November 21, 2024
মিয়ানমারে তিন শতাধিক সামরিক ঘাঁটি বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে

মিয়ানমারে তিন শতাধিক সামরিক ঘাঁটি বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে

মিয়ানমারে তিন শতাধিক সামরিক ঘাঁটি বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে

মিয়ানমারে তিন শতাধিক সামরিক ঘাঁটি বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে

অবৈধভাবে বহুদিন দখলে থাকা মায়ানমারের সেনাবাহিনী অর্থাৎ সামরিক জান্তা সামনে আবারো একটি জোরপূর্বক নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে । সেটাকে কেন্দ্র করে  কতিপয় স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী সরকারের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করে যুদ্ধ নেমেছে এবং অবৈধ সরকারের ৩০০ টি খাঁটি দখলে নিয়েছে দেশপ্রেমী বিদ্রোহীরা।

সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠনগুলো এ পর্যন্ত মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী প্রতিরোধের ওপর হামলা চালিয়ে অন্তত তিনশত সামরিক ঘাঁটি ও ২০টি শহর দখল করেছে। এদিকে দ্বন্দ্ব সত্ত্বেও জান্তা সরকার বলেছে, দেশে শিগগিরই সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

পালটা আক্রমণ, অপারেশন ১০২৭ নামক, যৌথভাবে বিদ্রোহী সামরিক জোট থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স এবং তথাকথিত পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস জাতীয় ঐক্য সরকার (এনইউজি) দ্বারা সমর্থিত হয়েছিল। ২৭ অক্টোবর উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্য থেকে তাদের  যুদ্ধ শুরু হয়।

এখন এই লড়াই মিয়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থায়ও জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং বলেছেন, মিয়ানমারে শিগগিরই সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দেশের প্রতিটি আসনেই ভোট হবে। মিয়ানমারে চলমান সংঘাত সপ্তম সপ্তাহে প্রবেশ করেছে।

ইতিমধ্যে, থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স, আরাকান আর্মি (AA), মায়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (MNDAA) এবং তাইং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (TNLA) নিয়ে গঠিত একটি বিদ্রোহী সামরিক জোট শান রাজ্যে ৩০০ টিরও বেশি ঘাঁটি দখল করেছে। তা ছাড়া এই বিদ্রোহী জোট ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত শান রাজ্যের অন্তত আটটি শহর দখল করেছে। এখন এই রাজ্যের আরও একটি শহর দখলের প্রস্তুতি নিচ্ছে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স।

এদিকে, আরাকান আর্মি রাখাইন ও চিন রাজ্যে অন্তত ৪৫টি সামরিক ঘাঁটি ও চেকপয়েন্ট দখল করেছে।

সামরিক শাসনকে উৎখাত করার জন্য উত্তর শান রাজ্যে শুরু হওয়া আক্রমণটি সাগাইং, মান্দালে এবং ম্যাগওয়ে অঞ্চলের পাশাপাশি চিন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে। কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্ট আর্মি সমর্থিত পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফ) সাগাইং অঞ্চলের অন্তত তিনটি শহর দখল করেছে। অন্যদিকে চীনের রাষ্ট্রীয় প্রতিরোধ বাহিনী ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত অন্তত সাতটি শহর দখল করেছে।

ইতিমধ্যে,কারেনি রাজ্যে ১১  নভেম্বর থেকে  অপারেশন ১১১১  , আরেকটি জান্তা বিরোধী অভিযান, কারেনি ন্যাশনালিটিজ ডিফেন্স ফোর্স (কেএনডিএফ), কারেনি আর্মি, কারেনি ন্যাশনাল পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট এবং পিডিএফ দ্বারা শুরু হয়েছিল। কেএনডিএফ বলেছে যে প্রতিরোধ বাহিনী অপারেশন ১১১১ শুরু হওয়ার পর লোইকাও, কারেনি রাজ্যের ডেমেসো শহরতলি এবং দক্ষিণ শান রাজ্যের পার্শ্ববর্তী পেকন শহরতলিতে ৩৫ টিরও বেশি জান্তা ঘাঁটি দখল করেছে।

