November 21, 2024
খাদ্যে বিষক্রিয়া বা ফুড পয়জনিং কেন হয়? তখন কী খাবেন আর কী খাবেন না

খাদ্যে বিষক্রিয়া বা ফুড পয়জনিং কেন হয়? তখন কী খাবেন আর কী খাবেন না

খাদ্যে বিষক্রিয়া বা ফুড পয়জনিং কেন হয়? তখন কী খাবেন আর কী খাবেন না

খাদ্যে বিষক্রিয়া বা ফুড পয়জনিং কেন হয়? তখন কী খাবেন আর কী খাবেন না

ফুড পয়জনিং একটি সাধারণ পেটের সমস্যা। ফুড পয়জনিং হল সেই অসুস্থতা যা খাবার খাওয়ার পরে ঘটে। যখন জীবাণুগুলি দুর্ঘটনাক্রমে আমাদের খাবারকে আক্রমণ করে। এটি সাধারণত খুব গুরুতর নয়। এটি সাধারণত এক সপ্তাহের মধ্যে ভাল হয়ে যায়। এটি শিশু বা প্রাপ্তবয়স্ক যারই হোক না কেন, সাধারণত বাড়িতেই খাদ্য বিষক্রিয়ার চিকিত্সা করা যেতে পারে।

বাংলাদেশের মতো দেশে ফুড পয়জনিং একটি সাধারণ এবং পরিচিত সমস্যা। কারণ এদেশের রাস্তার বা রাস্তার পাশের হোটেলের খাবার অনেক সময় অপরিষ্কার ও জীবাণুযুক্ত হয়।

খাদ্যে বিষক্রিয়া ঘটে যখন কেউ দূষিত, নষ্ট বা বিষাক্ত খাবার খায়, যা ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং পরজীবী দ্বারা সংক্রমিত হয়।

খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণঃ

বেশিরভাগ খাদ্যে বিষক্রিয়া হয় নোরোভাইরাস, সালমোনেলা, ক্লোস্ট্রিডিয়াম পারফ্রিনজেন, ক্যাম্পাইলোব্যাক্টর এবং স্টাফিলোকক্কাস নামক প্যাথোজেনের কারণে । তবে ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, ছাঁচ, টক্সিন পদার্থ, অ্যালার্জেন, কম রান্না করা মাংস ইত্যাদিও খাদ্যে বিষক্রিয়ার জন্য দায়ী।

তবে বেশিরভাগ সময় ফুড পয়জনিং হলে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয় না।

খাদ্যে বিষক্রিয়ার লক্ষণঃ

খাদ্য বিষক্রিয়ার সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • পেটে ব্যথা
  • ডায়রিয়া
  • বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
  • ক্ষুধামান্দ্য
  • কম মাত্রার জ্বর
  • দুর্বলতা
  • মাথাব্যথা
কিন্তু মারাত্মক ফুড পয়জনিং এর কিছু উপসর্গ আছে, যেগুলো হলঃ
  • ডায়রিয়া যা ৩দিনের বেশি স্থায়ী হয়
  • ১০২ ডিগ্রির বেশি জ্বর
  • দেখতে বা কথা বলতে অসুবিধা
  • গুরুতর ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ, যেমন শুষ্ক মুখ, সামান্য প্রস্রাব
  • রক্তাক্ত প্রস্রাব ইত্যাদি

যদি এই লক্ষণগুলি দেখতে পান তবে আপনার অবিলম্বে ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।

ফুড পয়জনিং হলে কী খাবেন?

প্রচুর পানি পান করুনঃ

খাদ্য বিষক্রিয়ার প্রভাব মোকাবেলায় প্রচুর পানি পান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বমি এবং ডায়রিয়া ডিহাইড্রেশনের কারণ হতে পারে, তাই খাবারে বিষক্রিয়া হলে বিরতি দিয়ে দিয়ে  পানি পান করুন।

এছাড়াও, ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয় এই সময়ে ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধের সর্বোত্তম উপায়। এছাড়া ক্যাফেইনবিহীন সোডা, হার্বাল চা, চিকেন বা ভেজিটেবল স্যুপ বেশি করে খাওয়া উচিত।

