ঘুম: কেন কখন কতক্ষণ?
ঘুম
ঘুম হল মানুষের এবং অন্যান্য প্রাণীদের দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপের মধ্যে বিশ্রামের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, তখন সচেতন কার্যকলাপ স্থবির হয়ে পড়ে। একটি ঘুমন্ত অবস্থা একটি নিষ্ক্রিয় জাগ্রত অবস্থা থেকে আলাদা যেখানে উত্তেজক প্রতিক্রিয়া করার ক্ষমতা হ্রাস পায়
ঘুম একটি আরামদায়ক জীবনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় । দেরিতে বা ভোরে ঘুমোতে যাওয়া এবং সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টার মধ্যে ঘুম থেকে ওঠা আধুনিক তরুণদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। অনেকের কাছে কম ঘুমানো একটি ফ্যাশন। অনেকেই চার থেকে ছয় ঘণ্টা ঘুমান। অনেকে অ্যালার্ম সেট করে যাতে তারা এটি বন্ধ করে আবার ঘুমাতে পারে।
ঘুম কেন?
ঘুম আমাদের মেটাবলিজম সিস্টেম এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ করে। জীবনে প্রশান্তি এনে দেয়। ইমিউন সিস্টেম সক্রিয় করে। হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। দীর্ঘ এবং স্বল্পমেয়াদী স্মৃতি সংগঠিত করে। শারীরিক, মানসিক ও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ঠিক রাখতে জীবনের মোট এক-তৃতীয়াংশের ঘুমের কোনো বিকল্প নেই। আট ঘণ্টা ঘুম মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ঠিক রাখে। আমরা যখন ঘুমিয়ে পড়ি তখন কিছু কাজ শুরু হয় যা জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শরীর ও মনের সঠিক কার্যকারিতার জন্য ‘গুণ সম্পন্ন জীবনের’ জন্য দৈনিক আট ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন।
কতক্ষণ ঘুমাতে হবে?
সাধারনত বলতে গেলে আট ঘন্টা। তবে বয়স ভেদে কমবেশি হতে পারে। ইউএস ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশনের পরামর্শ অনুযায়ী,
- ৬ থেকে ৯ বছর বয়সী শিশুদের রাতে কমপক্ষে ৯-১১ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন। কিন্তু নিয়মিত ৭-৮ ঘন্টা সঠিকভাবে ঘুমাতে পারলেও তারা নিজেদের কর্ম চালিয়ে যেতে পারে।
- ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের ৮-১০ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন। কিন্তু এই বয়সীদের কিছু মানুষ নিয়মিত মাত্র ৭ ঘণ্টা ঘুমাতে পারেন।
- ৪০ বছরের বেশি মানুষ এখনও ছয় ঘন্টা ঘুমিয়ে কাজ করতে পারে। কিন্তু কম ঘুম উদ্বেগজনক এবং ক্ষতিকর।
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে কি হবে?
ঘুমের অভাবে হার্ট অ্যাটাক, হৃদরোগ, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিসের মতো সমস্যা হতে পারে। কম ঘুম হলে কার্টিসল নামক হরমোন নিঃসৃত হয়। এটি ত্বকের কোলাজেন ভেঙ্গে ফেলে। যাঁরা দিনে ছয় ঘণ্টার কম ঘুমান, তাঁদের ওজন বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা অন্যদের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি থাকে। । ঘুমের অভাব হতাশার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। স্মৃতিশক্তি হ্রাস, জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ হারানো, ভুলে যাওয়া, অনিদ্রা, হ্যালুসিনেশনসহ বিভিন্ন ধরনের জটিলতা হতে পারে।
ঘুমাতে হবে রাতে
অনেকেই ভোর চারটা থেকে ছয়টার মধ্যে ঘুমাতে যান। উঠেন দিনের ১২টা থেকে ২টার মধ্যে। । এতে তার ভালো ঘুম হয়। কিন্তু সেই ঘুম মোটেও রাতের ঘুমের সমান নয়। যদিও সে তার নিয়ম অনুযায়ী ঘুমায়। কিন্তু তার সমস্ত শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপ প্রকৃতির নিয়ম মেনে চলে। সকালের নাস্তা সে ঠিকমতো খায় না। তার সারাদিনের কাজের ব্যবস্থা ব্যাহত হয়। সূর্যালোকের মাধ্যমে ভিটামিন ডি থেকে বঞ্চিত হয় । শুধু তাই নয়, ভিটামিন এ, ই থেকেও বঞ্চিত হয় । দিনের বেলা ঘুমালে এবং রাতে জেগে থাকলে মুখের টোনিং নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ডার্ক সার্কেল পড়তে পারে। বিষণ্ণতায় ভুগতে পারেন। ওজন বৃদ্ধি ঘটতে পারে। তা ছাড়া রাতে ঘুমের মতো পরিবেশ দিনে পাওয়াও যায় না অনেক ক্ষেত্রে। তাই দিনের ঘুম রাতের ঘুমের মতো গভীর নয়। ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা, রাতে দিনের মতো হাঁটাচলা হয় না। এসব কারণে রাতের ঘুমই সেরা। দিনে ঘুমানো মন্দের ভালো আর কি।
ঘুমের উন্নতি করতে হবে কিভাবে?
আপনি যদি পর্যাপ্ত ঘুমাতে না পারেন এবং এটি থেকে মুক্তি পেতে চান তবে নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলি সমস্যা সমাধানে সহায়তা করবে:
১. দিনের বেলায় সূর্যের আলো সহজেই বেডরুমে পৌঁছাতে দিন; কিন্তু রাতে বেডরুমে অন্ধকার করে ঘুমাতে যান ।
২. প্রতি রাতেই একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া উচিত। এ ছাড়া দেরি করে ঘুমাতে যাওয়া ভালো নয়।
৩. সুস্থ থাকার জন্য নিজের প্রতি আপসহীনভাবে যত্নশীল হোন। এ ছাড়া ঘুমের সময় কোনো অবস্থাতেই আপস করা যাবে না।
৪. দিনের কাজ দিনের মধ্যে শেষ করার চেষ্টা করুন।
৫. ঘুমানোর সময় অব্যশিই মোবাইল এবং ল্যাপটপ দূরে রাখুন।
৬. স্বাস্থ্যকর খাবার এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা রাতে ভাল ঘুমাতে সাহায্য করতে পারে
৭. দিনের বেলা সর্বদা ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। শারীরিক ব্যায়াম শরীর ও মনের চাপ কমিয়ে দেবে, যা আপনাকে রাতে ঘুমাতে সাহায্য করবে
তাই সময়মতো পর্যাপ্ত ঘুম সুখ সমৃদ্ধ জীবনের জন্য প্রয়োজন এবং অত্যন্ত প্রয়োজন।
1 Comment