অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা দূর করতে খাবারগুলো খেতে পারেন
প্রতিদিনের অসংখ্য চাপ আমাদের মস্তিষ্ককে দুর্বল করে দেয়। হাজার দুশ্চিন্তা প্রতিনিয়ত ঘিরে থাকে। উদ্বেগের এই অনুভূতি আমাদের মস্তিষ্কের কোষগুলিকে সঠিকভাবে কাজ করতে দেয় না। যার কারণে কাজে মনোযোগ দিতে সমস্যা, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, মাথাব্যথা ইত্যাদি দেখা দেয়।
স্ট্রেস শরীরে ফ্রি র্যাডিকেল তৈরি করে, যা শরীরে ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। তাই যতটা সম্ভব এই মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
কিছু খাবার আমাদের মস্তিষ্কের জন্য পুষ্টি জোগায়। এরা উদ্বেগ দূর করতে কাজ করে। এছাড়াও, সেসব খাবার খেলে মস্তিষ্কের ভালো হরমোন যেমন এন্ডোরফিন, ডোপামিন, সেরোটোনিন নিঃসৃত হয়। এগুলো মেজাজ সজীব রাখে। এছাড়াও, এই খাবারগুলি শরীরের ক্ষতিকারক প্রভাব কমায়। ফলে দুশ্চিন্তা অনেকটাই কমে যায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন খাবারগুলো দুশ্চিন্তা কমাতে কাজ করে-
কলা:
নিয়মিত কলা খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। এটি একটি পুষ্টিকর ফল। কলা খেলে শরীরে দ্রুত শক্তি পাওয়া যায়। এই ফলটি মস্তিষ্কের জন্যও উপকারী। নিয়মিত কলা খেলে শরীরে সেরোটোনিন হরমোন নিঃসৃত হয়। যে কারণে এটি মনকে দ্রুত সুস্থ করে তুলতে পারে। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন উপকারী এই ফলটি।
দুধ:
আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য দুধ পান করা অপরিহার্য। এতে রয়েছে পর্যাপ্ত প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম। এছাড়াও এতে ভিটামিন ডি রয়েছে। তাই এই প্রয়োজনীয় উপাদানগুলির ঘাটতি দূর করতে নিয়মিত দুধ খাওয়া উচিত। এই উপকারী পানীয়টি আমাদের মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতেও কাজ করে। নিয়মিত দুধ পান করলে দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকবে।
মাছ:
মাছে রয়েছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। এতে ভিটামিন বি, বিশেষ করে B6 এবং B12 রয়েছে, যা মানুষের মানসিক চাপ কমায় এবং সুখ বাড়ায়।
ব্রুকলি:
ব্রকলি হল ফুলকপির মতোই একটি সবুজ সবজি। এতে চমৎকার কিছু স্ট্রেস রিলিভিং উপাদান রয়েছে।যা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
পালং শাক:
আমরা যখন চাপে থাকি তখন আমাদের পেশী টানটান হয়ে যায়। এই মুহূর্তে আমরা কিছু ভাবতে পারছি না। ঘুমের অসুবিধা এবং উচ্চ রক্তচাপ। এই উপসর্গগুলি উপশম করতে পারে এমন একটি পুষ্টি হল ম্যাগনেসিয়াম।
কিন্তু আপনি যখন মানসিক চাপে থাকেন তখন ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রা কমে যায়। “পালং শাকের মতো সবুজ শাকসবজিতে ম্যাগনেসিয়াম বেশি থাকে। এটি মানসিক চাপ দূর করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে৷
গাজর:
স্ট্রেস কমানোর অন্যতম সেরা খাবার হল তাজা শাকসবজি এবং ফল, নিউট্রিশন নিউপশিয়ালসের প্রতিষ্ঠাতা মান্ডি এনরাইট বলেছেন। এর মধ্যে গাজর এবং আপেল মানসিক চাপ কমায় এবং চোয়ালের শক্ততা দূর করে। খাবার চিবানো বা কামড়ানো ফোকাস পুনর্নির্দেশ করতে পারে এবং চাপ কমাতে পারে।
বেরি:
ব্লুবেরি, ব্ল্যাকবেরি, স্ট্রবেরি ইত্যাদি ফলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এ ধরনের ফল মস্তিষ্কের কোষগুলোকে সচল ও সজীব রাখে।
গ্রিন টি:
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ চা যেমন ল্যাভেন্ডার বা ক্যামোমাইল স্নায়ুকে শান্ত করে। এছাড়াও চা পানের অভ্যাস শরীর থেকে ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দেয়।
টক দই:
টক দই মানসিক চাপ কমাতে খুবই উপকারী। টক দইয়ের ব্যাকটেরিয়া আমাদের শরীরে আত্মবিশ্বাস ও সাহস বাড়ায়। মানসিক চাপও কমায়। টক দই খেলে সাময়িকভাবে মানসিক অশান্তি দূর হয়।
ডার্ক চকলেট:
দুশ্চিন্তা কমাতে ডার্ক চকলেট খেতে পারেন। ডার্ক চকোলেটে কিছু পুষ্টিকর যৌগ রয়েছে যা বিষণ্নতা দূর করতে সাহায্য করে।
বাদাম:
কাজু, আখরোট এবং চিনাবাদাম প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং সবচেয়ে উপকারী উপাদান ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ। বাদামের এই সব উপাদানই মস্তিষ্ককে সচল রাখতে সাহায্য করে।
ভিটামিন সি:
কমলালেবু, আঙ্গুর, গাজর, পালং শাক, বাঁধাকপি, লেটুস পাতার মতো কিছু ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার স্নায়ুকে শান্ত করতে এবং উদ্বেগ কমাতে খুবই সহায়ক।
ওটমিল:
জার্নাল অফ নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সায়েন্সেস-এ প্রকাশিতপর্যালোচনা অনুসারে উষ্ণ ওটমিলের একটি বাটি শিথিলতা এবং প্রশান্তি যোগ করতে পারে। জটিল কার্বোহাইড্রেট খেলে সেরোটোনিনের উৎপাদন বেড়ে যায়। এই রাসায়নিক স্ট্রেস হরমোন কমায়। ওটস ট্রিপটোফ্যানের একটি ভালো উৎস, যা শরীরে সেরোটোনিনে রূপান্তরিত হয়।
রসুন:
রসুনের শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে খুবই সহায়ক। নিয়মিত রসুন খেলে আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকলে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
ওটস:
ওটস ফাইবার সমৃদ্ধ এবং শরীরের চাহিদা পূরণ করে। ওটস মস্তিষ্কে ‘সেরোটোনিন’ নামক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট তৈরিতে বিশেষভাবে সহায়ক। সেরোটোনিন একটি রাসায়নিক যৌগ যা আমাদের মস্তিষ্কে একটি ‘ভালো বোধ’ অনুভূতি তৈরি করে। বিষণ্নতা দূর করতে এই অনুভূতি খুবই কার্যকর।
তাই এসব খাবার নিয়মিত খাওয়ার কথা বলছেন দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞরা।
1 Comment