শুক্রাণুর ঘনত্ব কমে যেতে পারে মাত্রাতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারে
মোবাইল ফোন হল ওয়্যারলেস বা তারবিহীন টেলিফোন। মোবাইল মানি পোর্টেবল। ফোন শব্দটি এসেছে গ্রীক phônç থেকে। এর অর্থ শব্দ, ধ্বনি, বাচন বা বক্তৃতা।
এই আশ্চর্যজনক প্রযুক্তির নামকরণ করা হয়েছে ‘মোবাইল’ কারণ মোবাইল সহজেই বহন করা যায় এবং যেকোনো জায়গায় নিয়ে ব্যবহার করা যায়। আর এর মাধ্যমে মানুষের কথ্য শব্দ আদান-প্রদান হয় বলে ‘ফোন’ শব্দের সঙ্গে ‘মোবাইল’ শব্দটিও ব্যবহৃত হয়।
মার্টিন কুপার এবং জন ফ্রান্সিস মিচেলকে প্রথম মোবাইল ফোন আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেওয়া হয়। মার্টিন কুপার একজন ইহুদি ছিলেন। অন্যদিকে জন ফ্রান্সিস মিচেল ছিলেন পারিবারিকভাবে একজন খ্রিস্টান।
মোবাইল ফোনের অনেক ইতিবাচক দিক রয়েছে এতে কোনো সন্দেহ নেই।মানুষের মধ্যে সহজ যোগাযোগ ও দূরত্ব কমিয়ে আনতে মোবাইল ফোনের জুড়ি নেই। লেনদেন, ব্যবসা থেকে শুরু করে বিশ্বকে জানা এবং বিশ্বের সাথে যোগাযোগ রাখার অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে মোবাইলের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছেই । কিন্তু তা সত্ত্বেও এই যন্ত্র মানুষের জীবনে নিয়ে আসছে বহুমাত্রিক ক্ষতি।
গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা প্রচুর মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন তাদের শুক্রাণুর ঘনত্ব অন্যদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম থাকে।
মোবাইল ফোন আধুনিক জীবনধারার একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। যোগাযোগ সহজ করার পাশাপাশি, প্রযুক্তির এই মহান বিস্ময় পুরো বিশ্বকে হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। তবে সুবিধার পাশাপাশি মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারের স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কেও বারবার সতর্ক করে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। এখন বিজ্ঞানীরা আরেকটি ভয়ঙ্কর হুমকি ঘোষণা করেছেন।
সাম্প্রতিক এক গবেষণার বিজ্ঞানীরা বলছেন, মোবাইল ফোন বেশি ব্যবহার করলে শুক্রাণুর ঘনত্ব কমে যায়। তবে এই ক্ষতির জন্য যে মোবাইল ফোনই ১০০ % দায়ী তার প্রমাণ তারা এখনও পায়নি।
তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, প্রায় ১৩ বছরের গবেষণার ভিত্তিতে সুইস বিজ্ঞানীদের উপস্থাপিত তথ্য বিবেচনায় নিলে স্বাস্থ্যঝুঁকি কমবে।
ফার্টিলিটি অ্যান্ড স্টেরিলিটি জার্নালে গত সপ্তাহে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে, বিজ্ঞানীরা ২০০৫থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ২,৮০০ জন যুবকের বীর্য পরীক্ষা করে দেখেছেন যে যারা মোবাইল ফোন বেশি ব্যবহার করেন তাদের শুক্রাণুর ঘনত্ব অন্যদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গবেষকরা এখনও প্রত্যেকের বীর্যে শুক্রাণুর গতিশীলতা এবং মোবাইল ফোনের ব্যবহার কতটা শুক্রাণুর ঘনত্ব কমাতে পারে তা জানতে পারছেন না। তবে এ ব্যাপারে আরও গবেষণা চলছে দ্রুতগতিতেই ।
দীর্ঘদিন ধরে, বিজ্ঞানীরা পুরুষদের শুক্রাণুর ঘনত্ব হ্রাসের সম্ভাব্য কারণ হিসাবে অতিরিক্ত ধূমপান, অতিরিক্ত খাওয়া, অতিরিক্ত মদ্যপান এবং মানসিক বিষণ্নতা সহ বেশ কয়েকটি কারণকে উল্লেখ করে আসছেন। তবে মোবাইল ফোন ব্যবহারের সঙ্গে এর সম্পর্ক থাকতে পারে বলে মনে করছেন সুইস বিজ্ঞানীরা।
