শীতে ত্বক সুস্থ রাখার সহজ উপায়
শুষ্ক ত্বকের জন্য শীতের শুরুতে এবং পুরো শীত জুড়ে অনেক যত্নের প্রয়োজন, কারণ শুষ্ক আবহাওয়া ত্বকের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। ত্বক ভেঙ্গে যায়, বর্ণহীন এবং অসুস্থ হয়ে পড়ে। শীতে বাতাসের আর্দ্রতাও কমছে, আর এই সময়ে ত্বকের যত্নে পরিবর্তন আনতে হবে। ত্বক প্রধানত তিন প্রকার- শুষ্ক, স্বাভাবিক এবং তৈলাক্ত। আর তিন ধরনের ত্বকের যত্নই সাবধানে হওয়া উচিত।
শুষ্ক ত্বকের যত্ন:
সব ধরণের ত্বকের জন্য শীতের শুরুতে এবং পুরো শীত জুড়ে অনেক যত্নের প্রয়োজন, কারণ শুষ্ক আবহাওয়া ত্বকের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
শীতে ত্বক ফ্যাকাশে, শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যায়। শীতে ত্বককে সুস্থ ও সতেজ রাখতে খাবারে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হবে। জেনে নিন শীতে সুস্থ ত্বকের জন্য কী খাবেন:
বেশি বেশি পানি পান
পানি প্রতিদিনের খাবারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। পানি আমাদের শরীর এবং ত্বকের হাইড্রেশনের প্রধান উৎস। পর্যাপ্ত পানি পান করলে ত্বক নরম, মসৃণ ও কোমল থাকে। পানির অভাবে ত্বকের সমস্যা যেমন শুষ্কতা, বলিরেখা এবং দাগ দেখা দিতে পারে। এমনকি কম পানি পান করলে শরীর ও ত্বক পানিশূন্য হতে পারে। এর ফলে ক্লান্তি দেখা দেয়, যা অনেককে বয়স্ক দেখাতে পারে। শীতে যেমন ঘাম হয় না, পিপাসা তেমন লাগে না, তাই অনেকেই পানি খাওয়া কমিয়ে দেন। কিন্তু শীতকালেও পর্যাপ্ত পানি পান করুন, এটি আপনার ত্বককে সতেজ রাখবে।
সাইট্রাস বা টক ফল
শীতকাল টাটকা রসালো এবং সতেজ সাইট্রাস বা টক ফল (যেমন কমলা, মাল্টা
কমলা,জলপাই ) দ্বারা পরিপূর্ণ। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল শীতের সুপারফুড হতে পারে। তাদের কিছু সাধারণ সুবিধা হল যে এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং এর ফাইবার হজমশক্তি উন্নত করে। এবং ত্বককে রাখে সুস্থ ও সতেজ।
মিষ্টি আলু
শীত মৌসুমে বাজারে মিষ্টি আলু পাওয়া যায়। গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় মিষ্টি আলু একটি ফাইবার সমৃদ্ধ মজাদার খাবার । এতে থাকা উচ্চমাত্রার বিটা-ক্যারোটিন শুধু ত্বকে পুষ্টি জোগায় না, ত্বককে ভেতর থেকে উজ্জ্বলও করে। মিষ্টি আলু রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এ ছাড়া শরীরকে কিছু রোগ থেকে বাঁচাতে মিষ্টি আলু অপরিহার্য।
ওমেগা -৩ ,ফ্যাটি অ্যাসিড
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড আখরোট, চিয়া বীজ,সয়াবিন , কড লিভার তেল ,স্যামন মাছ, ম্যাকেরেল মাছে পাওয়া যায়, যা ত্বককে পুষ্ট রাখতে সাহায্য করে। এর পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ত্বককে প্রাকৃতিক তেল তৈরি করতে সাহায্য করে, যা ত্বককে হাইড্রেটেড রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
গাজর
গাজরে প্রচুর পরিমাণে বিটা-ক্যারোটিন এবং লাইকোপিন থাকে, যা ত্বককে ইউভি ড্যামেজ থেকে রক্ষা করে। শীতকালে সূর্যালোক তেমন তীব্র না হলেও পরিবেশে UV রশ্মির বিভিন্ন উৎস রয়েছে। গাজরে থাকা ভিটামিন এ, পটাসিয়াম এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শুষ্ক ত্বক এবং অসম ত্বকের স্বর (অমসৃণ ত্বকের স্বর) থেকে মুক্তি দেয়।
