November 22, 2024
গীবত: পরিণাম ভয়াবহ

গীবত: পরিণাম ভয়াবহ

গীবত: পরিণাম ভয়াবহ

গীবত: পরিণাম ভয়াবহ

গীবত অনর্থক সময় নষ্ট করার একটি শয়তান প্রণোদিত অন্যতম পদ্ধতি এমন একটি ব্যাপার;  যেটা করলে শুধু ভালই লাগে।  কিন্তু কোন উপকারে আসে না।  আর বড় উপকার হইল এই যে গীবত আপনার মেধা থেকে ভালো ধারণা এবং ভালো কিছুর পরিচর্যাকে ধীরে ধীরে উঠিয়ে নিয়ে যাবে । এবং যাকে আপনি গীবত করছেন আপনার কৃত অন্যান্য ভালো আমলগুলো তার আমল নামায় লেখা হয়ে যাবে।  আর যার নামে গীবত করছেন তার আমলনামা থেকে  খারাপ অনেক আমলই আপনার আমলনামায় যোগ হয়ে যাবে।  আর সেটা অবশ্যই সত্য। আজকাল মানুষ নিজের অজান্তেই গীবত করে ফেলে। কিন্তু এর শাস্তি কি জানেও না জানার অবস্থায় থাকে।  আজ আমরা গীবত কি এবং এর পরিণতি কি তা   নিয়ে আলোচনা করব।

গীবতের সংজ্ঞা: “গীবত” মানে  অজান্তে একজন ব্যক্তির দোষ অন্য ব্যক্তির কাছে উল্লেখ করা।

অর্থাৎ গীবত হচ্ছে কোনো ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে তার ব্যাপারে  এমন কিছু উল্লেখ করা যা সে অপছন্দ করে, যদিও তা তার মধ্যে বিদ্যমান। ‘

গীবতের ভয়াবহতা সম্পর্কে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন,

وَ لَا یَغۡتَبۡ بَّعۡضُکُمۡ بَعۡضًا ؕ اَیُحِبُّ اَحَدُکُمۡ اَنۡ یَّاۡکُلَ لَحۡمَ اَخِیۡهِ مَیۡتًا فَکَرِهۡتُمُوۡهُ ؕ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ تَوَّابٌ رَّحِیۡمٌ

‘এবং একে অপরের গীবত করো না। তোমাদের কেউ কি পছন্দ করবে যে সে তার মৃত ভাইয়ের গোশত খাবে? নিশ্চয় তোমরা এটা ঘৃণা করবে। আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম করুণাময়।’ (সূরা: হুজরাত, আয়াতাংশ : ১২)

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তুমি কি জানো গীবত কী? সাহাবিরা জবাব দিল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, গীবত মানে তোমার ভাই সম্পর্কে এমন কথা বলা যা সে অপছন্দ করে। জিজ্ঞেস করা হলো, যা বলি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে তাহলে সেটাও কি গীবত? রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, “তুমি যা বলো তা যদি তার মধ্যে থাকে তাহলে তা গীবত , আর তুমি যা বললে তার মধ্যে না থাকলে তা অপবাদ।” (মিশকাত)

গীবত জাহান্নামের শাস্তির কারণ – রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন – ‘মিরাজের সময় আমি এমন কিছু লোকের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম যাদের নখ ছিল পিতলের, এবং তারা তা দিয়ে তাদের মুখমন্ডল ও স্তন ছিঁড়ে ফেলছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে  জিব্রাইল এরা কারা? তিনি বলেন, এরাই মানুষের মাংস খেয়ে তাদের মর্যাদা নষ্ট করত। ‘ (অর্থাৎ তারা মানুষের গীবত করত)

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন- একদা আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে ছিলাম। এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি উঠে চলে গেল। একজন তার চলে যাওয়ার পর তার সমালোচনা করেছেন। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, ,তোমার দাঁত খিলাল কর। লোকটি বলল, কি কারণে দাঁত খিলাল করব? আমিতো কোন গোশত ভক্ষণ করিনি। তখন তিনি বললেনঃ নিশ্চয়ই তুমি তোমার ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করেছ অর্থাৎ ‘গীবত’ করেছ।

গীবত কবরে শাস্তি:- একবার রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুটি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, হঠাৎ তিনি থামলেন এবং বললেন, এই দুই কবরবাসীকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কোনো গুরুতর অপরাধের জন্য তাদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না (যা থেকে বেঁচে থাকা তাদের জন্য সহজ ছিল)। এদের একজনকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, গীবত করার কারণে এবং অন্যজনকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে পেশাবের ব্যাপারে অসতর্কতার কারণে।