১৩-বছরের অধ্যয়নের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হল যে শুক্রাণুর ঘনত্বের পতন শুরুর তুলনায় গবেষণার শেষে অনেক কম ছিল। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে এটি টু-জি প্রযুক্তি থেকে থ্রি-জি, ফোর-জি এবং ফাইভ-জি প্রযুক্তিতে রূপান্তরের কারণেও হতে পারে।
এছাড়াও মনোবিজ্ঞানীরা এবং গবেষকরা বলছেন যে যারা অন্তরঙ্গ ব্যক্তিগত অনুভূতি শেয়ার করেন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্ধুদের সাথে সহানুভূতি করেন তারা উভয়ই ফেসবুকে সহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় অত্যন্ত আসক্ত।আবার অনেকেই এই মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহারে আসক্তও হয়ে পড়ছে। ফেসবুক ধীরে ধীরে তরুণদের সোশ্যাল মিডিয়া বা ইন্টারনেট আসক্তির দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
একাধিক গবেষণায় হাফিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে ব্যবহারকারীরা শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভুগছেন।
মন সবসময় সজাগ থাকে যে মোবাইল সঠিক জায়গায় আছে। মোবাইল হারানোর ভয় থেকে মনের মধ্যে একটা সমস্যা তৈরি হয়। মোবাইল ফোনের সঙ্গে যোগাযোগ হারানোর ভয়ের এই রোগের নাম গবেষকরা ‘নোমোফোবিয়া’; এর পুরো নাম ‘নো মোবাইল-ফোন ফোবিয়া’।
মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার ঘুমেও প্রভাব ফেলে। সময় সময় মেসেজিং, চ্যাটিং ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি করে।
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, দুশ্চিন্তা, কাজের চাপ, ফোনে দিন কাটানোর কারণে স্লিপ টেক্সটিং হতে পারে। তাই রাতে বিছানার পাশে মোবাইল ফোন না রাখার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা।
যুক্তরাজ্যের চক্ষু বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে মোবাইল ফোনের অত্যধিক ব্যবহার দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতার কারণ হতে পারে। এটির কারণে মায়োপিয়া বা দুর্বল দৃষ্টিও হতে পারে।
হেডফোন ব্যবহার করে উচ্চস্বরে গান শোনা কক্লিয়ার কোষকে প্রভাবিত করে এবং মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক আচরণের কারণ হয়।
স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, ল্যাপটপ, ডেস্কটপের অত্যধিক ব্যবহার এবং অত্যধিক টেলিভিশন দেখা ঘুমের সমস্যা বা অনিদ্রার সবচেয়ে সাধারণ কারণ।
আমেরিকান গবেষকরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, টয়লেট সিটের চেয়ে ফোনে ১০ গুণ বেশি ব্যাকটেরিয়া থাকে। ফোন নিয়মিত পরিষ্কার না করলে এটি জীবাণুর প্রজননক্ষেত্রে পরিণত হয়।
দীর্ঘ সময়ের জন্য টেক্সট বা বার্তা টাইপ করার ফলে আঙুলের জয়েন্টগুলোতে ব্যথা হতে পারে এবং আরও বেশি ব্যবহারে বাতের মতো সমস্যা হতে পারে।
অনেকেই ঘাড়ের ব্যথায় ভুগছেন। কারণ, অনেকেই কর্মক্ষেত্রে মোবাইল ফোন ব্যবহার করার সময় কাঁধ ও কানের মাঝে ফোন রেখে কথা বলেন। অনেকে অতিরিক্ত বসে বসে দীর্ঘ সময় ধরে টেক্সট করেন। বসার ভঙ্গির কারণে শরীরে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এই ধরনের ক্ষেত্রগুলির তরঙ্গ স্বাভাবিক হৃদস্পন্দনের উপর কোন প্রভাব ফেলে না। যাইহোক, পেসমেকার বসানো হার্টে মোবাইল ডিভাইসগুলির তরঙ্গ দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। তাই এ ধরনের সমস্যায় মোবাইল ফোন থেকে দূরে থাকাই ভালো। গবেষকরা পেসমেকারযুক্ত ব্যক্তিদের থেকে সেল ফোনকে দূরে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।
আরও জানতে
বর্তমানে মোবাইলের যাচ্ছেতাই ব্যবহার দেখে মোবাইলের আবিষ্কর্তার আফসোস
2 Comments