মশা তাড়ায় যে সকল গাছপালা
আল্লাহতালা কুরআনে বলেছেন ” তারকা রাজি এবং গাছপালা সেজদাবনত অবস্থায় রয়েছে” অর্থাৎ গাছপালা আল্লাহতালার হুকুম মতো চলে। গাছ বা উদ্ভিদ থেকেই পৃথিবীর অধিকাংশ ঔষধ তৈরি হয় । কোনটার নির্যাস থেকে পাতা থেকে, কোন গাছের ফুল থেকে, কোন গাছের ফল বা কোন গাছের কাঁটা বা গাছের যে কোন অংশ থেকে বিজ্ঞানীগণ ওষুধ তৈরি করছেন । ওইরকম কতিপয় গাছপালার এবং উদ্ভিদের পাতা ফুল বা ফলের ঘ্রাণে বিষাক্ত প্রাণী এবং মশারা পালিয়ে যায় । সেগুলি উল্লেখ করছি নিচে উল্লেখিত নিবন্ধে।
বাংলাদেশে সারা বছরই কমবেশি মশার উপদ্রব দেখা যায়। বিশেষ করে ফেব্রুয়ারি থেকে তাদের সহিংসতা অনেক বেড়ে যায়। মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া/ডেঙ্গু জ্বর সহ বিভিন্ন রোগে মানুষ এখন প্রায়ই মারা যাচ্ছে। মশা নিরোধক বাজার থেকে দামি ক্ষতিকর মশার কয়েল/স্প্রে কিনে মশা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাসায়নিক ব্যবহার না করে অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর ও পরিবেশবান্ধব মশা নিরোধক উদ্ভিদ তথা গাছপালা চাষ করে মশা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
নিচে উল্লিখিত গাছপালা বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের ঝোপঝাড়ে, নদী ও সমুদ্রের তীরে, রেললাইনের ধারে প্রাকৃতিক জন্মে এরকম মশা নিরোধক কিছু গাছের বিবরণ দেওয়া হল ।
গাঁদা বা মেরি গোল্ডঃ
গাঁদা ফুলকে বাংলায় গেন্দা ফুলও বলা হয়, যা শোভাময় বর্ডার উদ্ভিদ নামে পরিচিত। মেরি গোল্ড একটি বার্ষিক উদ্ভিদ। উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য উর্বর মাটি এবং পূর্ণ সূর্যের তাপ প্রয়োজন। একটি উদ্ভিদ একটি বীজ থেকে বৃদ্ধি পায়। আমাদের দেশের যেকোনো নার্সারী থেকে এই গাছের চারা সংগ্রহ করা যায়। এই গাছ বাগানের সৌন্দর্য বাড়ায়। গদা ফুলের তীব্র গন্ধ মশাদের কাছে আসতে বাধা দেয়। এই গাছটিকে টবে চাষ করে বাড়ির জানালা/দরজার কাছে রাখলে এই গাছের ফুলের গন্ধ ঘরে মশা প্রবেশ করতে বাধা দেয়। এই গাছের ফুল টমেটো গাছের কীটপতঙ্গ প্রতিরোধক। টমেটো ক্ষেতের চারপাশে এই ফুলের চারা চাষ করলে টমেটো পোকার আক্রমণও কম হয়।
সিট্রোনিলাঃ
এর বৈজ্ঞানিক নাম Citronilla winterianas. সিট্রোনিলা গাছের গন্ধ মশাকে দূরে রাখে। মশার কয়েলে ব্যবহৃত সিট্রোনেলা উপাদানের চেয়ে জীবন্ত উদ্ভিদের গন্ধ অনেক বেশি কার্যকর। সিট্রোনেলা একটি বহুবর্ষজীবী ভেষজ এবং গুল্ম। সিট্রোনেলা৫-৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। বাংলাদেশের মাটি, আবহাওয়া ও জলবায়ু সিট্রোনিলা উৎপাদনের জন্য উপযোগী। বাংলাদেশের যে কোনো জায়গায় যেখানে পানি নেই সেখানে এই গাছের চাষ করা যায়। সিট্রোনেলা সামনের বাগানে এবং বড় টবে জন্মানো যায়। টবে চাষ করা এবং টবটি বাড়ির জানালা ও দরজার পাশে বারান্দায় রাখলে সিট্রোনিলা গাছের গন্ধ ঘরে মশা প্রবেশ করতে বাধা দেয়।
হর্সমিন্টঃ
