আলসেমি দূর করার সহজ উপায়
অলসতা বা আলসেমিঃ
(অলসতা বা আলসেমি মানে নিষ্ক্রিয়তা। যে ব্যক্তি নিষ্ক্রিয় বা কর্মবিমূখ বা যার ভিতর উদ্যমের অভাব তাকে অলস বলে। আলসেমি নিজের ও সমাজের অবক্ষয় নিয়ে আসে। অলসতা একটি জাতির উন্নতির জন্য হুমকি। অলসতা মানুষের শিরা-উপশিরাকে খেয়ে ফেলে যেমন মরিচা লোহাকে খায়)।
আজকাল আলসেমি মনে হয় একটু বেশিই পেয়েছে আমদেরকে ।অনেকেই আছেন যারা পরের দিনের জন্য সব কাজ ফেলে রাখেন । এটি অলসতার কারণে হয়। এভাবে চলতে চলতে দিনের পর দিন কাজের পাহাড় জমে। তাড়াহুড়ো করে কোনো কাজিই তখন ভালোভাবে করা হয় না।
আলসেমি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়, এখানে কিছু কার্যকরী উপায়-নিয়ে আলোচনা করছি।
প্রতিদিনের কাজগুলি ভাগ করুন
দিনের কোনো কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত রাখা মনকে উদ্বিগ্ন করে। এটি করার পরিবর্তে, আপনি কী করবেন তা আগেভাগে শেয়ার করুন। দিনে অনেক কাজ করতে হলে চাপ হয়। তাই কাজগুলোকে বিভিন্ন দিনে ভাগ করুন।
কাজের পরিকল্পনা
আপনি যদি জীবনে পরিকল্পনা না করেন এবং সেভাবে কাজ না করেন তবে তা বাস্তবায়ন কঠিন। ধরুন আপনার একটি কাজ আছে, দিনের শুরুতেই তা শেষ করার চেষ্টা করুন। রেখে দিলে অলসতা তৈরি হবে।
মোবাইল ফোনের অভ্যাস পরিহার করুন
অনেকেরই সকালে চোখ খোলেই মোবাইল দেখার অভ্যাস আছে। এটা করবেন না। সময়ের সাথে সাথে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন ধরণের খবর আপনার মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যা আপনাকে কাজ করতে অনিচ্ছুক করে তুলতে পারে।
কর্মক্ষেত্রে স্মার্টনেস আনুন
কর্মক্ষেত্রে স্মার্টনেস আপনাকে আলঝেইমার বা আলসেমি থেকেও রক্ষা করবে। বেশি কাজ না করে কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে অল্প সময়ে আপনার কাজ করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে সময় ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সময় এবং কাজ বিচার করে, প্রথমে কী করা যেতে পারে, আমি কী করতে পারি এবং “আমি শেষ করব” এই মানসিকতা নিয়ে কাজ করলে কাজটি অনেক দ্রুত হয়ে যায়। ফলস্বরূপ, আল্জ্হেইমার আপনাকে ধরে নেওয়ার আগে আপনি কাজ থেকে সময় নিতে পারেন।
কাজের ব্যাপারে ইতিবাচক থাকুন
হারানোর ভয়, কাজ শেষ না হওয়ার ভয় কাজ থেকে দূরে রাখে, একঘেয়েমি বাড়ায় এবং অলস করে তোলে। কখনও কখনও কাজের গুরুত্ব অনুধাবন করতে ব্যর্থতা থেকেও অলসতা দেখা দেয়। ব্যর্থতার ভয় দূর করুন এবং ইতিবাচক দিকে মনোযোগ দিন।
ক্লান্তিকর কাজ আনন্দদায়ক করে নিন
সাধারণত বিরক্তিকর বা ক্লান্তিকর বলে বিবেচিত কাজগুলি এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকে। কাজ করার সময় বা কিছু শারীরিক কার্যকলাপ করার সময় সঙ্গীত বা পডকাস্ট শোনার চেষ্টা করা কাজকে কম বিরক্তিকর মনে হবে।
