পাসওয়ার্ড অবশ্যই হতে হবে শক্তিশালী
পাসওয়ার্ড হল একটি শব্দ বা অক্ষরের সংমিশ্রণ যা নির্দিষ্ট ব্যবহারকারীর পরিচয় যাচাই করতে বা একটি নির্দিষ্ট সাইটে অ্যাক্সেস পাওয়ার অনুমোদনের জন্য ব্যবহার করা হয়।
প্রাচীনকাল থেকে পাসওয়ার্ড এর ব্যবহার শুরু হয়ে আসছে তখন কোন একটি স্থানে প্রবেশ করতে হলে একটি ওয়াচ ওয়ার্ড বা পাসওয়ার্ড এর প্রয়োজন হতো । যেটা দেখানোর মাধ্যমে ওই নির্দিষ্ট ব্যক্তি ওই স্থানে প্রবেশের অনুমতি পেত । আধুনিক সময়ে, ব্যবহারকারীর নাম এবং পাসওয়ার্ডগুলি সাধারণত লগইন হিসাবে ব্যবহৃত হয় যা কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম, মোবাইল ফোন, কেবল টিভি ডিকোডার, এটিএম, ইমেল ইত্যাদি অ্যাক্সেস নিয়ন্ত্রণ করে।
সময়ের সাথে সাথে অনলাইনে মানুষের তৎপরতা অনেক বেড়েছে। এবং অনলাইনে বিভিন্ন কাজের জন্য আপনাকে অনেক সাইটে নিবন্ধন করতে হয়। এই রেজিস্ট্রেশনের সময় অনেক অ্যাকাউন্টের জন্য ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড তৈরি করতে হয়। এই পাসওয়ার্ডগুলো শক্তিশালী না হলে সহজেই হ্যাক হয়ে যেতে পারে। পাসওয়ার্ড শক্তিশালী করার জন্য এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস সাজেস্ট করছি।
ব্যক্তিগত থেকে প্রাতিষ্ঠানিক – সবকিছুর জন্য আলাদা পরিষেবার প্রয়োজন। বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। এই অ্যাকাউন্টগুলি পাসওয়ার্ড সুরক্ষিত। তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতির যুগে পাসওয়ার্ড শক্তিশালী না হলে হ্যাকারদের আক্রমণের আশঙ্কা থাকে। অন্যদিকে মনে রাখার ঝামেলা এড়াতে ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে পাসওয়ার্ড ম্যানেজারদের ব্যবহার বাড়ছে।
পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করার আগে, পাসওয়ার্ডটি কতটা শক্তিশালী তা পরীক্ষা করে দেখুন। কারণ এটি ব্যক্তিগত তথ্য, এগুলো ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জিনিস রক্ষা করে। তাই পাসওয়ার্ড তৈরির সময় সতর্ক থাকুন। সংক্ষিপ্ত এবং সহজে মনে রাখা পাসওয়ার্ডগুলির সাধারণত একটি নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকে । তাই আপনাকে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি সম্পর্কে জানতে হবে।
পাসওয়ার্ড মনে নেই?
পাসওয়ার্ড মনে রাখতে সমস্যা হলে অফলাইনে বা নোট অ্যাপে পাসওয়ার্ড লিখে রাখতে পারেন, কিন্তু এগুলো হারিয়ে গেলে কী করবেন? তাই যতটা সম্ভব পাসওয়ার্ড মাথায় রাখার চেষ্টা করুন।
ব্রাউজারে পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ ?
