November 21, 2024
২০২৩ পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল জয়ী একজন নিবেদিত-প্রাণ শিক্ষিকা প্রফেসর অ্যানী ও আমরা

২০২৩ পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল জয়ী একজন নিবেদিত-প্রাণ শিক্ষিকা প্রফেসর অ্যানী ও আমরা

২০২৩ পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল জয়ী একজন নিবেদিত-প্রাণ শিক্ষিকা প্রফেসর অ্যানী ও আমরা

২০২৩ পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল জয়ী একজন নিবেদিত-প্রাণ শিক্ষিকা প্রফেসর অ্যানী ও আমরা

অ্যান জেনেভিভ ল’হুইলিয়ার (জন্ম-১৬ আগস্ট ১৯৫৮) একজন ফরাসি-সুইডিশ পদার্থবিদ, এবং সুইডেনের লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞানের মহিলা অধ্যাপক।

অ্যানি ল’হুইলিয়ার এই বছর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী তিনজনের একজন। পেশায় তিনি সুইডেনের লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। নোবেল পুরস্কার জয়ের খবর দেয়ার জন্য তাকে যখন কল দেয়া হয় তখন তিনি ব্যস্ত ছিলেন ক্লাস লেকচারে। একাধিক । ক্লাস চলাকালে একাধিকবার কল করেও তিনি কল রিসিভ করেননি। ক্লাস বিরতির সময় আবার কল এলে তিনি উত্তর দেন। নোবেল কর্তৃপক্ষের অ্যাডাম স্মিথ নামে এক ব্যক্তি অপর প্রান্ত থেকে কথা বলার জন্য সময় চান। এ্যানি বলেন, আমি একটু ব্যস্ত আছি, শিক্ষার্থীদের পড়াতে।

নোবেল কমিটির মুখপাত্র অ্যাডাম স্মিথ অধ্যাপক অ্যান ল’হুইলারকে ফোন করেছিলেন কিন্তু তিনি ক্লাসে থাকার কারণে ফোনের উত্তর দেননি। বিরতির সময় ফোন রিসিভ করে ক্লাস নিয়ে কথা বলা এড়াতে চেয়েছিলেন। এটা একটা সাধারণ ব্যাপার। অনেকেই মনে করেন নোবেল কমিটির মুখপাত্রের ফোন উপেক্ষা করা যায়? এটি আমাদের জন্য একটি অদ্ভুত প্রশ্ন কিন্তু অধ্যাপক অ্যানিদেরর জন্য খুবই স্বাভাবিক।

ভৌগলিক পরিবেশ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রশ্নে, নোবেল কমিটির মুখপাত্র এমনকি জাতিসংঘ সদর দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে অধ্যাপক অ্যানের আলাপচারিতা তুচ্ছ। যার কারণে কমিটির মুখপাত্রের আহ্বান উপেক্ষা করাটাই স্বাভাবিক ছিল অধ্যাপক অ্যানির জন্য। যে যোগ্যতা দিয়ে বিশেষ কিছু অর্জন করে সে বড় কিছু পেয়েও আত্মহারা হয়ে যায় না। পরিবর্তে, তিনি দৃঢ় সংকল্প এবং আত্মবিশ্বাসে শক্তিশালী হয়ে ওঠেন। প্রফেসর অ্যান ল’হুলিয়ার এমনই একজন ।

হ্যাঁ আমরাও এমন অনেক শিক্ষককেও দেখেছি যারা ক্লাসে থাকাকালীন মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন বা মোবাইল ফোন বন্ধ করে ক্লাসে প্রবেশ করেন। আবার অনেককে দেখেছি  ক্লাসে ফোন রিসিভ করছেন  না। ক্লাসের কথা বলতে গিয়ে কয়েকজনকে ফোন কেটে দিতে দেখেছি। আমি খুব কম শিক্ষককে দেখেছি যারা ক্লাসে বসে একান্ত কথা বলে। যেখানে , যেদেশে  প্রশাসনের কর্মকর্তাদের তেল মাখতে ব্যস্ত কতিপয়  শিক্ষক সেখানে এমন শিক্ষকও আছেন যারা ক্লাস এবং কাজের কারণে বসদের এড়িয়ে যান, তারা প্রফেসর অ্যানির চেয়ে কম নয়।

ঐতিহ্য, সভ্যতা ও সংস্কৃতির দিক থেকে পশ্চিমা দেশগুলোতে শিক্ষার মান অনেক ভালো। যা আমাদের প্রাচ্যের দেশগুলিতে অনুপস্থিতই  বলা যায় , বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশে এটি একটি চিরন্তন সত্য। কিন্তু আমাদের শিক্ষকদের একটা বড় অংশ আছে যারা নৈতিকভাবে পশ্চিমাদের চেয়ে হাজার গুণে  ভালো।

শিক্ষকের চাকরি পেলেই শুধু  শিক্ষক হওয়া যায় না। একজন শিক্ষক হতে হলে জ্ঞান, গুণ, কর্ম ও আচরণে শ্রেষ্ঠত্ব থাকতে হবে। বাংলাদেশে গত দুই দশকে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসন নিয়োগ হয়েছে দলীয় ও চাটুকারিতার ভিত্তিতে।গত ১৫ বছরে যার পরিমাণ আরো বেশি হয়েছে। ফলে আমাদের সময়ের শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষার স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। দলবদল ছাড়া খুব কম শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে।