 কম চর্বিযুক্ত এবং কম ফাইবারযুক্ত খাবার খানঃ

ফুড পয়জনিংয়ে মসৃণ, কম চর্বিযুক্ত, কম আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে। কারণ এ সময় পাকস্থলীর পক্ষে চর্বি ও উচ্চ আঁশ হজম করা কঠিন। তাই এ সময় কলা, ডিমের সাদা অংশ, মধু, ওটস , আলু, ভাত, আপেল ইত্যাদি খাওয়া উপকারী।

 প্রাকৃতিক প্রতিকারঃ

খাদ্যে বিষক্রিয়ার সময় ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া নির্মূল করাই প্রধান লক্ষ্য। তাই এ সময় আদা চা, দই বা প্রোবায়োটিক ক্যাপসুল খাওয়া উপকারী। কারণ এগুলো শরীরে সুস্থ ব্যাকটেরিয়া তৈরি করতে সাহায্য করে।

ফুড পয়জনিংয়ে কী খাবেন নাঃ
  • কিছু খাবার খাদ্যের বিষক্রিয়াকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে। তাই ফুড পয়জনিংয়ের সময় এই ধরনের খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো।
  • অ্যালকোহল, ক্যাফেইনযুক্ত বা সোডা জাতীয় পানীয়। এনার্জি ড্রিংকস, কফির মতো পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে।
  • উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার যেমন অ্যাভোকাডো, ব্রকলি, মটরশুটি, গোটা শস্য, বাদামী চাল ইত্যাদি।
  • অত্যধিক লবণ বা অত্যধিক মশলাযুক্ত খাবার খাদ্য বিষক্রিয়ার সময় পেটে জ্বালা করে। তাই এসব খাবার না খাওয়াই ভালো।
  • কিছু দুগ্ধজাত খাবার, যেমন পনির এবং আইসক্রিম, এগুলোতে সাধারণত চর্বি বেশি থাকে। এমনেতেই  এগুলো পেটের সমস্যাও  সৃষ্টি করে।
  • উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার এবং আধা রান্না করা মাংস।
  • অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার যেমন ফ্রায়েড চিকেন, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ইত্যাদি না খাওয়াই ভালো।
  • ধূমপান
  • ফলের রস
খাদ্যে বিষক্রিয়া প্রতিরোধে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করা উচিতঃ
  • খাবার তৈরির জায়গা, পাত্র এবং আপনার হাত সব সময় পরিষ্কার রাখুন।
  • গরুর মাংস খুব ভালো করে রান্না করুন। এটি ১৬০ ডিগ্রি ফারেনহাইটে রান্না করা উচিত। এছাড়াও, রোস্ট, স্টেক এবং চপস ১৪৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটে রান্না করুন।
  • মুরগি এবং টার্কির মত মাংস ১৬৫ ডিগ্রী ফারেনহাইটে রান্না করুন।
  • সামুদ্রিক খাবার পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরিষ্কার করা উচিত এবং ভালভাবে রান্না করা উচিত।
  • মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ যাচাই করে এবং ভেজাল আছে কিনা তা নিশ্চিত করে যেকোনো স্থান থেকে খাবার কিনতে হবে।
  • পচনশীল খাবার ১ ঘন্টার মধ্যে ফ্রিজে রাখুন।
  • খাবারটি সন্দেহজনক মনে হলে বা গন্ধ পেলে তা পরিত্যাগ করুন।
  • পানি ভাল করে ফুটিয়ে বা ফিল্টার করে পান করুন।

যেখানে সেখানে খাওয়া এবং দাওয়াত খাওয়ার সময় অবশ্যই নিজের শরীরের প্রতি লক্ষ্য রেখে সচেতনভাবে খাওয়া উচিত । এবং শুধুমাত্র  স্বাদ এবং মজাকে প্রাধান্য না দিয়ে স্বাস্থ্যের প্রতি অবশ্যই লক্ষ্য রাখা উচিত।  তাহলে ফুড পয়জনিং  থেকে আমরা সহজেই রক্ষা পেতে পারবো ।

2 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X