হর্সমিন্ট বেবলাম নামেও পরিচিত। হর্সমিন্ট বহুবর্ষজীবী এবং সিট্রোনেলার মতো এর একটি শক্তিশালী ঘ্রাণ রয়েছে যা মশা তাড়ানোর জন্য কার্যকর। হর্সমিন্ট গাছগুলি অত্যন্ত দ্রুত বর্ধনশীল এবং খরা সহনশীল। হর্সমিন্ট ২-৩ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। হর্সমিন্ট গাছ শুষ্ক বালুকাময় মাটিতে ভাল জন্মে এবং লবণাক্ততা সহনশীল। এই গাছপালা সমুদ্রের তীরে জন্মায় এবং সমুদ্রের তীর থেকে সংগ্রহ করা যায়। এই উদ্ভিদ বীজ থেকে বৃদ্ধি পায়। বাগানে এবং টবে জন্মানোর পাশাপাশি জমিতে সরাসরি বীজ বপন করা যায়। মশা প্রতিরোধ করার জন্য টবে জন্মানো গাছগুলি করিডোর, জানালা এবং দরজায় স্থাপন করা যেতে পারে। হর্সমিন্ট এর শুকনো পাতা থেকে ভেষজ চা তৈরি করা যায়। এর ফুল খুব সুন্দর যা বাগানে মৌমাছি , প্রজাপতিকে আকর্ষণ করে বাগানের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয়।
এজিরেটমঃ
Ageratum Flosch Flower নামেও পরিচিত। এই গাছের ফুলের গন্ধ মশাকে দূরে রাখে। Ageratum উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত রস কৌমারিন নামক মশার কয়েল/স্প্রে তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এজিরেটম এক বছর বেঁচে থাকে। এজিরেটম ফুলের গাছগুলি ৮-১৮ ফুট উচ্চতায় পৌঁছায়। এই গাছের ফুল সাধারণত নীল রঙের হয়। কিন্তু অন্যান্য রংও দেখা যায়। এই গাছের বৃদ্ধির জন্য খুব উর্বর জমির প্রয়োজন হয় না। যে কোনো মাটিতে এই উদ্ভিদ জন্মানো যায়। এই গাছটি ছায়াময় জায়গায়ও জন্মে। এই গাছটিকে টবে বাড়ানো এবং জানালা ও দরজার পাশে ঘর/বারান্দায় রাখলে মশা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
ক্যাটনিপঃ
ক্যাটনিপ একটি খুব কার্যকরী প্রাকৃতিক মশা তাড়াক। যা গবেষণায় প্রমাণিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম Nepita cataria উদ্ভিদ খুব সহজে জন্মায়। এই গাছটি যে কোনও মাটি এবং জলবায়ুতে জন্মায়। এই উদ্ভিদ বহু বছর বেঁচে থাকে এবং এটি একটি ঔষধি গাছ। এই গাছ থেকে নির্গত গন্ধ মশাদের কাছে আসতে বাধা দেয়। গাছটি বাগানে এবং টবে জন্মানো যেতে পারে। গাছটিকে টবে বাড়ানো এবং বাড়ির বারান্দায়, জানালা-দরজার পাশে বা ঘরে রাখা একটি প্রাকৃতিক মশা নিরোধক।
আরও পড়তে
শরীরের গন্ধ শনাক্ত করে মশারা কামড় দেয়
উল্লেখিত গাছ বাংলাদেশের মাটিতে সহজেই জন্মানো যায়। এদেশের মাটি ও জলবায়ু উদ্ভিদ জন্মানোর জন্য খুবই উপযোগী। বাণিজ্যিকভাবে একক নার্সারি তৈরি করে এসব গাছের বাজারজাত করা গেলে খুবই লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হবে। এর ফলে একদিকে যেমন মশার কয়েল/স্প্রে আমদানি/উৎপাদন হ্রাস পাবে অন্যদিকে কয়েল/স্প্রে-এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট রোগ-ব্যাধি এড়ানো যাবে, যা স্বাস্থ্যবান্ধব ও পরিবেশবান্ধব।
গাছপালা রোপন করি পৃথিবীকে সুন্দর সুন্দর রাখি। আমার আশপাশ রাখি রোগমুক্ত। এবং বিষাক্ত প্রাণী মুক্ত । আর প্রতিদিন পালন করি গাছপালার সৃষ্টিকর্তার হুকুমগুলো।
2 Comments