কাজের মধ্যে আনন্দ খুঁজে নিন
একটানা দীর্ঘ সময় কাজ করলে একঘেয়েমি চলে আসে। কাজ করতে মন চায় না। তাই কাজে নতুনত্ব আনুন। এই ক্ষেত্রে, আপনি মাঝে মাঝে ডেস্ক পরিবর্তন করতে পারেন। মাঝে মাঝে প্রিয় গান শুনতে পারেন। এতে কাজের প্রতি মনোযোগ বাড়বে।
দিনের শুরুটা হোক প্রাণবন্ত
একটি ভালো দিন কাটাতে, দিনটি প্রাণবন্তভাবে শুরু করা উচিত। দিনের শুরুটা কিভাবে রঙিন ও সুন্দর করা যায় তা নিয়ে ভাবতে পারেন। কেউ সকালে ব্যায়াম করেন, কেউ দিন শুরু করেন গান শুনে। কেউ আবার যোগব্যায়াম করলে দিনের শুরুটা ভালো হয়।
পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নিন
ঘুমানোর ঠিক আগে ডিজিটাল স্ক্রিন এড়িয়ে চলা, দিনের বেলা ঘুমের সময় সীমিত করা, ধর্মীয় মৃদু গান বা ঘুমের গান শোনা – এমন অনেক কিছু আছে যা করলে আপনি ভালো রাতে ঘুমাতে পারেন। এটি আলসেমিয়াকে কেটে দেয় এবং শরীর ও মনকে সতেজ করে ।
নিয়মিত ব্যায়াম
ব্যায়াম অলসতা থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি নিশ্চিত উপায়। মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যায়াম শক্তির মাত্রা বাড়াতে পারে, মেজাজ উন্নত করতে পারে এবং উদ্বেগ ও চাপ কমাতে পারে। আপনি দিনের বেলায় কিছু সময় হাঁটা বা সাইকেল চালাতে পারেন।
মানসিক চাপমুক্ত থাকুন
আপনি যদি মানসিক চাপে থাকেন তবে আপনি ক্লান্ত বোধ করেন। কাজ করার জন্য শক্তি এবং প্রেরণা ফিরিয়ে আনতে মানসিক চাপ মোকাবেলার কৌশলগুলি খুঁজে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। প্রিয়জন বা পোষা প্রাণীর সাথে সময় কাটানো, গাছপালা বা বিশেষ কিছু যা আপনার চাপ কমাতে সাহায্য করবে।
সাথে পানি রাখুন
পানির অনেক উপকারের মধ্যে একটি হল এটি অলসতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। আপনি যদি অলস বোধ করেন তবে কয়েক চুমুক পানিও সাহায্য করতে পারে আপনাকে।
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খান
কিছু খাবার শরীরের শক্তি বাড়ায়। এটি অলসতা এবং আলঝেইমার রোগের ঝুঁকি কমায়। উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার যেমন দই, কাজু, ডিম ইত্যাদি এক্ষেত্রে ভালো কাজ করে।
চিনিযুক্ত এবং চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন
যেসব খাবার হজম হতে বেশি সময় নেয় বা রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ায় সেগুলো এড়িয়ে চলুন। এর মধ্যে রয়েছে উচ্চ চিনিযুক্ত খাবার এবং পানীয়, পরিশোধিত চিনি যেমন ভাত, সাদা রুটি এবং পাস্তা, ফাস্ট ফুড ইত্যাদি।
কাজের গুরুত্ব, সময়ের গুরুত্ব—সবকিছু নিয়ে ভাবতে হবে। এটি আপনাকে একজন প্রাপ্তবয়স্ক হিসাবে কাজ করার দিকে মনোনিবেশ করতে সহায়তা করবে।কাটিয়ে দিতে পারে আপনার আলসেমি । কিন্তু এই অভ্যাস কাটিয়ে উঠতে হলে ধৈর্য ধরতে হবে।