মুমিন দুঃখ-কষ্টে ভেঙ্গে পড়ে না
একজন মুমিন, একজন আল্লাহ বিশ্বাসী মানুষের মূল্য সারা দুনিয়ার চেয়েও বেশি শুধু সারা দুনিয়া নয় । দুনিয়া এবং মহাবিশ্বের সচরাচর সবকিছুর চেয়েও বেশি । কারণ একজন মুমিনের আল্লাহর উপর বিশ্বাস ও আস্থা উপর নির্ভর করে আল্লাহ তাআলা পৃথিবীকে ধ্বংস করবেন না । তাই সে মমিন কখনোই বিপদ দ্বারা পরীক্ষায় পরিক্ষিত হয়ে ভেঙ্গে পড়ে না।
বিপদ পার্থিব জীবনে মানুষের একটি অবিরাম সঙ্গী।এর মাধ্যমে আল্লাহ মুমিন বান্দাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। তবে আল্লাহ মুমিনদের কষ্ট লাঘবের কিছু উপায়ও বর্ণনা করেছেন। বিশেষ করে আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস এবং পরকালে প্রতিদানের প্রত্যাশা মুমিনকে বিপদে ভেঙ্গে পড়তে দেয় না।
যেই বিশ্বাস মুমিনের কষ্ট লাঘব করে
প্রতিদানেরআশা:
মুমিনের উপর যে কষ্ট আসে তার বিনিময়ে আল্লাহর কাছে একটি পুরস্কার আশা করে। কারণ হাদিসে কুদসিতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যখন আমি আমার মুমিন বান্দার কোনো প্রিয় জিনিসকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেই এবং সে ধৈর্যধারণ করে, তখন তার জন্য জান্নাত ছাড়া আমার কাছে আর কিছুই (পুরস্কার) থাকে না।’ (সহীহ বুখারী)
পাপ থেকে ক্ষমার প্রত্যাশা:
বিশ্বাসী তার বিপদের বিনিময়ে পাপের ক্ষমা আশা করে। কারণ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “মুমিন নর-নারী, তাদের সন্তান-সন্ততি ও সম্পদের উপর সর্বদা বিপদ রয়েছে।”
অবশেষে সে পাপমুক্ত অবস্থায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করে।’ (সুনানে তিরমিযী)
ভাগ্যলিপিতে বিশ্বাস:
একজন মুমিন বা বিশ্বাসী বিশ্বাস করে যে জীবনের সমস্ত সুখ-দুঃখ সর্বশক্তিমান আল্লাহ দ্বারা নির্ধারিত। বলা হয়েছে,‘পৃথিবীতে অথবা ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের ওপর যে বিপর্যয় আসে আমি তা সংঘটিত করার আগে তা লিপিবদ্ধ থাকে। আল্লাহর পক্ষে তা খুবই সহজ।’ (সূরা হাদিদ, আয়াত:২২ )
আল্লাহ বিন্দুমাত্রও অত্যাচার করেন না:
বান্দার জন্য দুঃখ-কষ্ট নির্ধারণ করে আল্লাহ তাঁর প্রতি জুলুম করেননি; বরং এতে নিশ্চয়ই কোনো কল্যাণ রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনার প্রতিপালক! তাঁর বান্দাদের প্রতি অবিচার করেন না।’(সূরা হা-মীম-সাজদা, আয়াত: ৪৬)
ধৈর্যের জন্য বড় পুরষ্কারের আশা:
একজন মুমিন যদি প্রতিকূলতার মধ্যে ধৈর্য ধরেন, আল্লাহ তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে পুরস্কৃত করবেন। বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই ধৈর্যশীলদেরকে দেওয়া হবে অপরিমেয় পুরস্কার। (সূরা জুমার, আয়াত ১০)
বিপদের জন্য নিজের কর্মই দায়ী:
পার্থিব জীবনে দুঃখ-কষ্ট ও বিপদের জন্য বান্দার নিজের কাজই বেশি দায়ী।
সর্বশক্তিমান আল্লাহ বলেন, “তোমার উপর যে বিপদ আসে তা তোমার কর্মের ফল এবং তিনি তোমার অনেক পাপ ক্ষমা করে দেন।” (সূরা আশ-শুরা, আয়াত: ৩০)
কল্যাণের আশা করা:
পার্থিব জীবনের দুঃখ-কষ্ট যা মানুষ পছন্দ করে না, তার পেছনে কিছু কল্যাণ থাকতে পারে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যদি তাদের অপছন্দ করো, তবে এমন হতে পারে যে আল্লাহ যাতে প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন তোমরা তাকেই অপছন্দ করছ।’ (সূরা নিসা, আয়াত 19)
সুখের দিন বেশি দূরে নয়:
আল্লাহ মুমিনদের সমস্যায় রাখতে চান না; বরং তিনি তাদের জীবনকে সহজ করতে চান। তাই খারাপ দিনের পর ভালো দিন আসবে এটাই মুমিনের বিশ্বাস। সর্বশক্তিমান আল্লাহ বলেন, “আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ চান, তিনি তোমাদের জন্য কষ্ট চান না।” (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৫)
অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, “নিশ্চয়ই কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে।” (সূরা ইনশিরাহ, আয়াত: ৫)
দুঃখ ভোগ মানুষের জীবনের অংশ:
পৃথিবীর সব মানুষেরই কোনো না কোনো দুঃখ থাকে। যেমন ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি তোমাদের আঘাত লেগে থাকে, অনুরূপ আঘাত তাদেরও লেগেছিল। মানুষের মধ্যে এই দিনগুলোর পর্যায়ক্রমে আমি আবর্তন ঘটাই, যাতে আল্লাহ মুমিনদের জানতে পারেন।’ (সুরা আলে ইরমান, আয়াত : ১৪০)
নবী ও রসূলরাও কষ্ট পেয়েছেন: পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ হলেন নবী ও রসূলগণ। তারাও সংসারে অনেক কষ্ট করেছে। সুতরাং বিপদে পড়া মানেই দুঃখী হওয়া বা আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হওয়া নয়। যেমন ইয়াকুব (আঃ) সম্পর্কে বলা হয়, শোকে তার চক্ষুদ্বয় সাদা হয়ে গিয়েছিল এবং সে ছিল অসহনীয় মনঃস্তাপে ক্লিষ্ট।’।” (সূরা ইউসুফ, আয়াত ৮৪)
আর আইয়ুব (আঃ) সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘আর আইয়ুবকে স্মরণ কর, যখন সে তার রবকে ডেকেছিল এবং বলেছিল, আমি কষ্ট পেয়েছি এবং আপনিই পরম করুণাময়।’ (সূরা আম্বিয়া, আয়াত ৮৩)
এভাবে চিন্তা করতে শিখলে মুমিনের জীবনে কোন কষ্টই কষ্টের মত মনে হবে না। কেননা মুমিন সর্বদা আল্লাহর দিকে মুখ করে থাকে এবং মুমিনের সকল কাজ আখেরাত ও পরকালকে মাথায় রেখেই নিবদ্ধ থাকে। তাই মুমিন কখনো কষ্টে ভেঙ্গে পড়ে না।
আরও পড়ুন
মানসিক অস্থিরতা কমাতে কিছু আমল
মহানবীর(সা.) শিখানো হাসি ও কান্না দুটি ইবাদত