আরও খবর

ইসলামী কথনঃ রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় গুরুতর অপরাধ

আল কুরআনের আলোঃ কাউকে বিকৃত নামে ডাকা পাপ

গীবতের ভয়াবহতা এবং এর থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়ঃ

গীবতের অপরাধ থেকে মুক্তি পাওয়া খুবই কঠিন কাজ। কারণ আল্লাহ ব্যভিচারের মতো গুরুতর অপরাধ ক্ষমা করবেন; কিন্তু গীবতের অপরাধ ক্ষমা করবেন না। গীবতের ভয়াবহতা এবং তা থেকে পরিত্রাণের উপায় হাদিসে নিম্নরূপ উল্লেখ করা হয়েছে-

আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘গীবত বা অপবাদ ব্যভিচারের চেয়েও গুরুতর অপরাধ।’ সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! গীবত কিভাবে ব্যভিচারের চেয়ে গুরুতর অপরাধ হতে পারে?’

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যদি কোনো ব্যক্তি ব্যভিচার করার পর আল্লাহর কাছে তাওবা করে, আল্লাহ তাওবা কবুল করেন। কিন্তু গিবতকারী ব্যক্তিকে যে পর্যন্ত ওই ব্যক্তি (যার গিবত করা হয়েছে) ক্ষমা না করে; ততোক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন না।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ)

গীবত করার গুনাহ মূলত মৌখিকভাবে এবং অন্যকে বলার মাধ্যমে করা হয়। তাই এই পাপ থেকে বাঁচতে সবার উচিত যথাসম্ভব ভালো কথা বলা। নইলে চুপ থাকা উচিত। কেননা চুপ থাকাই মূলত মানুষকে গীবত থেকে বাঁচাতে পারে। যখন কোন কথা নেই, তখন গীবত করারও   কোন সম্ভাবনা নেই।

রাসুলুল্লাহ কারীম (সাঃ) বলেছেন-

যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনে বিশ্বাস করে, সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে

অর্থ: ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে তার উচিত হয় ভালো কথা বলা নয়তো চুপ থাকা।’ -(সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)

অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন:

من يضمن لي ما بين لحييه وما بين رجليه أضمن له الجنة

অর্থ: ‘যে ব্যক্তি তার দুই চোওয়ালের মাঝের অঙ্গ (মুখ) এবং দুই রানের মধ্যবর্তী অঙ্গ (লজ্জাস্থান) হেফাজতের জামিনদার হবে আমি তার জন্য জান্নাতের দায়িত্ব নি জামিনদার হব।’ (সহিহ বুখারি)

অন্য হাদিসে রাসূল (সা.) বলেছেন-

الْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ الْمُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِه وَيَدِه

অর্থ: ‘মুসলিম সেই ব্যক্তি যার মুখ ও হাত থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে।’ (সহীহ বুখারী,সহীহ মুসলিম)

অন্য হাদিসে বলা হয়েছে-

এক সাহাবী বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল, নাজাত কি?

অর্থঃ উকবা ইবনে আমের (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) মুক্তি কি? তিনি বললেন, মুখ চেপে রাখো।  তোমার  ঘর আপনার জন্য প্রশস্ত হোক। আর তোমার ভুলের জন্য কাঁদো।’ (সুনানে তিরমিযী,)

যদি কেউ গীবত করার পর মারা যায় বা দূরবর্তী অঞ্চলে চলে যায় বা তার হদিস জানা না থাকে তবে তার গুনাহ মাফের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা উচিত।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “নিঃসন্দেহে গীবতের একটি ক্ষতিপূরণ হল, আপনি যার গীবত করতেন তার জন্য দোয়া করুন -হে আল্লাহ! তুমি আমার ও (যার গিবত করা হয়েছে) তার গোনাহ মাফ করে দাও।’ (মিশকাত)

নিজে গীবত বন্ধ রাখুন । অন্যকে আপনার সামনে গীবত করলে তাকে থামিয়ে দিন।  না পারলে  পাঁশ   কাটিয়ে চলে আসুন।  থাকুন চুপ । এরপরেও গীবত বা পরনিন্দা কখনোই করবেন না।  এটাই হোক আমাদের আজকের শপথ।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X