পানিতে শান্তি পানিতে শাস্তি
তাই বলা চলে যে পানি আপনাকে রক্ষা করে শান্তি দিতে পারে । সেই পানি আবার অতিরিক্ত পান করার ফলে অথবা না বুঝে পানের ফলে শাস্তিও হতে পারে। এবং জীবনের জন্য বড় ঝুঁকি হয়ে যেতে পারে ।
পানি বাঁচায় জীবন, আর পানি কেড়ে নেয় জীবন! পর্যাপ্ত পানি পান করে আমরা যেমন সুস্থ জীবনযাপন করতে পারি, তেমনি অতিরিক্ত পানি পান করলে বড় বিপদও হতে পারে। এছাড়াও অপর্যাপ্ত পানি পানের কারণে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়। তাই পানি পানের ব্যাপারে সতর্ক থাকা জরুরি।
কখন কত পানি পান?
প্রাপ্তবয়স্ক এবং সক্রিয় ব্যক্তিদের জন্য, ডাক্তাররা সাধারণত প্রতিদিন ২-৩ লিটার পানি পান করার পরামর্শ দেন। তবে দিনে কী পরিমাণ পানি পান করতে হবে তা মূলত আবহাওয়া, ব্যক্তির শারীরিক পরিশ্রম, ঘামের পরিমাণ ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে। শীতের তুলনায় গরমে শরীরে পানির চাহিদা বেড়ে যায়। যারা বেশি শারীরিক পরিশ্রম করেন, তাদের বেশি করে পানি পান করতে হবে। আর যারা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঘামেন, তাদের একটু বেশি পানি পান করা দরকার।
এই কারণে, বিশ্বব্যাপী দৈনিক পানি পানের জন্য কোন নির্দিষ্ট মান নেই। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে আমেরিকানরা তাদের দৈনিক পানির চাহিদার প্রায় ২০% খাবার থেকে পায়। অবশিষ্ট ৮০ % সরাসরি পানীয় জল বা অন্যান্য পানীয় দ্বারা পূরণ করতে হবে।
ফল ও সবজিতে প্রচুর পানি থাকে। এ ছাড়া চা, দুধ ও কফি থেকেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পানি সরবরাহ করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড মেডিসিনের নির্দেশিকা অনুসারে, খাবার এবং সরাসরি পান করা পানি থেকে প্রাপ্ত জলের দৈনিক পানির পরিমাণ একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের জন্য ৩.৭ লিটার এবং একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার জন্য ২.৭ লিটার হওয়া উচিত।
এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা এই পরিমাণের একটি বড় অংশ খাদ্য থেকে পাই। তাই খাবারের মাধ্যমে যতটুকু পানি গ্রহণ করা হয় তা ছাড়া বাকি পানি পান করাই আমাদের জন্য যথেষ্ট। গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের জন্য দৈনিক পানির প্রয়োজনীয়তা কিছুটা বেশি। আবার শিশুদের ক্ষেত্রে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দৈনিক পানির চাহিদাও বাড়ে।
পানি কম পান করার কারণে সমস্যাঃ
আমাদের শরীরের প্রায় ৬০ শতাংশ পানি । তাই পর্যাপ্ত পানি পান না করলে শরীরের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়। ক্লান্তি, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, পেশীতে টান, খিটখিটে মেজাজের পাশাপাশি শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বক এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো উপসর্গগুলি অল্প সময়ের মধ্যেই দেখা দেয়। এ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদে পানির অপ্রতুলতা নানা জটিলতা সৃষ্টি করে। কিডনির কার্যকারিতা হ্রাস, কিডনিতে পাথর, মূত্রনালীর সংক্রমণ এবং উচ্চ রক্তচাপ। গবেষণায় দেখা গেছে যে পর্যাপ্ত পানি পান না করলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।
পানি অতিরিক্ত পান করার কারণে সমস্যাঃ
পর্যাপ্ত পানি পান করার ফলে শরীরের ভেতরের কোষগুলো শক্তিশালী ও স্বাভাবিক থাকে, শরীরে রক্ত চলাচলও স্বাভাবিক থাকে। কিডনি আমাদের খাবার পানির ফিল্টার হিসেবে কাজ করে! কিন্তু একটি নির্দিষ্ট মাত্রার উপরে এই ফিল্টার কার্যকর নয়। প্রতি ঘণ্টায় ১ লিটারের বেশি পানি পান করলে কিডনি আর প্রস্রাবের মাধ্যমে এই অতিরিক্ত পানি শরীর থেকে বের করে দিতে পারে না। এই কিডনির কার্যকারিতা বয়স্ক এবং শিশুদের মধ্যে কম। তাই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ৩-৪ লিটারের বেশি পানি পান করলে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হয়ে যায়।
প্রাথমিকভাবে বমি বমি ভাব, ক্লান্তি, মাথাব্যথার মতো সমস্যা দেখা দেয়। অত্যধিক পানি পান করার ফলে রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা খুব কমে যেতে পারে – একটি অবস্থা যাকে বলা হয় ‘হাইপোনাট্রেমিয়া’। ফলে শরীরের কোষগুলো ফুলে উঠতে শুরু করে। অবশেষে মস্তিষ্কের কোষের ফুলে যাওয়া অজ্ঞান বা কোমায় পরিণত হয়।
ম্যারাথন দৌড়বিদ বা সামরিক প্রশিক্ষণে অতিরিক্ত হাইড্রেশনের কারণে মৃত্যু বেশি হয়। মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এটি প্রায়শই ঘটে। এছাড়া মানুষকে অতিরিক্ত পানি পান করতে বাধ্য করে মৃত্যুর ঝুঁকিতে ঠেলে দেওয়ার নজির রয়েছে।
এ কারণেই পর্যাপ্ত পানি পানের বিষয়ে আমাদের সচেতনতা জরুরি। মানুষের আবহাওয়া, লিঙ্গ, বয়স, শারীরিক পরিশ্রম ইত্যাদির কথা মাথায় রেখে পানি পান করতে হবে। কিডনি, লিভার ও হার্টের রোগীদের চিকিৎসকরা পরিমিত পরিমাণে পানি পান করতে বলেন, এসব ক্ষেত্রে অতিরিক্ত পানি পান করা বিপজ্জনক হতে পারে। তৃষ্ণা শরীরের পানির প্রয়োজনীয়তা বলার অন্যতম উপায়। যখনই পিপাসা লাগে তখনই পানি পান করে এই পানির ঘাটতি পূরণ করতে হবে।
কখন এবং কতটা পানি পান করবেন তা নিয়ে দ্বিধা থাকলে প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।
আরও পড়তে
জমজমের পানি