শীতে কমলা খাবেন কেন?
কনকনে ঠাণ্ডা আর হিমেল বাতাসের কারণে বেশিরভাগ মানুষের অবস্থা খারাপ। এই সময়ে সুস্থ থাকা সবার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শীতে সর্দি, কাশি, জ্বরের মতো সমস্যায় ভুগছেন অনেকেই। এই সমস্যায় বেশ কিছু জটিলতা রয়েছে। শীতকালে সুস্থ থাকতে সবার আগে শরীরকে সুস্থ ও উষ্ণ রাখুন। কমলা শরীরকে সুস্থ ও উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে। কমলা খুবই উপকারী একটি ফল।
কমলাঃ
কমলা গাছের বৈজ্ঞানিক নাম সাইট্রাস রেটিকুলাটা। চীনে কমলার চাষ শুরু হয় প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে। এরপর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ চীন ও উত্তর-পূর্ব ভারতে কমলার চাষ শুরু হয়। খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীতে, রোমানরা ভারত থেকে কমলা এনে চাষ শুরু করে। অন্যদিকে, ক্রিস্টোফার কলম্বাস ১৪৯৩ সালে হাইতিতে কমলা রোপণ করেছিলেন। ১৫১৩ সালে আমেরিকায় প্রথমবারের মতো কমলা চাষের প্রবর্তন করেন। ভ্যালেন্সিয়া, ব্লাড অরেঞ্জ, নাভি এবং পারস্যের কমলা সবচেয়ে মিষ্টি। তারপর, ১৫১৮ সালের দিকে, পানামা এবং মেক্সিকোতে কমলা চাষ শুরু হয়, তার পরে ব্রাজিল। অন্যদিকে, স্প্যানিশ অভিযাত্রী জুয়ান পাঞ্চ ডি লিওন
পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খোসা এবং কমলা দুটোই পুষ্টিগুণে ভরপুর।
পুষ্টিগুণঃ
প্রতি ১০০ গ্রাম কমলাতে ভিটামিন বি ০.৮ মিলিগ্রাম, সি ৪৯ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩৩ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ৩০০ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ২৩ মিলিগ্রাম পরিমাণে রয়েছে। অনেকেই প্রতিদিন কমলা খেতে পছন্দ করেন না। সেক্ষেত্রে কমলার জুস বানিয়ে খেতে পারেন। এতে স্বাদ বাড়বে এবং পুষ্টিগুণও কমবে না।
কমলা একটি সুপারফুড যা শরীরের বিভিন্ন উপায়ে উপকার করে। বিশেষ করে শীতের দিনে, এই ফলটিতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো থেকে শুরু করে হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং ওজন কমাতে সাহায্য করা সবই রয়েছে। আপনার ডায়েটে এই সুস্বাদু ফলটি যোগ করার প্রচুর কারণ রয়েছে।
ঠাণ্ডা বাড়ার সাথে সাথে আমরা শরীর গরম করার জন্য বিভিন্ন ধরনের আরামদায়ক খাবার খাই। এই খাবারগুলির মধ্যে কিছু ক্যালোরি বেশি এবং পুষ্টির অভাব হতে পারে। এ কারণেই আমাদের খাদ্যতালিকায় মৌসুমি ফল ও সবজি অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। শীতের সুপারফুড কমলা শুধু খেতেই সুস্বাদু নয়, এর রয়েছে নানা স্বাস্থ্য উপকারিতা।
শীতকালে কেন আপনার খাদ্যতালিকায় কমলা যোগ করবেন কারণঃ
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:
কমলালেবু ভিটামিন সি-এর একটি চমৎকার উৎস, যা এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত। এই অত্যাবশ্যক ভিটামিন শ্বেত রক্ত কণিকার উৎপাদনকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে, যা সংক্রমণ এবং অসুস্থতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য দায়ী।
হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো:
কমলালেবুতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে। পটাসিয়াম একটি খনিজ যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এগুলিতে দ্রবণীয় ফাইবারও রয়েছে, যা রক্ত প্রবাহে কোলেস্টেরলের শোষণকে ধীর করে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। এছাড়াও, কমলালেবুর ফ্ল্যাভোনয়েড হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
পুষ্টিগুণে ভরপুর:
কমলালেবুতে শুধু ভিটামিন সিই নয়, অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানও রয়েছে। এতে থাকা ফোলেট, ভিটামিন বি রক্তে লোহিত কণিকা তৈরি করে। এটি সুস্থ কোষ বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য।
ত্বকের ভালো স্বাস্থ্য বজায় রাখে:
কমলালেবুতে থাকা উচ্চ মাত্রার ভিটামিন সি কোলাজেন উৎপাদনের জন্য অপরিহার্য। কোলাজেন ত্বককে শক্ত ও স্থিতিস্থাপক রাখতে সাহায্য করে। কমলালেবুতে থাকা উপকারী উপাদান ত্বককে সূর্যের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে এবং ক্ষত সারাতে সাহায্য করে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে:
যারা ওজন কমাতে চান তাদের প্রতিদিনের খাবারে কমলা যোগ করা উচিত। এতে থাকা পানি অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ না করেই আপনাকে পূর্ণতা অনুভব করতে সাহায্য করতে পারে। ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়।
অনিদ্রা দূর করতে:
ঘুমের পূর্বে কমলার খোসা মিশিয়ে পানি পান করলে অনিদ্রা দূর হয়।
ক্যান্সার ও হাড়ের রোগ প্রতিরোধে:
কমলার খোসায় রয়েছে ‘হেস্পেরিডিন’ নামে পরিচিত ফ্ল্যাভোনয়েড। এটি কোলন ক্যান্সার এবং অস্টিওপরোসিসের বিরুদ্ধে কাজ করে আমাদের রক্ষা করে।
অ্যাসিডিটির সমস্যা:
কমলায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা পেটের অ্যাসিডিটি দূর করতে সাহায্য করে।
হাঁপানি ও কাশির সমস্যা:
কমলার খোসার গুঁড়া কাশির সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। এমনকি শ্বাসকষ্ট এবং হাঁপানি দূর করতেও এটি উপকারী। এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত কমলার খোসার চা পান করুন।
এছাড়াও কমলা হল ভিটামিন সি-এর অন্যতম শক্তিশালী উৎস। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি, এই ভিটামিন শরীরে আয়রন সঞ্চয় ও শোষণ করতেও সাহায্য করে। শরীরের নিরাময়, রক্তনালী, তরুণাস্থি, পেশী এবং হাড়ের কোলাজেন গঠনের জন্য এটি প্রয়োজন।
কমলালেবুতে থাকা ডায়েটারি ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে অন্ত্রকে সুস্থ রাখে। ফাইবার কোলেস্টেরল কমায় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
তাই সম্ভব হলে শীতে দৈনন্দিন কমলা থাকতে পারে আমাদের খাদ্য তালিকায়।