শীতে বয়স্কদের স্বাস্থ্য রক্ষায় করণীয়
শীতকালঃ
(মেরু এবং নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুতে শীতকাল বছরের শীতলতম ঋতু। এটি শরতের পরে এবং বসন্তের আগে আসে।যখন উত্তর গোলার্ধে শীতকাল, তখন দক্ষিণ গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল, এবং তদ্বিপরীত। অনেক অঞ্চলে, শীতকালে তুষারপাত হয় এবং হিমাঙ্কের নিচে তাপমাত্রা থাকে। শীতকালীন উত্তর বা দক্ষিণ মেরুতে তখন অয়নকালে সূর্য পৃথিবী থেকে তুলনামূলক দূরে অবস্থান করে । অর্থাৎ, মেরু থেকে পরিমাপ করা হিসাবে সূর্য দিগন্তের নীচে তার সবচেয়ে দূরে থাকে । যে দিনে এটি ঘটে তার সবচেয়ে ছোট দিন এবং দীর্ঘতম রাত থাকে, তখন রাতের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পায় এবং ঋতু অগ্রসর হওয়ার সাথে সাথে দিনের দৈর্ঘ্য হ্রাস পায়।)
শীতকালে পরিবেশের তাপমাত্রা অনেক ওঠানামা করে। এটি মানবদেহের স্বাভাবিক পিএইচ, তাপমাত্রা, হরমোন, এনজাইমের ক্রিয়াকলাপকে ব্যাহত করে এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে। প্রবীণরা শীতকালে তাদের কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কারণে বেশি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকে।
তখন তাদের প্রতি যে বিশেষ নজর দিতে হবে তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
সঠিক পোশাক নির্বাচন করুন
বয়স্কদের জন্য শীতের পোশাক হতে হবে আরামদায়ক। বয়স্ক ব্যক্তিরা শীতকালে তাদের শরীরের তাপমাত্রা কমে গেলে হাইপোথার্মিয়া অনুভব করতে পারে, যা অজ্ঞান হওয়া থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যে কোনো কিছুর কারণ হতে পারে। তাই শীতের পোশাক পরার ক্ষেত্রে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। একটি পাতলা কাপড়ের চেয়ে মোটা কাপড় পরলে ঠান্ডা কম হবে। রাতে ঘাড়ে ও কানে পাতলা কাপড় দিয়ে ঘুমান, ঠান্ডা লাগবে না।
ত্বকের যত্ন নিন
শীতকালে বয়স্কদের ত্বক রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে যায় কারণ শরীরের তৈলাক্ত গ্রন্থিগুলো কম তেল উৎপাদন করে। ত্বকের সুরক্ষায় ময়েশ্চারাইজার লোশন, ভ্যাসলিন, গ্লিসারিন, অলিভ অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে। যখনই আপনি পানি দিয়ে মুখ ধুবেন, মুখে ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
বেশি করে শাকসবজি খেতে দিন
বড়দের বেশি করে শীতের সবজি দিন। শীতকালে খাবার ও পানীয় পরিবর্তন করা প্রয়োজন। ঠান্ডা খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। লেবু দিয়ে নিয়মিত চা খাওয়া যেতে পারে। এটি শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করবে। এ ছাড়া ফল ও ফলের রস খেতে হবে। এতে শরীরের নিস্তেজ ভাব দূর হবে। ফলে এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি, যা শরীরে শক্তি জোগাতে সাহায্য করবে। এই সময়ে বাজারে প্রচুর সবজি পাওয়া যায়, সেগুলো ডায়েট চার্টে রাখুন।
হলুদ কুসুম গরম পানি পান করতে দিন
গরম খাবারের সাথে গরম পানি পান করুন। গরম পানিতে গোসল, ওযু ও অন্যান্য কাজ করতে দিন। রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হবে। এতে বাড়ির বয়স্ক ব্যক্তি আরাম পাবেন। এ সময় শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। তাই শীতকালে প্রচুর পানি পান করুন। এক্ষেত্রে গরম দুধ, ফলের রস, বিভিন্ন ধরনের স্যুপ খাওয়া যেতে পারে।
যথেষ্ট ঘুমাতে বলুন
বয়স্কদের প্রতিদিন আট ঘণ্টা ঘুম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে সর্দি-কাশি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। তাই তাদের পর্যাপ্ত ঘুমাতে বলুন। এ ছাড়া বয়স্কদের অ্যালকোহল, ধূমপান, অতিরিক্ত চা-কফি পান থেকে বিরত রাখুন।
প্রচুর পানি পান করতে বলুন
শীতকালে পানির চাহিদা কম থাকায় বয়স্ক ব্যক্তিরা কম পানি পান করেন। এটি প্রতিবন্ধী কিডনির কার্যকারিতা সহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতা সৃষ্টি করে। তাই শীতে বয়স্কদের প্রয়োজনীয় পানির সাথে কেমিক্যাল ছাড়াই বিভিন্ন দেশি ফলের জুস পান করতে বলুন।
বয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ যত্ন নিন
বয়স্ক ব্যক্তিরা প্রায়ই বিভিন্ন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগেন। ডিমেনশিয়া, আলঝেইমার ইত্যাদি তাই তাদের খুশি রাখার চেষ্টা করুন। ভালো মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখুন। শীতকালে প্রয়োজন ছাড়া বয়স্ক ব্যক্তিদের বাইরে যেতে দেবেন না। এটি শরীরের নির্দিষ্ট তাপমাত্রা কমাতে পারে এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
হালকা ব্যায়াম করতে বলুন
শীতকালে সিনিয়রদের সক্রিয় রাখুন। বয়স্ক ব্যক্তিকে শীতের দিনে শুয়ে থাকার পরিবর্তে ঘরের ভিতরে হালকা ব্যায়াম করতে বলুন। তাকে ঘরের চারপাশে হাঁটা সহ তার হাত ও পা নাড়াতে বলুন। এতে শরীরে তাপ তৈরি হবে, ঠান্ডা লাগবে কম। বৃদ্ধ বয়সে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়। রোগ সারাতে এ সময় হালকা ব্যায়াম করতে হবে। ঠাণ্ডার কারণে বাইরে না গেলে ঘরের ভেতর হাঁটুন, হাত-পা নাড়াচাড়া করুন। এতে শরীরে তাপ তৈরি হবে। ব্যায়াম করলে সর্দি, কাশি ও জ্বর কমে।
ঘরে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখুন
বয়স্ক ব্যক্তির ঘরে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করুন। যতটা সম্ভব ঘর গরম রাখুন। ঠান্ডা কম লাগবে, আরাম লাগবে।
ভিটামিন ডি এর অভাব দূর করে এমন ব্যবস্থা রাখুন
ভিটামিন ডি এর ৯০% উৎস সূর্যের আলো। যেহেতু বয়স্করা শীতে বাইরে কম সময় কাটান, তাই ভিটামিনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এতে বিভিন্ন রোগের বিস্তার বাড়ে। তাই ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি মেটাতে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ১০-২০ মিনিট রোদে লাগাতে হবে। বয়স্কদের হালকা রোদেও সামান্য ব্যায়াম করতে উৎসাহিত করতে হবে।
তাই এই শীতে বয়স্কদের যেকোনো রোগকে অবহেলা করা যাবে না, কারণ এর থেকে বড় রোগের জন্ম হতে পারে।তে পারে।