November 21, 2024
অত্যাচার একটি জঘন্য অপরাধ

অত্যাচার একটি জঘন্য অপরাধ

অত্যাচার একটি জঘন্য অপরাধ

অত্যাচার একটি জঘন্য অপরাধ

বর্তমানে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে চরম অত্যাচারের  বিস্তার চলছে। দুর্বল, অসহায়, পীড়িতরা অত্যাচারীর অত্যাচারে নির্যাতিত হয়;জনজীবন বিরক্তিকর। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের বিত্তবানরা নিরীহ ও সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে দরিদ্র ও অসহায়দের  প্রতি অবিচার ও সহিংসতার মাধ্যমে শোষণ, নির্যাতন ও নিপীড়নের স্টিমরোলার চালিয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় সাধারণ মানুষ তাদের ন্যায্য অধিকার, ন্যায়বিচার, সাম্য, বাকস্বাধীনতা ইত্যাদি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, আত্মসম্মান ক্ষুণ্ন হচ্ছে। যাইহোক, ইসলাম জুলুমের মতো অন্যায় ও ধ্বংসাত্মক কাজের মূলোৎপাটনের ওপর বরাবরই জোর দিয়ে আসছে।

ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যাচার অত্যন্ত জঘন্য অপরাধ। অত্যাচারীকে সবাই ঘৃণা করে। আর এ কারণে মানুষ ইহজীবনে লাঞ্ছিত হবে এবং পরকালে কঠিন শাস্তি ভোগ করবে।

এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘আখেরাতে জালেমদের জন্য কোনো দয়ালু বন্ধু থাকবে না এবং তাদের জন্য কোনো সুপারিশকারী থাকবে না, যার কথা মানা হবে।’ (মুমিন, ১৮) ।

অন্যত্র তিনি বলেছেন, ‘অত্যাচারীদের কোনো সাহায্যকারী থাকবে না।’ (হজ, ৭১)

উপরোক্ত দুটি আয়াতে আল্লাহ আমাদের একে অপরের প্রতি জুলুম করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। কেননা কেয়ামতের দিন অত্যাচারীর কোন সাহায্যকারী থাকবে না। সেদিন নির্যাতিত ব্যক্তিকে তার অত্যাচারের সমপরিমাণ নেকি দিয়ে  দিতে হবে।  তা  হবে  জাহান্নামে যাওয়ার কারণ। এ জন্য জুলুম-নির্যাতন পরিহার করতে হবে।

আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র বলেন, ‘যারা পৃথিবীতে জুলুম করে এবং অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ করে তাদেরকেই দোষারোপ করা হবে। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ (সুরা আশ শূরা)

তিনি অন্যত্র বলেছেন, তবে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, আর আল্লাহকে অনেক স্মরণ করেছে। আর তারা নির্যাতিত হওয়ার পর প্রতিশোধ নেয়। আর যালিমরা শীঘ্রই জানতে পারবে কোন্ প্রত্যাবর্তন স্থলে তারা প্রত্যাবর্তন করবে।’ (শু’আরা ২২৭)

তিনি  আরও  বলেছেন, ‘আর এরূপই হয় তোমার রবের পাকড়াও যখন তিনি পাকড়াও করেন অত্যাচারী জনপদসমূহকে। নিঃসন্দেহে তাঁর পাকড়াও বড়ই যন্ত্রণাদায়ক, কঠোর।’ (হুদ ১০২ )

রাসুল (সা.)  অত্যাচারীকে তার অত্যাচার থেকে নিবৃত্ত করার জন্য কঠোর ভাষা ব্যবহার করেছেন, তিনি বলেন ;  ‘যদি কোন ব্যক্তি কোন অত্যাচারীকে অত্যাচারে লিপ্ত দেখে এবং তাকে উভয় হাত দিয়ে প্রতিরোধ না করে, তাহলে আল্লাহ শীঘ্রই তাদের সবাইকে তার কঠোর শাস্তিতে নিক্ষেপ করবেন’ ( তিরমিযী))।