যদি এদেশের বেশিরভাগ ভার্সিটি এবং ডিপার্টমেন্টের দিকে তাকান তাহলে দেখতে পাবেন যে যারা টাকা ও দলাদলির কারণে শিক্ষক হন তাদের অধিকাংশই  পাঠদানের অযোগ্য। তারা ক্লাসে বসে রাজনীতি করে। হাম্বাটাম্বা ক্লাস-পরীক্ষা কক্ষ ছেড়ে নেতার পা চাটতে পার্টি অফিসে ঘুরে বেড়ায়। তাদের সম্পর্কে কিছু বলা যাবে না। শিক্ষকদের নামে এত রাজনৈতিক গুন্ডাবাজির কারণে আমাদের সময়ের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সার্টিফিকেট ছাড়া কিছুই নিতে পারছে না। যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশে শিক্ষকদের জাত উদ্ধার করা হচ্ছে প্রধানত অধ্যাপক এ্যানির প্রসঙ্গ নিয়ে।

তথাকথিত পেশাদার শিক্ষকদের জাত উদ্ধারে আমার কোনো আপত্তি নেই এবং  কিন্তু অথর্ব শিক্ষকদের গোষ্ঠী উদ্ধার করতেও আমি সমান অনুরাগী। কিন্তু কতক অপশিক্ষকের অপকর্মের কারণে শিক্ষকদের গণহারে অবমূল্যায়ন করতে আমার আপত্তি। শিক্ষকদের সমালোচনা করতে হলে নির্দিষ্ট বিষয়ের সমালোচনা করতে হবে। শিক্ষক শব্দ দ্বারা মূলত সবচেয়ে বড় গার্ডিয়ানদের কে বোঝায় বোঝায়। আর আমাদের দেশে যাদের উদ্ধার করা হচ্ছে তারা আসলে শিক্ষক নন। কারণ একজন শিক্ষক কখনই কুরুচিপূর্ণ নয়। দুই-পাঁচটি কুলাঙ্গার কারণে তাবৎ বাংলাদেশের সকল শিক্ষককে হেয় এবং অপমানিত করা চলবে না।  গালাগাল করা যাবে না।

এটি উল্লেখ করা উচিত যে প্রফেসর অ্যানি ল’হুলিয়ার কথা বলতে রাজি হন যখন কলার তার কাছ থেকে দুই থেকে তিন মিনিটের অনুরোধ করেন। পরে, ফোনকারী অ্যাডাম স্মিথ তাকে অভিনন্দন জানান এবং নোবেল পুরস্কার জয়ের খবরটি জানিয়ে দেন। বিনিময়ে তাকে ধন্যবাদ জানান অ্যানি ল’হাউলিয়ার।

ক্লাসে লেকচারে ব্যস্ত শুনে অ্যাডাম স্মিথ জানতে চান তিনি এই সুসংবাদটি তার ছাত্র-ছাত্রীদের জানাবেন কি না? জবাবে তিনি বলেন, আমি অবশ্যই তাদের জানাব। আমি আশা করি তারা জানলে খুব খুশি হবে। এটা তাদের জন্য অনেক মজার হবে. কিন্তু আমাকে অবশ্যই আমার ক্লাস লেকচারে ফিরতে হবে এবং ক্লাস শেষ হলে পরে তাকে একসময় তাদেরকে জানাতে হবে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে পোস্ট করেছেন নোবেল পুরস্কার কর্তৃপক্ষ। নোবেল পুরষ্কার ভ্যারিফাইড পেজে অ্যানি ল’হউলিয়ারের ফোনে কথা বলার একটি ছবি পোস্ট করা হয়েছে, যা বলছে একজন নিবেদিত প্রাণ শিক্ষকের গল্প! ২০২৩ পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার অ্যানি ল’হলিয়ারকে  তার ছাত্রছাত্রীদের থেকে আলাদা করা যায়নি।

উল্লেখ্য, ইলেক্ট্রন গতিবিদ্যার গবেষণায় ‘অ্যাটোসেকেন্ডে আলোর স্পন্দন’ খুঁজে বের করার সূত্র আবিষ্কারের জন্য এ বছর তিনজন নোবেল পুরস্কার জিতেছেন। মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অফ সায়েন্সেস তাদের নাম ঘোষণা করেছে। তিন বিজয়ী মোট ১০মিলিয়ন ক্রোনার (৯৮৬ হাজার মার্কিন ডলার) পুরস্কার হিসেবে পাবেন।

রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অনুসারে, এই তিনজনের গবেষণা মানবতাকে পরমাণু এবং অণুর ভিতরে ইলেকট্রনের জগত অন্বেষণ করার জন্য নতুন সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে। তারা আলোর অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত স্পন্দন তৈরি করার একটি উপায় তৈরি করেছে যেখানে ইলেকট্রন চলে বা শক্তি পরিবর্তন করে, যা দ্রুত প্রক্রিয়াগুলি পরিমাপ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।

ওহে নোবেল বিজয়ী মহান বিজ্ঞানী,  আপনি শুধু নোবেল বিজয়ী নন আপনি সমস্ত দুনিয়ার মায়াবী, দরদী এবং একনিষ্ঠ শিক্ষাদানকারী শিক্ষক।  দুনিয়ার সর্বোচ্চ মাপের পুরস্কারকেও শিক্ষা দানের অবস্থায় আপনার কাছে তুচ্ছ মনে হয়েছে ।  আর আপনি হয়ে উঠেছেন সকল শিক্ষক শিক্ষার্থীর কাছে প্রিয় শিক্ষিকা এবং প্রিয় আইকন ।  আপনাকে আমাদের টাইম টিভি ইউএস এর পক্ষ থেকে অগণিত-অসংখ্য ভালবাসা ও ধন্যবাদ ।

আরও পড়ুন

একই বিভাগে নোবেল পেয়ে ইতিহাসে বাবা ও ছেলের স্বীকৃতি

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X