ইতিমধ্যে কারেন, মোন রাজ্য এবং বাগো অঞ্চলেও জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে হামলা শুরু হয়েছে। ৩ ডিসেম্বর, ক্যারেন ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি এবং মিত্র প্রতিরোধ বাহিনী মোনে শহর দখল করে। জাতিসংঘের মানবিক কার্যালয় অনুসারে অক্টোবরে শুরু হওয়া সংঘাত মিয়ানমারের এক-তৃতীয়াংশে ছড়িয়ে পড়েছে। চলমান সংঘর্ষে এ পর্যন্ত বাস্তুচ্যুত হয়েছে পাঁচ লাখ মানুষ।

জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয়ের কার্যালয় (ওসিএইচএ) এর সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, ২৬ অক্টোবর থেকে মিয়ানমারে ৫৭৮,০০০ এরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এর আগে ২০২১ সালে, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর মিয়ানমারের ২ কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। । এদিকে, গত ছয় সপ্তাহে এই সংঘর্ষে নারী ও শিশুসহ ৩৬৩ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৪৬১ জন আহত হয়েছেন।

OCHA এর মতে, সংঘাত-আক্রান্ত এলাকায় খাদ্য, আশ্রয়, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন। বিভিন্ন ধর্মীয় সংস্থা এবং স্থানীয় সাহায্য সংস্থাগুলি ক্ষতিগ্রস্ত এবং বাস্তুচ্যুত লোকদের কাছে তারা পৌঁছতে পারে এমন এলাকায় জরুরি এবং জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম সরবরাহ করছে।

মিয়ানমারের একটি জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী বলেছে যে তারা মঙ্গলবার থাইল্যান্ড সীমান্তের কাছে একটি সামরিক ঘাঁটি দখল করেছে। দেশটির জান্তা প্রধান সহিংসতা অবিলম্বে বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার কয়েকদিন পর সংঘর্ষের খবর আসে।

পূর্ব থাই সীমান্তে একটি সামরিক ঘাঁটিতে মঙ্গলবার ভোরে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী কারেন সেনাবাহিনীর মধ্যে লড়াই শুরু হয়। এলাকাটি মূলত কারেনদের নিয়ন্ত্রণে। ফলে সেই লড়াইয়ে সেনাবাহিনী সশস্ত্র বিদ্রোহীদের কাছে হেরে যায়।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গত ফেব্রুয়ারির প্রথম দিনে একটি অভ্যুত্থানে নির্বাচিত সরকার প্রধান এবং অন্যদের আটক করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে। এরপর থেকে বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনী নৃশংস অভিযান চালাচ্ছে।

মিয়ানমারের কিছু জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী, যারা বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের জন্য কয়েক দশক ধরে সেনাবাহিনীর সাথে লড়াই করে আসছে, তারা অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভকারীদের সমর্থন করেছে। এসব দল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অংশগ্রহণের ঘোষণাও দিয়েছে।

কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন (কেএনইউ), একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী যা মিয়ানমারের পূর্ব সীমান্তের কাছে মঙ্গলবার ভোর থেকে সেনাবাহিনীর সাথে লড়াই করছে, বলেছে যে তারা একটি সেনা ঘাঁটি দখল করেছে তা পুড়িয়ে দিয়েছে।

গ্রুপের বৈদেশিক সম্পর্ক প্রধান, পাদো সাও তাও নি  বলেছেন, KNU বাহিনী ভোরে ঘাঁটিটি দখল করেছে। হতাহতের বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। বেশ কয়েকটি স্থানে দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ  চলছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি।

ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে যে পাহাড় যেখানে সংঘর্ষ হয়েছে  সেখান  থেকে আগুনের লেলিহান শিখা এবং ধোঁয়া উড়ছে । সেনাঘাঁটি ধ্বংস হয়ে গেছে। সৈন্যদের পালিয়ে যেতে দেখেন  গ্রামবাসীরা।

স্থানীয় লোকজন  জানিয়েছে, সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর অনেক গ্রামবাসী তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে। সেনাবাহিনী পালটা জবাব দিতে ব্যাপক হামলা ও অভিযান চালাবে; এমন ভয়ে তারা মূলত বাড়ি ছেড়েছে।

আরও পড়ুন

মিয়ানমার বিভক্ত হয়ে টুকরা টুকরা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন প্রেসিডেন্ট সুই

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X