প্রকৃতিতে আবহাওয়ার পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের খাদ্যাভ্যাসেরও কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন। শীতকালে শুষ্ক ত্বক এবং চুল পড়াও উদ্বেগের কারণ। তাই এই সময়ে এসব সমস্যা মোকাবেলায় পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
অন্যদিকে খাবারের পাশাপাশি বাহ্যিকভাবে শরীরের কতিপয় যত্নের দিকে খেয়াল রাখতে হবে কারণ শীত অনেকভাবেই আমাদেরকে দৈহিক পরিবর্তনের দিকে নিয়ে ।
ত্বক ময়শ্চারাইজ করার জন্য লোশন বা তেল
শীতের শুরুতে ত্বক শুষ্ক ও ফেটে যায়, ঠোঁট ফাটা, হাত-পা ফাটা হতে পারে, ফলে চুলকানি হতে পারে। তাই ত্বক শুষ্ক হলে পেট্রোলিয়াম জেলি, অলিভ অয়েল, বডি লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে সবচেয়ে উপকারী অরগানিক বা প্রাকৃতিক অলিভ অয়েল, যাতে কোনো রাসায়নিক উপাদান থাকে না। গোসলের পর অলিভ অয়েল ব্যবহার করা ভালো। কিন্তু সব সময় সরিষার তেল ব্যবহার করা যাবে না। কখনো কখনো ইচ্ছা করলে খাঁটি নারকেল তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। শীতকালে কম পানি ব্যবহার করা হলে খোসপাঁচড়া বা খোস-পাঁচড়া, যা অত্যন্ত ছোঁয়াচে, এর প্রকোপ বেড়ে যায়। দীর্ঘদিন চুলকানি থাকলে ত্বকে নানা ধরনের প্রদাহ হয় এবং ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। তাই এ ধরনের চুলকানির ক্ষেত্রে দেরি না করে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে চিকিৎসা করাতে হবে, যাতে কোনো জটিলতা না হয়।
ঠোঁটের আর্দ্রতা
যেকোনো ধরনের লিপ জেল বা পেট্রোলিয়াম জেলি ঠোঁটে লাগাতে পারেন। গোড়ালি ফেটে গেলে নিয়মিত পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার এবং তখন সুতি মোজা পরা উচিত।
সুতির কাপড় পরিধান করা
যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে তারা ভিতরে সুতি কাপড় এবং তাদের উপরে উলের কাপড় পরতে পারেন।
ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ সানস্ক্রিন
শীতকালে আপনাকে প্রতিদিন কিছু সময় রোদে কাটাতে হবে। এতে শরীর পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি পাবে। ভিটামিন ডি ত্বককে সুন্দর ও মসৃণ করে এবং বার্ধক্য রোধ করে।
কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধোয়া
কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধোয়ার অভ্যাস করুন। শীতকালে বেশি গরম পানিতে গোসল করা খুবই আরামদায়ক। কিন্তু এতে ত্বকের ব্যাপক ক্ষতি হয়। তবে ঠাণ্ডা পানিতে গোসল না করে কুসুম গরম পানিতে গোসল করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে ত্বকের প্রাকৃতিক তৈলাক্ততা নষ্ট হবে না।
রাতে ত্বকের যত্ন নিন
ঘুমাতে যাওয়ার আগে মুখ ধুতে ভুলবেন না। তারপর কিছু ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে ঘুমাতে যান। এই সময়ে ত্বক প্রায় সাত থেকে আট ঘণ্টা বিশ্রাম নেয়।
যা পরিহার করবেন:
- শুষ্ক ত্বক পরিষ্কার করতে এ সময় ক্ষারযুক্ত সাবান।
- অতিরিক্ত চিনিযুক্ত বা মিষ্টি খাবার।
- অতিরিক্ত লবণ ।
- দুগ্ধজাত দ্রব্যের আধিক।
- গ্লুটেন সমৃদ্ধ খাবারের আধিক্য (যেমন পাউরুটি)।
- অ্যালকোহল, মদ্যপান বা ধূমপান ।
- অতিরিক্ত পরিমাণ চা-কফি পান।
2 Comments