November 21, 2024
ইঁদুর দখল করে ফেলছে অস্ট্রেলিয়াকে

ইঁদুর দখল করে ফেলছে অস্ট্রেলিয়াকে

ইঁদুর দখল করে ফেলছে অস্ট্রেলিয়াকে

ইঁদুর দখল করে ফেলছে অস্ট্রেলিয়াকে

ইঁদুর:

  • ইঁদুর (rodent,rat) রোডেনসিয়া বর্গের ও মিউরিডি পরিবারের অন্তর্গত। তারা একটি চতুর এবং নীরব ধ্বংসাত্মক স্তন্যপায়ী প্রাণী। পৃথিবীতে ২৭০০ টিরও বেশি ইঁদুর প্রজাতি রয়েছে। এই প্রাণীদের সাধারণ বৈশিষ্ট্য হল তাদের দাঁতের বিশেষ গঠন এবং বিন্যাস।
  • তাদের ১৬ টি দাঁত আছে। উভয় পাটিতে সামনের দিকে এক জোড়া ছেদযুক্ত দাঁত রয়েছে, যেগুলো খুব তীক্ষ্ণ এবং বাটালির মতো সূক্ষ্ম।
  •  ছেদন দাঁত গজানোরপর  থেকে মৃত্যু পর্যন্ত দাঁত  বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে।  কামড় না দিলে চোয়াল থেকে দাঁত উঠে যাবে এবং ইঁদুরের খাওয়া বন্ধ করে থাকতে হবে।  তাই ইঁদুর সবসময় কামড়াতেই থাকে এটা তাদের সৃষ্টি প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত।এবং মজার ব্যাপার হচ্ছে দাঁত ঠিক রাখার জন্য ইঁদুর সব সময় শক্ত জিনিস কুড়ে কুড়ে খায়।
  • ইঁদুরেরা সব ধরনের পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে এবং কুমেরু ব্যতীত সারা বিশ্বের ল্যান্ডমাস জুড়ে বিস্তৃত। তারা সব ধরনের খাবারের সাথে খাপ খাইয়ে নেয় এবং অত্যধিক প্রজনন ক্ষমতাসম্পন্ন। ইঁদুর জন্মের দুই মাসের মধ্যেই প্রজননক্ষম হয়ে ওঠে,  তিন সপ্তাহের গর্ভধারণের পর একবারেই  আটটি ইঁদুরের এবং তিন থেকে চার সপ্তাহ পর আবারও বাচ্চা দেয়। একজোড়া ইঁদুর সাধারণত ১২ মাসে ১২৫০ টি নতুন ইঁদুরের জন্ম দেয়।
  • বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে জলবায়ু উষ্ণ হওয়ার সাথে সাথে ইঁদুরের প্রজনন চক্র আরও দীর্ঘতর হবে।
  • তার মানে আরও বেশি ইঁদুর আরও বাচ্চার জন্ম দেবে। সমস্ত প্রজাতির মধ্যে, বাদামী ইঁদুর বিশেষভাবে বিপজ্জনক। একটি স্ত্রী বাদামী ইঁদুর জন্মের পাঁচ থেকে ছয় সপ্তাহ পরে প্রজনন ক্ষমতাসম্পন্ন হয়ে যায়।
  • তারা সাধারণত দুই বছরের বেশি বাঁচে না। বিশ্বের সমস্ত স্তন্যপায়ী প্রজাতির ৪২ শতাংশ ইঁদুর। একটি প্রাপ্তবয়স্ক ইঁদুরের দৈর্ঘ্য চার থেকে আট ইঞ্চি। তারা খুব দ্রুত নড়াচড়া করে, মাটিতে গর্ত খনন করে এবং প্রজনন করার জন্য বাড়ির বিভিন্ন আসবাবপত্রে লুকিয়ে রাখে। ইঁদুর ফসল, ঘরের আসবাবপত্র, কাপড় ইত্যাদি নষ্ট করতে অনেক স্বাচ্ছন্দ বোধ করে।

