল মেথি। ২টেবিল চামচ মেথি বীজ ১ গ্লাস পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। সকালে মেথি বীজর পানি পান করুন।
চর্বিযুক্ত মাছ
ফ্যাটি মাছের মধ্যে রয়েছে স্যামন, সার্ডিন, হেরিং ইত্যাদি। ওমেগা-৩-ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছ, যা ডিএইচএ এবং ইপিএ-এর বড় উৎস, ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
ডুমুর
পুষ্টিবিদদের মতে, ডুমুর ডায়াবেটিস রোগীদের উপর দারুণ প্রভাব ফেলে। ডুমুরে ফাইবার বেশি থাকে। ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ডুমুরে হাইপোগ্লাইসেমিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে পারে। গবেষকরা দেখেছেন যে ডুমুর পাতা ইনসুলিন প্রতিরোধের উন্নতিতেও উপকারী।
ব্যায়াম
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ব্যায়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই রোগের ক্ষেত্রেই আমরা ব্যায়ামকে ওষুধ হিসেবে দেখি। কারণ একজন ডায়াবেটিস রোগী যখন হাঁটা বা ব্যায়াম শুরু করেন তখন তার শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যায়। তখন তার শরীরের নিজস্ব ইনসুলিন তার শরীরে বেশি কাজ করতে থাকে। প্রতিটি কোষ তখন ইনসুলিনের প্রতি সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। তাহলে আপনাকে নিয়মিত ইনসুলিন নিতে হবে না।
এছাড়া নিচের কাজগুলো গুলো ফলো করতে পারেনঃ
- ডায়াবেটিসকে জানুন
- লাল আটার খাবার
- সকালের নাস্তা গুরুত্ব দিন
- স্বাস্থ্যকর খাবার খান
- সবজি খান
- ভালোভাবে ঘুমান
- আঁশযুক্ত খাবার খান
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে পেঁয়াজ খান
- প্রচুর পানি পান করুন
- স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন
- সূর্যতাপ গ্রহণ করুন
- মসলাসমৃদ্ধ খাবার খান
- গ্রিন টি পান করুন
- ধূমপান বর্জন করুন
- মানসিক চাপমুক্ত থাকুন
- খাবারের পরিমাণ কমান
- শারীরিক অনুশীলন করুন
- ফ্যাটযুক্ত খাবার বাদ দিন
- মিষ্টি পানীয় বাদ দিন
- ওজন কমান
1 Comment