কিডনি সুস্থ রাখতে খাবার ও পানীয় গ্রহণে সতর্কতা
কিডনি
অন্যান্য অঙ্গ পতঙ্গের মতো কিডনিও মানব দেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কার্য নিয়ন্ত্রণকারী একটি অর্গান। কিডনি বা বৃক্ক(Kidney) মেরুদণ্ডী দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যা দেহের রেচনতন্ত্রের প্রধান অঙ্গ। এর প্রধান কাজ হল রক্ত, আলাদা বর্জ্য পদার্থ (যেমন ইউরিয়া) ফিল্টার করা এবং প্রস্রাব তৈরি করা। মানুষের শরীরের সমস্ত রক্ত দিনে প্রায় ৪০ বার কিডনি দিয়ে প্রবাহিত হয়। এছাড়াও শরীরে পানি ও ইলেক্ট্রোলাইট যেমন সোডিয়াম, পটাশিয়াম ইত্যাদির ভারসাম্য বজায় রাখে। এটি একটি এন্ডোক্রাইন গ্রন্থি বা অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি হিসাবে হরমোন নিঃসৃত করে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা পালন করে।
মানবদেহের অভ্যন্তরে, পেটের গহ্বরের পিছনে মেরুদণ্ডের উভয় পাশে দুটি কিডনি অবস্থিত। কিডনির দৈর্ঘ্য ৪ থেকে ৫ ইঞ্চি। আকারে অনেকটা শিমের মতো। রং সামান্য লালচে বাদামী। প্রতিটি কিডনি একটি স্বচ্ছ এবং পাতলা পেরিটোনিয়াম ঝিল্লি দ্বারা আবৃত থাকে। একজন পুরুষের কিডনির ওজন ১৫০-১৭০ গ্রাম এবং একজন মহিলার কিডনির ওজন ১৩০-১৫০ গ্রাম। লিভারের অবস্থানের কারণে সাধারণত বাম কিডনি ডান কিডনির চেয়ে কিছুটা বড় আকারের হয়।
কিডনিতে পাথরের সমস্যা বা ক্ষতির মতো যেকোনো সমস্যা যেকোনো বয়সেই হতে পারে। অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, যাচ্ছেতাই ওষুধ সেবন, পানি না খাওয়ার মতো অনেক কারণে কিডনিতে পাথর জমে এবং আস্তে আস্তে হতে থাকে কিডনি ড্যামেজ এর মত ভয়ংকর অবস্থাও। কিডনি মানবদেহের অন্যতম অঙ্গ। কিডনি একদিকে শরীরের বর্জ্য পদার্থকে পরিশুদ্ধ করে। অন্যদিকে এটি বিভিন্ন খনিজ লবণের ভারসাম্য বজায় রাখতেও সাহায্য করে। কিডনি রোগ নির্ণয় করা হয় অনেক দেরিতে। অনেক ক্ষেত্রে, একটি কিডনি ব্যর্থ হলেও অন্যটি কাজ করতে থাকে। ফলে ক্ষয়ক্ষতির পূর্বাভাস সহজে পাওয়া যায় না। প্রায় ৮০-৯০ শতাংশ কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়ার আগে অনেকেই তা জানেন না। কিডনি সুস্থ রাখতে কী খান সে সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি। কিডনি সুস্থ রাখতে কী কী খাবার এড়িয়ে চলতে হবে?
কিডনিতে পাথর হওয়া এবং কিডনি ড্যামেজ হওয়া থেকে রক্ষা পেতে যে খাবারগুলো তুলনামূলক বেশি উপকারী
আজকাল অনেকেই কিডনির সমস্যায় ভুগছেন। কোভিড-পরবর্তী যে সমস্যাগুলো বেড়েছে তার মধ্যে কিডনির সমস্যা অন্যতম। কিডনি আমাদের শরীরে ফিল্টারিং মেকানিজম হিসেবে কাজ করে। এখন যদি এই কিডনি কোনো কারণে নষ্ট হয়ে যায় তাহলে এই বিশুদ্ধ রক্ত শরীরের সর্বত্র পৌঁছাবে না। সেখান থেকে শরীরের অন্যান্য অংশ আক্রান্ত হবে। যেসব খাবারে পটাশিয়াম কম থাকে সেগুলো কিডনি রোগের জন্য ভালো।
- নিয়মিত রসুন খান-রসুনে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের জন্য খুবই ভালো এমনকি কিডনির জন্যও ভালো।
- লাল ক্যাপসিকাম- লাল ক্যাপসিকাম শরীরের জন্য খুব ভালো। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার রয়েছে। সেই সঙ্গে পটাশিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম খুবই কম। আর তাই কিডনির সমস্যা থাকলে নিয়মিত এই লাল ক্যাপসিকাম খান। প্রতিদিন আধা কাপ খেতে পারলে খুব ভালো
- বাঁধাকপি- কিডনির জন্যও ভালো। এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন কে, ভিটামিন সি, ফাইবার, ভিটামিন বি৬ এবং ফলিক অ্যাসিড। পটাশিয়াম কম। আপনি এটি আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় বাঁধাকপির তপকারি বা মাংসের স্যুপের সাথে মিশিয়ে নিতে পারেন।
- ফুলকপি- ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এবং ফোলেট এবং ফাইবারের একটি ভাল উৎস। ফুলকপিতে এমন উপাদান রয়েছে যা লিভারের অমেধ্য বের করে দেয় এবং লিভারকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
- এছাড়াও সবুজ শাকসবজি সহ , পালং শাক খান- এতে ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে। এটি কিডনি সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এই সবজিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা কিডনিকে আরও ফিল্টার করতে সাহায্য করে।
- পেঁয়াজ খান-পেঁয়াজে রয়েছে ফ্ল্যাভিনয়েড এবং কোয়ারসেটিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট- যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে। পেঁয়াজে পটাশিয়াম কম থাকে তাই কিডনির জন্য ভালো। অনেকেই খাবারের সঙ্গে নিয়মিত এক টুকরো কাঁচা পেঁয়াজ খান। যা শরীরের জন্য উপকারী।
কিডনিতে পাথর হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। তাদের মধ্যে কিছু খাবার। ঝুঁকি এড়াতে কী খাবার এড়িয়ে চলবেন?
- যে কোনো ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধের কোর্স শেষ করার আগে ওষুধ বন্ধ করবেন না।
- ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া প্যারাসিটামল, ব্যথানাশক বা উত্তেজক ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- পর্যাপ্ত পানি পান করা থেকে দূরে থাকবেন না।
- অযথা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাবেন না।
- অনেকক্ষণ প্রস্রাব আটকে রাখবেন না।
- যেকোনো ধরনের ধূমপান ও নেশাজাতীয় দ্রব্য এড়িয়ে চলুন।
- কোল্ড-ড্রিংকস, প্যাকেট-সিল করা ফলের জুস, চিনি যুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে। এগুলি কিডনিতে পাথর তৈরিতে সাহায্য করে বেশ।
- লবণ খাওয়ার পরিমাণ কমাতে হবে। বিশেষ করে কাঁচা লবণ এড়িয়ে চলুন।
- খুব বেশি কফি বা চা পান করা ভালো নয়। দিনে এক থেকে দুই কাপ ভালো। দীর্ঘ সময় ধরে বেশি চা পান করলে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
- বেশি ভাজা খাবার খাওয়া কিডনিতে পাথর হওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে। তাই এ ধরনের খাবার থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকাই ভালো।
- পরিবারের কারও কিডনিতে পাথরের সমস্যা থাকলে আরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।