এবার আসি মূল বিষয়ে, এমন একটি দেশ আছে যেখানে ইঁদুরের আক্রমণে মানুষকে ভয়ঙ্কর দিন কাটাতে হচ্ছে। কোটি কোটি ইঁদুর গ্রাস করছে গোটা দেশ। এখানে ইঁদুরের সংখ্যা এতটাই বেড়েছে যে সর্বত্র মহামারী ছড়িয়ে পড়ছে।

প্রকৃতিকে আরো সুন্দর করার প্রয়াসে মানুষ দিন দিন এই সুন্দর পৃথিবীকে ধ্বংস করছে। এতে শুধু প্রকৃতিরই ক্ষতি হচ্ছে না, একের পর এক বিপদও আসছে মানুষের ওপর। বর্তমানে পৃথিবীতে অনেক সমস্যা রয়েছে। সেটা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ হোক বা আধিপত্যের জন্য ইসরাইল-গাজা যুদ্ধ। কিন্তু এগুলো ছাড়াও এমন একটি দেশ আছে যেখানে ইঁদুরের আক্রমণে মানুষকে ভয়ঙ্কর দিন কাটাতে হয়। কোটি কোটি ইঁদুর গ্রাস করছে গোটা দেশ। এখানে ইঁদুরের সংখ্যা এতটাই বেড়েছে যে সর্বত্র মহামারী ছড়িয়ে পড়ছে। পানিতেও ভাসছে ইঁদুরের মৃতদেহ।

যে দেশটিতে ইঁদুরের জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেটি হল অস্ট্রেলিয়া। এমনকি ইঁদুরের সংখ্যা এতটাই বেড়ে গেছে যে, ইঁদুরের মৃতদেহ পানিতে ভাসতে দেখা যাচ্ছে। রাস্তাঘাট, কৃষিজমি, বাগান-সেখানে অসংখ্য ইঁদুরের কিচিরমিচির। কিন্তু এর কারণ কী? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে ইঁদুরের সংখ্যা এতটাই বেড়েছে যে পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। সরকার সময়মতো এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নিলে খুব শিগগিরই মানুষকে শহর ছেড়ে পালাতে হতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে ইঁদুরের সংখ্যা এতটাই বেড়েছে যে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। কিছুতেই সামলাতে পারছে না। সরকারের উচিত এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া। কুইন্সল্যান্ডে যেখানেই তাকানো হয় , ইঁদুরের স্তূপ আর স্তূপ  দেখতে পাবেন। বাড়ি হোক বা অফিস, সবখানেই ইঁদুরের মৃতদেহ দেখা যাচ্ছে। তবে জলাশয়ে সবচেয়ে বেশি ইঁদুর দেখা যায়। আর এর ফলে পানীয় জলের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। পানিতে ছড়িয়ে পড়ছে ভয়াবহ রোগ। যদিও সরকার ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছে। বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের মতে, ইঁদুর ফোবিয়া যত দ্রুত সম্ভব নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে তা মহামারী আকার ধারণ করতে পারে। ফলে সারা দেশ শুধু ইঁদুরেই গ্রাস করে ফেলবে।

গত হাজার বছরে সবগুলো যুদ্ধে যত মানুষ মারা গেছে তার চেয়ে বেশি মানুষ ইঁদুরের কারণে মারা গেছে। ১৪ শতকে ইউরোপের প্লেগে জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ মারা যাওয়ার জন্য ইঁদুর দায়ী ছিল।

গ্রিনউইচ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্তুবিদ্যার অধ্যাপক স্টিভ বেলমেইন বলেন, “ইঁদুরকে পুরোপুরি নির্মূল করা অসম্ভব। তাদের মারলে কাজ হবে না, কারণ যেগুলো বাকি আছে সেগুলো দ্রুত সেই শূন্যতা দখল করতে পারে”।

আরও পড়ুন

গিনেস রেকর্ডে ৯ বছর ২১২ দিন বয়সী মুরব্বি পিচ্চি ইঁদুর

নিউইয়র্কে ইঁদুর মারতে পারলে কোটি টাকার বেশি পুরস্কার

ইঁদুর মারার ফাঁদে মানুষের মৃত্যু

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X