ইউক্রেনে ৯০ টি অমানবিক ড্রোন হামলা চালিয়ে নতুন বছর শুরু করল রাশিয়া
রাশিয়া ইউক্রেনে ৯০টি ড্রোন হামলার মাধ্যমে বছর শুরু করেছে । আমরা জানি বর্তমান অস্থিতিশীল বিশ্ব পরিস্থিতিতে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের তীব্রতা ক্রমেই বাড়ছে। রাশিয়ার আক্রমণ ২৪ফেব্রুয়ারী, ২০২২ থেকে শুরু হয়েছিল, ইউক্রেনীয় শহরগুলিতে কয়েক ডজন ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে। এই হামলাকে আন্তর্জাতিকভাবে আগ্রাসন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকটের সূত্রপাত করেছে, প্রায় ৮৮ লক্ষেরও বেশি ইউক্রেনীয় দেশ ছেড়েছে এবং আরও লক্ষাধিক অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়। ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ ১৯৪৫ সালের পর ইউরোপে সবচেয়ে বিধ্বংসী সংঘাত। যদিও পশ্চিমের অনেকেই এই যুদ্ধকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ হিসেবে দেখছেন।
নতুন বছরের প্রথম ঘণ্টায় ইউক্রেনে ৯০টি ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। ইরানের কামিকাজে ড্রোনের মতো এই ড্রোনগুলো ইউক্রেনে আঘাত হানে। গত রোববার রাতে এই হামলা চালায় রাশিয়া। ইউক্রেনের বিমান বাহিনী গত সোমবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। ১৫ বছরের এক ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওডেসায় ৮৭ টি ড্রোন হামলা হয়েছে। হামলায় ১৫ বছর বয়সী এক ছেলে নিহত ও সাতজন আহত হয়েছে। হামলার ফলে বন্দর এলাকায় আগুনও ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া পশ্চিম ইউক্রেনের লভিভ শহরে রুশ ড্রোন হামলায় একটি জাদুঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এই হামলার জবাবে ইউক্রেনের রুশ-অধিকৃত এলাকায় হামলা চালায় ইউক্রেন। এতে চারজন নিহত ও ১৩ জন আহত হয়েছেন। রাশিয়া বলছে, হামলায় সাংবাদিকও আহত হয়েছেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চল লক্ষ্য করে অন্তত ১০০ টি শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে রাশিয়া। এর একদিন পরই রাশিয়ার অভ্যন্তরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইউক্রেন। রুশ বাহিনীর শক্তিশালী হামলায় অন্তত ৪০ ইউক্রেনীয় নিহত হয়েছে। রাশিয়ার হামলায় বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতালের প্রসূতি ইউনিট এবং বেসামরিক সুবিধা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশ কিছু শহর বিদ্যুত বিহীন ছিল।
রাশিয়ার বেলগোরোড অঞ্চল ইউক্রেনের লুহানস্ক, সামি এবং খারকিভ অঞ্চলের পাশে অবস্থিত। এর আগেও বহুবার বেলেগোরোড সংলগ্ন ইউক্রেনের এলাকায় হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী। বেলগোরোড রাশিয়ার রাজধানী মস্কো থেকে ৬০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। অঞ্চলটি ইউক্রেনের কাছে হওয়ায় রাশিয়া এটিকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছে।
এদিকে পুতিন ইউক্রেনের ওপর হামলা আরও জোরদার করার ঘোষণা দিয়েছেন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে হামলা জোরদার করার ঘোষণা দিয়েছেন। তাছাড়া প্রায় দুই বছর ধরে চলমান এই যুদ্ধ খুব শিগগিরই শেষ করতে চান বলেও জানান তিনি।
রাজধানী মস্কোর একটি সামরিক হাসপাতাল পরিদর্শনকালে পুতিন বলেছেন যে রুশ সেনাবাহিনী ইউক্রেনের সামরিক স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা অব্যাহত রাখবে। আক্রমণের মাত্রা আরও জোরদার করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্ররা এই যুদ্ধ থামতে দিচ্ছে না। তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর বক্তব্য পাল্টাতে শুরু করেছে। কারণ তারা বুঝতে শুরু করেছে যে রাশিয়াকে পরাজিত বা ধ্বংস করা যাবে না।
এদিকে, রুশ প্রেসিডেন্টের এসব বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ২০২৩ সালে রাশিয়া আমাদের একটি বড় শহরও দখল করতে পারবে না। তাই পুতিনের ইঙ্গিত যে রাশিয়া যুদ্ধে জিততে যাচ্ছে তা কল্পনা মাত্র।
জেলেনস্কি দ্য ইকোনমিস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মন্তব্য করেছেন। যাইহোক, ২৫ ডিসেম্বর, রাশিয়া ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলের একটি প্রধান শহর মারিঙ্কা দখলের দাবি করেছে। বিষয়টি পরে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর প্রধান ভ্যালেরি জালুঝনি নিশ্চিত করেছেন।
পশ্চিমা মিত্রদের প্রতি হতাশা প্রকাশ করে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, আমাদের মিত্ররা তাদের জরুরি বোধ হারিয়ে ফেলেছে। কিন্তু নতুন বছরের শুরুতে এক বক্তৃতায় জেলেনস্কি তার দেশে উৎপাদিত অস্ত্রের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি অন্তত ১০ লাখ ড্রোন তৈরির প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।
গত কয়েকদিন ধরে রাশিয়া ও ইউক্রেন মারাত্মক হামলা ও পাল্টা হামলা চালিয়েছে। নতুন বছরের ঠিক আগে ইউক্রেন রুশ নিয়ন্ত্রিত শহর দোনেস্কে গোলাবর্ষণ করেছে। সেখানে নিযুক্ত রুশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইউক্রেনের এই হামলায় অন্তত চারজন নিহত ও ১৩ জন আহত হয়েছে।
তাছাড়া, শনিবার (৩০ ডিসেম্বর, ২০২৩) ইউক্রেন রাশিয়ার বেলগোরোডে বিমান হামলা চালায়। ২৫ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। তাদের মধ্যে একটি শিশুও রয়েছে। পুতিন এই হামলাকে কিয়েভের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর পরিকল্পিত ও পরিকল্পিত হামলা বলে অভিহিত করেছেন।
এর আগে গত সপ্তাহে ইউক্রেনের কয়েকটি শহরে ব্যাপক হামলা চালায় রাশিয়া। অন্তত ৪৫ জন নিহত হয়েছে। কিয়েভ এই হামলাকে যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার সবচেয়ে বড় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বলে অভিহিত করেছে।