October 18, 2024
জাপানে ৯০ মিনিটের ২১ টি ভূমিকম্পে ৩৩০০০ এরও বেশি বাড়িঘর ধ্বংস

জাপানে ৯০ মিনিটের ২১ টি ভূমিকম্পে ৩৩০০০ এরও বেশি বাড়িঘর ধ্বংস

জাপানে ৯০ মিনিটের ২১ টি ভূমিকম্পে ৩৩০০০ এরও বেশি বাড়িঘর ধ্বংস

জাপানে ৯০ মিনিটের ২১ টি ভূমিকম্পে ৩৩০০০ এরও বেশি বাড়িঘর ধ্বংস

এশিয়ার অন্যতম ধনী এবং উন্নত আইকনিক দেশের মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে জাপান কিন্তুজাপান বিশ্বের অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ। দেশটি প্যাসিফিক রিং অফ ফায়ারে অবস্থিত। যেখানে অনেক টেকটোনিক প্লেট মিলিত হয়। ফলে দেশে প্রায়ই ভূমিকম্প হয়।

২০১১ সালের সুনামির স্মৃতি ফিরে এসেছে। বছরের প্রথম দিনে এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল জাপান। সোমবার দুপুর ১২টা ৫৪ মিনিটে পশ্চিম জাপানে ৭.৪ মাত্রার কম্পন অনুভূত হয়। দ্য জাপান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির উত্তর-পশ্চিম উপকূলে সুনামির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। জাপানের রাজধানী টোকিও ও কান্তো এলাকায় কম্পন অনুভূত হয়েছে।

জাপানে ৯০মিনিটে মোট ২১টি ভূমিকম্প হয়েছে। আর এসব ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত দেশের মূল ভূখণ্ডে অন্তত ৩৩ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।

জাপানের আবহাওয়া সংস্থা (জেএমএ) এক বিবৃতিতে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ (ইউএসজিএস) এবং জেএমএ অনুসারে, সোমবার স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে জাপানে প্রথম ভূমিকম্প আঘাত হানে। এর কেন্দ্র বা কেন্দ্রস্থল ছিল দেশটির কেন্দ্রীয় দ্বীপ হোনশুর ইশিকাওয়া। প্রথম ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫.২। USGS-এর তথ্য অনুসারে, জাপানে আঘাত করা ২১টি ভূমিকম্পের মধ্যে সবচেয়ে ছোটটির ৪.৬ মাত্রা ছিল এবং সবচেয়ে বড়টির মাত্রা ছিল ৭.৫।

ভূগর্ভস্থ রিং অফ ফায়ার টেকটোনিক প্লেটে অবস্থানের কারণে জাপান বেশি বেশি ভূমিকম্প অনুভব হয় । এর আগে ২০১১ সালের মার্চ মাসে জাপানে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল। ভয়াবহ ভূমিকম্প ও তার ফলে সৃষ্ট সুনামিতে সে সময় দেশে প্রায় ১৮ হাজার ৫০০ মানুষ মারা যায়। প্রায় ১৩ বছর পর সোমবার জাপানে একটি বড় ভূমিকম্প হয়েছে।

এদিকে জাপানে ভূমিকম্পের পর ইশিকাওয়া অঞ্চলে নিত্যপণ্যের মজুদ রয়েছে। সেখানকার দোকানের কর্মী তাকাশি ওয়াকাবায়াশি বলেন, পণ্যগুলো দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হল অনেক মানুষ বোতলজাত পানীয়, ভাত ও রুটি কিনতে জড়ো হয়েছে। সংবাদমাধ্যমগুলো এ খবর জানিয়েছে। দোকানে স্বাভাবিকের চেয়ে তিনগুণ বেশি ক্রেতা রয়েছে বলে জানান ওই শ্রমিক।

২০১১ সালে একটি বিধ্বংসী 9 মাত্রার ভূমিকম্পের পর, জাপান সোমবার আরেকটি শক্তিশালী ভূমিকম্পে আঘাত হেনেছে। সেই  বছর আগে ভূমিকম্প ও সুনামিতে ১৮ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল।

ন্যাটো অঞ্চলের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প

ন্যাটো উপদ্বীপে ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে। ১৮৮৫ সালে রেকর্ড শুরু হওয়ার পর থেকে এটি ইশিকাওয়া অঞ্চলে ন্যাটো উপদ্বীপে আঘাত হানার সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প। ১১ মার্চ, ২০১১সালের পর প্রথমবারের মতো সোমবার একটি বড় সুনামির সতর্কতা জারি করা হয়েছিল, জাপান আবহাওয়া সংস্থার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। ২০১৮ সালের পর এটিই প্রথম ৭ মাত্রার বেশি ভূমিকম্প জাপানে আঘাত হেনেছে।

পরবর্তী ৯০ মিনিট বিপজ্জনক সময়

টোকিওর সাংবাদিক ক্রিস গিলবার্ট বলেছেন, উত্তর-পশ্চিম উপকূলে সুনামির ঢেউ আছড়ে পড়তে শুরু করেছে। তিনি বলেন, এসব ঢেউ ৫০ সেন্টিমিটার থেকে ১ মিটার পর্যন্ত উঁচু। উচ্চতর তরঙ্গ প্রভাবের সময় ঘনিয়ে আসছে। পরবর্তী ৯০ মিনিট একটি সম্ভাব্য বড় সুনামির জন্য সত্যিই বিপজ্জনক সময়।

সুনামির সতর্কতা

সোমবার মধ্য জাপানে ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। দেশটি তাৎক্ষণিকভাবে বড় ধরনের সুনামির সতর্কতা জারি করেছে। সংবাদমাধ্যমগুলো প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।

জাপানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারকারী এনএইচকে জানিয়েছে, ইশিকাওয়া প্রিফেকচারের উপকূলীয় নোটো এলাকার বাসিন্দাদের “অবিলম্বে উঁচু ভূমিতে সরে যেতে” বলা হয়েছে। খবরে আরও বলা হয়, ইশিকাওয়ার ওয়াজিমা বন্দরে প্রথম সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়। সেখানে এক মিটারের বেশি ঢেউ উঠছে বলে সতর্ক করেছে দেশটির আবহাওয়া বিভাগ। নোটোতে ৫ মিটার উচ্চতার ঢেউ উঠতে পারে বলে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

এছাড়া প্রতিবেশী নিগাতা ও তোয়ামা প্রিফেকচারেও সুনামির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সেখানে সমুদ্রের ঢেউ ৩ মিটার পর্যন্ত উঠতে পারে। ভূমিকম্পের কারণে জাপানের কিছু অংশে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তবে দেশের বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎ অপারেটর কানসাই ইলেকট্রিক জানিয়েছে, ভূমিকম্প-বিধ্বস্ত এলাকায় পারমাণবিক কেন্দ্রে অস্বাভাবিক কিছু ঘটেনি।

দেশের বিভিন্ন স্থানে আফটারশক সতর্কতাও জারি করা হয়েছে। টোকিও এবং ইশিকাওয়ার মধ্যে বুলেট ট্রেন পরিষেবাও বাতিল করা হয়েছে । এই সকল বিশেষ ট্রেনের সকল যাত্রাই বাতিল করা হয়েছে। এ খবর জাপান রেলওয়ে জানিয়েছে।

সোমবারের ভূমিকম্প যে অঞ্চলে হয়েছিল সেখানে বেশ কয়েকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অবস্থিত। তবে জাপানের পারমাণবিক কর্তৃপক্ষ বলেছে, “কোথাও তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি নেই।”

জাপান ছাড়াও রাশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার আবহাওয়া দফতর থেকেও সুনামির সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X