আমরা অনেকেই ব্রাউজারে পাসওয়ার্ড সেভ করে রাখি যাতে পরে লগইন করার জন্য আবার পাসওয়ার্ড দিতে না হয়। কিন্তু আমি মনে করি এটি একটি বদ অভ্যাস কারণ ব্রাউজারে সংরক্ষিত পাসওয়ার্ডগুলি দেখতে সহজ। আপনার অজান্তেই যে কেউ এসে পাসওয়ার্ড দেখতে পারে এবং আপনার অ্যাকাউন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই ব্রাউজারে পাসওয়ার্ড সেভ করা এড়িয়ে চলুন, কষ্ট হলেও টাইপ করে লগইন করুন।
পাসওয়ার্ডে ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন:
পাসওয়ার্ড তৈরি করার সময় বেশিরভাগ মানুষ পোষা প্রাণী বা তাদের সন্তানদের নাম, জন্ম তারিখ বা মাস ব্যবহার করেন। কিন্তু হ্যাকার যদি আপনার সম্পর্কে জানতে পারে, তাহলে তারা সহজেই এই তথ্যের মাধ্যমে পাসওয়ার্ড জানতে পারবে। ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে এসব তথ্য জানা সম্ভব।
সাধারণ বা প্রচলিত পাসওয়ার্ড ব্যবহার করবেন না:
যেসব পাসওয়ার্ড ইন্টারনেট জগতে ব্যবহার করা হয়েছে বা করা হচ্ছে সেগুলো ব্যবহার করবেন না। সাইবারসিকিউরিটি কোম্পানি সোফস ৫০ টি সাধারণ পাসওয়ার্ড তালিকাভুক্ত করেছে। হ্যাকাররা সেগুলো ব্যবহার করে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে।
একটি বা দুটি শব্দ ব্যবহার না করা:
অভিধানে একটি বা দুটি শব্দ দিয়ে কোনো পাসওয়ার্ড তৈরি করা যাবে না। কারণ হ্যাকারদের কাছে সব ওয়ার্ড স্ক্যানিং বা ভেরিফিকেশন সফটওয়্যার রয়েছে।
দীর্ঘ পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা: পাসওয়ার্ড নিরাপত্তা বাড়াতে ১১থেকে ১২ শব্দ যথেষ্ট। সাইবার সিকিউরিটি রিসার্চ ফার্ম সানস অবশ্য পাসওয়ার্ডে ১৫টি অক্ষর ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছে।
পাসওয়ার্ডে বিভিন্ন অক্ষরের ব্যবহার:
যেকোনো পাসওয়ার্ড শক্তিশালী করতে বিভিন্ন অক্ষর ব্যবহার করুন। এর মধ্যে রয়েছে বড় হাতের বা Capital অক্ষর, ছোট হাতের অক্ষর, সংখ্যা এবং বিশেষ চিহ্ন।
একটি শব্দগুচ্ছ বা ফেইজ দিয়ে পাসওয়ার্ড তৈরি করা:
মনে রাখা সহজ করার জন্য শব্দগুচ্ছ দিয়ে পাসওয়ার্ড তৈরি করা ভালো। যেমন: Somy19#,,.._+% আরেকটি উপায় হল একটি বড় বাক্যাংশের প্রথম অক্ষর ব্যবহার করা। অক্ষর বড় হাতের এবং ছোট হাতের উভয় ক্ষেত্রেই লেখা যায়। এটি সহজে পাসওয়ার্ড সনাক্ত করা কঠিন করে তুলবে।
পাসওয়ার্ড যত বড় এবং জটিল, নিরাপত্তা তত বেশি।
নিয়মিত বিরতিতে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন:
নিয়মিত বিরতিতে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা হ্যাকার বা আক্রমণকারীদের জন্য তাদের সনাক্ত করা কঠিন করে তোলে। এই কারণে, পাসওয়ার্ডের আগে এবং পরে বছর যোগ করা যেতে পারে। প্রতি বছর বছর পরিবর্তন করা যেতে পারে। এতে পাসওয়ার্ডের সাইজ বাড়বে এবং এটি কতদিনের পুরনো সেটিও জানা যাবে।
একাধিক পাসওয়ার্ডের জন্য একটি ম্যানেজার প্রোগ্রাম ব্যবহার করুন:
আপনার যদি একাধিক প্ল্যাটফর্ম এবং পরিষেবাগুলির জন্য একবারে পাসওয়ার্ড লিখতে হয়, তাহলে লাস্টপাস বা রোবোফর্মের মতো ম্যানেজার ব্যবহার করা ভাল। এই ম্যানেজাররা সব পাসওয়ার্ড নিরাপদে সেভ করে রাখে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেট করতে সাহায্য করে। কিন্তু এই অ্যাপগুলোতে মাস্টার পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে।
পাসওয়ার্ড নিরাপত্তা স্তর পরীক্ষা:
কোন পাসওয়ার্ড কত শক্তিশালী তা পরীক্ষা করার উপায় আছে। গিবসন রিসার্চ এর একটি পাসওয়ার্ড টেস্টার আছে। যাইহোক, যদি হ্যাকাররা কোনোভাবে ডিভাইসে কিলগোর ইনস্টল করে থাকে, তবে তারা যেভাবেই হোক পাসওয়ার্ড পেতে পারে। এজন্য বিভিন্ন জায়গায় আলাদা আলাদা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে।
আশা করি, এই পাসওয়ার্ড টিপস এবং কৌশলগুলি সবার জন্য কিছুটা হলেও কাজ দিবে এবং আমরা অ্যাকাউন্টের জন্য সঠিক শক্তিশালী password তৈরি করতে সক্ষম হব।
আরও জানতে
১০ লাখ ফেসবুক ব্যবহারকারীর আইডি ও পাসওয়ার্ড চুরি ( হ্যাক ) হয়েছে