November 21, 2024
ডিপ্রেশন বা হতাশা থেকে বাঁচতে যেসব আমল করবেন

ডিপ্রেশন বা হতাশা থেকে বাঁচতে যেসব আমল করবেন

ডিপ্রেশন বা হতাশা থেকে বাঁচতে যেসব আমল করবেন

ডিপ্রেশন বা হতাশা থেকে বাঁচতে যেসব আমল করবেন

জীবনের কোন সমস্যাই সমাধান ছাড়া আসে না আর সেই সকল সমস্যা মাঝেমধ্যে আমাদেরকে কঠিনভাবে ডিপ্রেশনে বা হতাশায় ফেলে দেয় । তখন সব ধরনের হতাশা আর দুশ্চিন্তায় আমাদের মন ভেঙ্গে  যায়। আমরা  নুইয়ে  পড়ি, আমরা হতাশ হই। অনেকে টেনশন সইতে না পেরে জীবন নিয়ে বাজে সিদ্ধান্ত নেয়।

কারণ যারা এক আল্লাহকে বিশ্বাস করে, যারা সঠিক পথে চলে, তারা পার্থিব লাভ, ব্যর্থতা, ক্ষতির কারণে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হতে পারে না। সামান্য দুশ্চিন্তায় ভেঙে পড়তে পারে না, খারাপ সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।হতাশা মানুষকে আল্লাহর রহমতের কথা ভুলিয়ে  দেয় । সে আল্লাহর কুদরত থেকে মনোযোগ সরাতে চায়। তাই আমরা যখন জীবনে হতাশার মুখোমুখি হই, তখন আমরা নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অনুসরণ করব। ইনশাআল্লাহ আশা করা যায়  আমরা হতাশা কাটিয়ে উঠতে পারব।

কোরআন তেলাওয়াত মগ্ন থাকুনঃ

কোরআন যেহেতু একটি ইউনিক গ্রন্থ তাই   প্রমাণিত সত্যই গ্রন্থের তেলাওয়াত এবং  অধ্যয়ন আপনাকে অবশ্যই ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি দিবে । যদি তেলাওয়াত করতে কোনরকম অসুবিধা হয়; তাহলে আপনি কোরআন এর অডিও শুনতে পারেন।  দেখবেন সময়ের ব্যবধানে আপনার ডিপ্রেশন কেটে যাচ্ছে । এবং আপনি একটি নতুন সুন্দর পৃথিবী সন্ধান পেয়ে যাচ্ছেন  । তাই বেশি বেশি কোরআন পড়ুন করুন হতাশা দুশ্চিন্তা মুক্ত জীবন গড়ুন ।

ভালো মানুষদের সাথে শেয়ার করুনঃ

বা বিপদে পড়লে হতাশায় পড়লে ভালো মানুষদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করুন  ।  তবে ডিপ্রেশনের বিষয়টি সবার কাছে ছড়িয়ে বেড়াবেন না ।  কারণ মানুষ সুযোগের অপেক্ষায় থাকে ।  এবং আপনার ডিপ্রেশনকে আপনার দুর্বলতা ভেবে ক্ষতি করার চেষ্টাও কমতি করবে না  । তাই ডিপ্রেশনে বিশ্বস্ত কোন একজন ব্যক্তিকে আপনি শেয়ার করে তার কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারেন ।  এবং জটিল কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে অবশ্যই আপনার কাছে বন্ধুকে শেয়ার করুন।   দেখবেন আল্লাহতালা তার মাধ্যমে আপনার ডিপ্রেশনকে  দূর করে দিয়ে  একটি ভালো অবস্থান দান করিবেন ।

সালাতুল হাজত পড়ুনঃ

হাদীসে উল্লেখ আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন চিন্তিত হতেন তখন তিনি নামাযে মগ্ন হতেন। আল্লাহ বলেন, ‘ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য চাও…’ – সূরা বাকারা-১৫৩

