মানবদেহের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক প্রাণী হল মশা
যে সমস্ত প্রাণীর আক্রমণ বা কামড় দিয়ে মানুষ মারা যায় তার শীর্ষে রয়েছে মশা। বেশিরভাগ মানুষ মশার কামড়ের কারণে সৃষ্ট রোগে মারা যায়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, মশা বিভিন্ন রোগ ছড়ায় কিন্তু যেটা আমরা কল্পনাও করতে পারি না তা হল আমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর কোন প্রাণী থাকলে তা হল মশা। বিবিসি ওয়াইল্ডলাইফ ম্যাগাজিন বিবিসি সায়েন্স ফোকাসের নিবন্ধ অনুসারে, বিভিন্ন রোগে মানুষের মৃত্যুর জন্য মশা দায়ী। এই ক্ষুদ্র উড়ন্ত প্রাণীদের কামড়ে ছড়িয়ে পড়া রোগগুলি বছরে ৭৫০০০ মানুষকে হত্যা করে। আর এসব মৃত্যুর একটি বড় অংশই ম্যালেরিয়াজনিত কারণে। আফ্রিকায় এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি। বিশ্বের ম্যালেরিয়া সংক্রমণের ৯৫ % এবং মৃত্যুর ৯৬ % আফ্রিকায়। এই ছোট প্রাণীর অন্যান্য প্রধান রোগের বাহকগুলির মধ্যে রয়েছে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, হলুদ জ্বর, জিকা, ওয়েস্ট নাইল ভাইরাস ইত্যাদি।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ডেঙ্গু একটি বড় হুমকি হয়ে উঠেছে। এডিস মশার কারণে ডেঙ্গু জ্বরে এ বছর বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। প্রতিদিন অনেকেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। অবস্থা এমন যে হাসপাতালগুলোতে খালি রুমও নেই।
এডিস মশা ডেঙ্গুর ভাইরাস বহন করে। এই মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বর হতে পারে। সাধারণত বর্ষাকালে ডেঙ্গু জ্বর হয় এমন ধারণার পরিবর্তন হচ্ছে। এখন কেউ কেউ সারা বছরই ডেঙ্গু জ্বরে ভুগছেন। সারা বছরই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে ডেঙ্গু রোগী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন বিশেষ কোনো ঋতুতে সতর্ক হওয়ার দরকার নেই। ডেঙ্গু জ্বর থেকে মুক্তি পেতে হলে সারা বছরই সতর্ক থাকতে হবে।
আরও খবর
ডেঙ্গু রোগীর করণীয় ও প্লাটিলেট কমতে শুরু হলে যা খাবেন
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা জানান, ডেঙ্গু জ্বর এখন সারা বছরই হয়। তবে ডেঙ্গু মৌসুমে তা বেশি হয়। বছরের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এ রোগের প্রকোপ বেশি থাকে। যদিও অনেকেই বলছেন, বর্ষাকালে ডেঙ্গু জ্বর বেশি হয়। আসল কথা হলো, বর্ষাকালে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে গেলে রোগের বিস্তার বেড়ে যায়। মাঝে মাঝে বৃষ্টি হলে ডেঙ্গু বেশি হয়। আর একটানা বৃষ্টি হলেই ভেসে যায় ডেঙ্গুর লাভা। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় ডেঙ্গু নিয়ে গবেষণা চলছে। ডেঙ্গু বহনকারী এডিস মশা সকাল, সন্ধ্যা, সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয়ের সময় বেশি আক্রমণ করে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে দিনরাত যে, চব্বিশ ঘন্টাই কামড়াচ্ছে ।
ডেঙ্গু থেকে নিরাপদ থাকতে
- সদা সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ রাখুন
- ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় না থাকার চেষ্টা করুন
- বাড়িতে মশা নিরোধক ব্যবহার করুন
- বাইরে যাওয়ার সময় ফুলহাতা পোশাক পরুন
- মোজা পরুন
- জানালায় নেট লাগান বা দরজা-জানালা বন্ধ রাখুন
- উপলব্ধ হলে এয়ার কন্ডিশন ব্যবহার করুন
- ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা দিলে ডাক্তার দেখান
সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকরা বলেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ে নাগরিকদের সচেতন হতে হবে। এডিস মশার কারণে এই রোগ হয়। এটি নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে সহজ উপায় হল ঘরটি ঝকঝকে পরিষ্কার রাখা। ছাদ, ফুলের টব, ফুলদানি এবং আশপাশ মুছে পরিষ্কার রাখতে হবে। বাড়ির কোথাও আবর্জনা জমতে দেওয়া উচিত নয়। কারণ, এডিস মশা মূলত ঘরেই পাওয়া যায়। ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার আগে বালতিতে রাখা পানি এবং ফ্রিজের পেছনে জমে থাকা পানি নিয়মিত ফেলে দিতে হবে।
চিকিৎসকরা বলছেন, রোগের চেয়ে প্রতিরোধই ভালো। ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধ করতে হলে এর বাহক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আর মশা ঠেকাতে প্রথমেই মশা জন্মাতে পারে এমন জায়গা প্রতিরোধ করতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, “ডেঙ্গু হচ্ছে এবং এর অনেক ধরনও আছে। এটি যাতে বাড়তে না পারে সেজন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। এই রোগ প্রতিরোধে ব্যক্তি পর্যায়ে ও সরকারের সচেতনতা খুবই জরুরি। নিজের ঘর পরিষ্কার রাখুন। মশা যেন কখনও কামড়াতে না পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। দিনে ঘুমালেও মশারি টাঙিয়ে দিতে হবে বা স্প্রে করতে হবে।শিশুরা হাফপ্যান্টের বদলে ফুল প্যান্ট পরবে।মশা যেন কোনোভাবেই কামড়াতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে এই উদ্যোগ নেওয়া উচিত। কোনো স্তরই যাতে মশার বংশ বিস্তার করতে না পারে।
‘এই রোগের সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। এটি একটি মশাবাহিত রোগ। ডেঙ্গুর উপসর্গের চিকিৎসা করা উচিত। ডেঙ্গু হলে শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। ডাক্তাররা ব্যথার চিকিৎসা করেন। কোনো কারণে রক্তে প্লেটলেটের মাত্রা কম হলে এই প্লাটিলেট বাড়ানোর জন্য চিকিৎসা দিতে হবে। একই সঙ্গে জ্বরের চিকিৎসাও চালিয়ে যেতে হবে। শরীরে তরলের মাত্রা ঠিক রাখতে হবে। নিয়ম মেনে প্রচুর পানি খেতে হবে।