এ সম্পর্কে একটি হাদিস আছে- হজরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: অত্যাচার হতে সাবধান। নিশ্চয়ই কেয়ামতের দিন অত্যাচারীর জন্য অন্ধকার হবে।তোমরা কৃপণতা থেকে বেঁচে থাক। কৃপণতা তোমাদের আগের জনগণকে ধ্বংস করেছে। কৃপণতা তাদের অন্যায়ভাবে মানুষকে হত্যা করার প্রতি এবং হারামকে হালাল করার প্রতি উৎসাহিত করেছিল।'(মুসলিম)।

অন্য হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: কারও ওপর তার ভাইয়ের যদি কোনো দাবি থাকে, মান-স্মমান  অথবা অন্য কোনো কিছুর ওপরে জুলুম সম্পর্কিত তাহলে সে যেন ওই দিন আসার আগেই তার থেকে মাফ করিয়ে নেয়, যেদিন কোনো অর্থ-সম্পদ থাকবে না; বরং যদি কোনো নেক আমল থাকে তাহলে জুলুম পরিমাণ, তা নিয়ে নেওয়া হবে। আর যদি কোনো নেক আমল না থাকে তাহলে তার পাওনাদারের গোনাহের বোঝা নিয়ে তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে।’ (বুখারী)

উপরোক্ত হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, জালিম কেয়ামতের কঠিন অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। আর সেই অত্যাচার  আচার-আচরণ, কথাবার্তা, আচরণ ইত্যাদি যে কোন  ক্ষেত্রেই হোকনা কেন । অন্যায় হলে ক্ষমা চাইতে হবে, অন্যথায় পরকালে ভালো কাজের বিনিময়ে  তার প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। আর যদি কোন সওয়াব না থাকে তবে নির্যাতিত ব্যক্তির গুনাহ তার উপর চাপানো হবে। অত্যাচারীকে পাপের বোঝা নিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।

সহীহ বুখারীর অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুআজকে বললেন, হে মুআজ! নির্যাতিতদের অভিশাপকে ভয় করো। কারণ তার ও আল্লাহর মধ্যে কোনো পর্দা নেই।’ (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী)

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘তুমি বলতে পারবে সবচেয়ে নিঃস্ব কে? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, আমাদের মধ্যে সবচেয়ে দরিদ্র সেই ব্যক্তি যার অর্থ ও প্রয়োজনীয় জিনিস নেই। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে গরীব সেই ব্যক্তি যে কিয়ামতের দিন নামায, রোযা ও যাকাত নিয়ে হাজির হবে।

অন্যদিকে তার বিরুদ্ধে; অন্যায়ভাবে হত্যা, অন্যায়ভাবে সম্পদ ভোগ, অপবাদ ও অপব্যবহারের অভিযোগ থাকবে। অতঃপর তারা তার নেকীর ভাগিদার হবে । তার নেক আমল শেষ হলে তাদের পাপ তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (মুসলিম, মিশকাত )

উক্ত হাদিস দ্বারাও প্রমাণিত হয় যে,অন্য মানুষের ওপর অত্যাচারে তার  অধিকার  খর্ব  করা হয়, যা কঠিন  পাপের অন্তর্ভুক্ত। এটার দায় কেয়ামতের দিন নিজের নেকি দিয়ে পরিশোধ করতে হবে।

হজরত আবু মূসা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা অত্যাচারীকে এক নির্দিষ্ট সময়সীমা পর্যন্ত অবকাশ দিয়ে থাকেন। অবশেষে তাকে যখন পাকড়াও করেন, তখন তাকে আর ছাড়েন না। অতঃপর তিনি এই আয়াতটি পাঠ করলেন তোমার প্রতিপালকের ধরা এইরূপ যে যখন তিনি অত্যাচারী জনপদকে পাকড়াও করেন, তাঁর ধরা কঠিন।’ (, বুখারি, মুসলিম, মিশকাত )

আরও পড়ুন

যৌবন কাল ইবাদতের শ্রেষ্ঠ সময়

ফ্রান্সের স্কুলে আবায়া(বোরকা) নিষিদ্ধ করা হচ্ছে

শিশুকে মায়ের বুকের দুধ পান করানোঃ ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X