বেশি বেশি দরূদ পড়ুনঃ

হাদিসে এসেছে, হজরত উবাই ইবন কাব (রা.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার ওপর অধিকহারে দরুদ পাঠ করে থাকি। আমার সময়ের কতটুকু আপনার প্রতি দরুদ পাঠে ব্যয় করব? হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা। আমি বললাম, এক-চতুর্থাংশ সময়? তিনি বলেন, তোমার ইচ্ছা। কিন্তু যদি আরও বাড়াও তবে ভালো। আমি বললাম, অর্ধেক সময়? তিনি বলেন, তোমার যা ইচ্ছা; তবে আরও বৃদ্ধি করলে তাও ভালো। আমি বললাম, দুই-তৃতীয়াংশ সময়? তিনি বলেন, তোমার ইচ্ছা; তবে আরও বাড়ালে তাও ভালো। আমি বললাম, আমার সবটুকু সময় আপনার ওপর দরুদ পাঠে লাগাব? তিনি বলেন, তাহলে তো তোমার চিন্তামুক্তির জন্য তা যথেষ্ট হয়ে যাবে আর তোমার গোনাহ মাফ করা হবে। -(সুনানে তিরমিজি)

নবী রাসূলদের জীবনী পড়ুনঃ

নবী রাসূলরা কি পরিমান কষ্ট করেছেন।  কি পরিমাণ রোগ শোক ভোগ করেছেন । এবং কাফেরদের  দ্বারা  কতইনা  নির্যাতিত হয়েছেন ।  যখন এসব স্টাডি করবেন তখন আপনাকে কোন হতাশাই গ্রাস করতে পারবে না ইনশাল্লাহ।

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করুনঃ

বিশ্বস্ত আলেম  বা জ্ঞানীদের পরামর্শ নিন। হাদিস শরিফে আছে, “যে উপদেশ চায় সে ব্যর্থ হয় না।” -(ইবনে হিব্বান

ধৈর্য ধরুনঃ

জীবনে খারাপ সময় এলে ধৈর্য ধরুন। বিশ্বাস রাখুন, প্রভু আপনার সাথে আছেন, তিনি আপনাকে কষ্টের পরে স্বস্তি দেবেন। এবং এটাও মনে রাখবেন যে যারা প্রতিকূলতার মধ্যে ধৈর্য ধারণ করে তাদের জন্য আল্লাহ অনেক পুরস্কার রেখেছেন।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি অবশ্যই তোমাদেরকে ভয়, ক্ষুধা এবং কিছু জানমাল ও ফসলের ক্ষতির মাধ্যমে পরীক্ষা করব; আর ধৈর্যশীলদেরকে সুসংবাদ দাও-  সূরা বাকারা-১৫৫

ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিনঃ

ভালো-মন্দ যাই হোক না কেন, তা ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিন। আর  বিশ্বাস রাখুন যে একমাত্র আল্লাহই সব সমস্যার সমাধান করতে পারেন। দেখবেন, দুশ্চিন্তা , হতাশা কখনোই আপনাকে কাবু করবে না।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আল্লাহ যখন তোমাকে কষ্ট দেন, তখন তিনি ছাড়া তা উপশমকারী কেউ নেই।” আর আল্লাহ যদি আপনার মঙ্গল চান, তবে তাঁর নেয়ামত বাতিল করার কেউ নেই। (সূরা: ইউনুস- ১০৭ )

বিপদে আল্লাহকে স্মরণ করুনঃ

আল্লাহ ছাড়া কেউ বিপদ থেকে মুক্তি দিতে পারে না। তাই বিপদ, দুশ্চিন্তার সময় বেশি বেশি দোয়া করতে হবে, বিশেষ করে দুশ্চিন্তা ও মানসিক অস্থিরতা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য হাদিসে বেশ কিছু দোয়া শেখানো হয়েছে। সেই দোয়াগুলো বেশি বেশি পড়ুন।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আমি এমন একটি দুআ সম্পর্কে অবগত আছি যে, বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি পাঠ করলে আল্লাহ তার বিপদ দূর করে দেন। এটাই আমার ভাই ইউনুস (আ.)-এর দোয়া। দোয়াটি হলো—’লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জলিমিন। ‘

অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি ব্যতীত কোন সত্য আল্লাহ নেই; আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিঃসন্দেহে আমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত।

চিন্তাভাবনার পরিবর্তন করুনঃ

দুনিয়ার চাকচিক্য এবং প্রচুর সম্পদের কথা না ভেবে, আপনার চিন্তা ঘুরিয়ে দেখুন এবং নিজের থেকে কম আয়ের লোকদের অবস্থা দেখুন। ভেবে দেখুন আল্লাহ আপনাকে তার থেকে কতটা উত্তম বানিয়েছেন।

খাব্বাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত ,আমরা আল্লাহর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে অভিযোগ করলাম এ অবস্থায় যে, তিনি কাবাঘরের ছায়ায় একটি চাদরে ঠেস দিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। আমরা বললাম, আপনি কি আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবেন না? আপনি কি আমাদের জন্য দোয়া করবেন না?

জবাবে তিনি বলেন, ‘তোমাদের জানা উচিত, তোমাদের আগের মুমিন লোকেদের এই অবস্থা ছিল যে একজন মানুষকে ধরে আনা হতো, তার জন্য গর্ত খুঁড়ে তাকে তার মধ্যে পুঁতে রাখা হতো। অতঃপর তার মাথার ওপর করাত চালিয়ে তাকে দুই খণ্ড করে দেওয়া হতো এবং দেহের গোশতের নিচে হাড় পর্যন্ত লোহার চিরুনি চালিয়ে শাস্তি দেওয়া হতো। কিন্তু এই কঠোর পরীক্ষা তাকে তার দ্বিন থেকে ফেরাতে পারত না। (বুখারি)

ইস্তেগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করুনঃ

বিষণ্নতা প্রায়ই আর্থিক চাপের কারণে হয়। অতএব, আপনি যদি নিয়মিত ক্ষমা প্রার্থনা করেন তবে আল্লাহ তায়ালা আর্থিক চাপ সহ সমস্ত সমস্যা দূর করবেন এবং আপনাকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত করবেন।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আল্লাহ তার সমস্ত সমস্যা থেকে মুক্তির পথ খুঁজে দেবেন, তার সমস্ত দুশ্চিন্তা দূর করবেন এবং তাকে অকল্পনীয় উৎস থেকে রিযিক দান করবেন। (আবু দাউদ)

ভালো চিন্তা করুনঃ

আল্লাহ সম্পর্কে ভালো চিন্তা করুন। তাকে বিশ্বাস করো. আশা করি তিনি আপনাকে আপনার দুর্দশা থেকে মুক্তি দেবেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যে আল্লাহর উপর ভরসা করে, আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট। (সূরা: তালাক, আয়াত: ৩)

অন্যত্র বর্ণিত, আমি আমার বান্দাকে তার ধারণা অনুযায়ী আচরণ করি। যদি সে আমার সম্পর্কে ভাল ভাবে, তবে তা তার জন্য, এবং যদি সে আমাকে খারাপ ভাবে, তবে তা তার জন্য। (সুনানে আহমাদ)

মুসলিম হিসেবে আমরা জানি যে এই পার্থিব জীবন একটি পরীক্ষা মাত্র। আমরা বিশ্বাস করি জীবনে চলার পথে মাঝে মাঝে চিন্তা করতে হয়, কিন্তু আমরা সবসময় চেষ্টা করি যাতে আমাদের চিন্তা কখনোই অতিরিক্ত কারণে দুশ্চিন্তায় পরিণত না হয়। আর দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকার সর্বোত্তম উপায় হল আল্লাহ তায়ালার কাছে সাহায্য চাওয়া।

দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হওয়ার দুয়া-

ا اللهم إني أعوذ بك من الهم والحزن وأعوذ بك من العجز والكسل وأعوذ بك من الجبن والبخل وأعوذ بك من غلبة الدّين وقهر الرجال

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুযনি, ওয়া আউজু বিকা মিনাল আজযি ওয়াল-কাসালি, ওয়া আউজু বিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আউজু বিকা মিন গলাবাতিদ দাইনি ওয়া কহরির রিজাল।’

অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে। আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) চিন্তাগ্রস্ত অবস্থায় এই দোয়া পড়তেন। (বুখারি)

আরও পড়ুন

মন খারাপ হলে নবী-রাসুলগণের জীবনী পড়ুন, মন ভালো হয়ে যাবে

স্ত্রী, স্বামীর কোন পাশে ঘুমান সুন্নত?

শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি দ্রুত আদায় করা ইসলামী দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত

ছোট্ট জীবনের প্রতি হতাশ হবেন না ।  আপনি গোপনে আপনার বন্ধুকে, আপনার কাছের মানুষকে জিজ্ঞেস করে দেখুন । আপনার চেয়ে বেশি সুখে আছে না কষ্টে আছে ? আপনার কষ্ট গুলো অন্যের কষ্টের সাথে মেপে দেখুন আপনার কষ্ট কোন কষ্টই না । আর আপনার সুখের সাথে অন্যের সুখগুলো মিলিয়ে দেখুন অনেক মানুষ আপনার চেয়ে কম সুখী বা অনেক বেশি দুঃখী ।  তাদের এই জীবনের প্রতিট লক্ষ্য রাখেন তাহলে আপনাকে কখনোই হতাশা শেষ করে দিতে পারবেনা ।

2 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X