January 30, 2025
১ লাখ ২০ বছর আগের রেকর্ড ভাঙল বিশ্ব তাপমাত্রা

১ লাখ ২০ বছর আগের রেকর্ড ভাঙল বিশ্ব তাপমাত্রা

১ লাখ ২০ বছর আগের রেকর্ড ভাঙল বিশ্ব তাপমাত্রা

লাখ ২০ বছর আগের রেকর্ড ভাঙল বিশ্ব তাপমাত্রা

একদিনের মধ্যেই ভেঙে গেল বিশ্বের ‘উষ্ণতম’ দিনের রেকর্ড। গত সোমবার (৩ জুলাই) গড় তাপমাত্রার নিরিখে রেকর্ডে ‘উষ্ণতম দিন’ ছিল। এই দিনে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ১৭.১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়। মঙ্গলবার (৪ জুলাই) বৈশ্বিক তাপমাত্রা আরও বেড়েছে। এই দিনে গড় তাপমাত্রা ১৭.১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে বৃদ্ধি পায়। যা আগের দিনের চেয়ে ০.১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। এভাবে ১ লাখ ২০ বছর আগের রেকর্ড ভাঙল বিশ্ব তাপমাত্রা।

মার্কিন আবহাওয়া পূর্বাভাস সংস্থা ন্যাশনাল সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল প্রেডিকশন (এনসিইপি) বুধবার (৫ জুলাই) এই তথ্য জানিয়েছে।

উষ্ণতম দিনের এই রেকর্ডটি যন্ত্র দ্বারা তাপমাত্রা রেকর্ডিং এবং স্যাটেলাইট দ্বারা তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ শুরু হওয়ার মাত্র একদিনের মধ্যে ভেঙে যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামনে এমন অস্বাভাবিক তাপমাত্রা দেখা যেতে পারে। মঙ্গলবার সর্বোচ্চ তমপাত্রের নতুন বিশ্বরেকর্ড আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই আবার ভেঙে যেতে পারে।

সোমবারের আগে, রেকর্ডে বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণতম দিনটি আগস্ট ২০১৬  সালে  হয়েছিল। সেই বছরের একদিনে, বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ১৬.৯২  ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছিল। প্রায় সাত বছর পর আবার দেখা যাচ্ছে অসহনীয় গরম।

জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা নিশ্চিত করেছে যে অস্বাভাবিক আবহাওয়া এল নিনো আবার ফিরে এসেছে।  বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, মানব-সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক তাপমাত্রা এবং এল নিনোর সংমিশ্রণে পৃথিবী সামনে আরও অসহনীয় গরমের দিন দেখতে পারে।

ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের জলবায়ু বিজ্ঞানের প্রভাষক ডাঃ পাওলো সিপি বলেছেন, এল নিনোর প্রভাব এখনও শীর্ষে ওঠেনি এবং উত্তর গোলার্ধ পুরো গ্রীষ্মে ছিল। তাই আগামী দিনে আবার রেকর্ড ভাঙলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

জার্মানির লাইপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় বিকিরণের গবেষক ডঃ কার্স্টেন হোস্টেন বলেছেন যে আগামী দিনে তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে, তবে যেহেতু বিশ্বের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা জুলাইয়ের শেষে, তাই সামনে আরও উষ্ণ দিন থাকতে পারে।

তিনি আরও বলেন, জুলাই মাসে রেকর্ডে সবচেয়ে উষ্ণ হবার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি ১২০,০০০ বছর আগে ইমিয়ান পিরিয়ডের পর থেকে ‘এখন পর্যন্ত’ সবচেয়ে উষ্ণ মাস হবে।

এই গড় তাপমাত্রার রেকর্ড ক্লাইমেট রিঅ্যানালাইজার সার্ভিসের ডেটা থেকে আসে। এটি মেইন বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু পরিবর্তন ইনস্টিটিউট দ্বারা তত্ত্বাবধান করা হয়। সংস্থাটি NCEP এর জলবায়ু পূর্বাভাস সিস্টেম দ্বারা সরবরাহ করা গড় দৈনিক তাপমাত্রা পর্যালোচনার পর করেছে।

বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে তাপপ্রবাহ অনুভূত হচ্ছে। উত্তর আমেরিকায় আনুষ্ঠানিকভাবে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৫৬.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা ক্যালিফোর্নিয়ার ডেথ ভ্যালিতে ১৯১৩ সালে রেকর্ড করা হয়েছিল।  আফ্রিকার উষ্ণতম তাপমাত্রা ৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস – যা ১৯৩১ সালে তিউনিসিয়ার কেবলিতে রেকর্ড করা হয়েছিল। এশিয়ার উষ্ণতম রেকর্ড গড়েছে ইরানে। এর আগে ২০১৭ সালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৫৪ ডিগ্রি।

১১ আগস্ট, ২০২১-এ ইউরোপের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ইতালীয় দ্বীপ সিসিলিতে যা ছিল ৪৮.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২২ জুলাই, ২০২২ তারিখে, যুক্তরাজ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪০.২ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আরও পড়ুন

সৌদি আরবে সামরিক পদে নারীদেরও নিয়োগ দেওয়া হবে
বিখ্যাত গায়িকা লেডি গাগার কুকুর হত্যা, যুবকের ২১ বছরের জেল

২০২০  সালে, অ্যান্টার্কটিকার সেমুর দ্বীপে সর্বোচ্চ ২০.৭ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) মতে, গত ৫০ বছরে অ্যান্টার্কটিক উপদ্বীপে তাপমাত্রা প্রায় ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে।

গত সোমবার (৩ জুলাই) গড় তাপমাত্রা পৃথিবীর ইতিহাসে নতুন রেকর্ড গড়েছে। গড় বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১৭.০১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে এই রেকর্ড গড়েছে। আগের রেকর্ড ছিল ১৬.৯২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রা আগস্ট ২০১৬ এ একদিনে দেখা গিয়েছিল। এই তথ্য জানিয়েছে ইউএস ন্যাশনাল সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল প্রেডিকশন ।

বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন যে আগামী কয়েক বছরে প্রথমবারের মতো উষ্ণায়ন বিশ্বের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। তারা বলছে যে ২০২৭ সালের মধ্যে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাওয়ার ৬৬ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে।

মানুষের দৈনন্দিন কাজে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ এবং চলতি বছরের গ্রীষ্মকালে আবহাওয়ার ধরণ পরিবর্তনের সম্ভাবনার কারণে বিজ্ঞানীরা এ আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।

এখন গবেষকরা বলছেন যে,আগামী ২০২০ বছরের জন্য বৈশ্বিক তাপমাত্রা অবশ্যই ১.৫  ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে হবে৷

এভাবে তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে একসময় এন্টারটিকা মহাদেশ গলে পাশের মহাদেশ গুলো ডুবে যেতে পার্আলে। আর হারিয়ে যেতে পারে পৃথিবী থেকে মহাদেশ গুলোর কারিগরি সকল ব্যবস্থা।  বিজ্ঞানীরা  আশংকা করছেন আগামী ৫০ বছর বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়তেই থাকবে কমার কোন সম্ভাবনা নাই।  এবং এই ক্রমান্বয়ে বেড়ে যাওয়া সকল মহাদেশেই হবে। তাই মানব সৃষ্ট কার্বনসহ সকল অপদার্থিক কার্যকলাপ থেকে মানুষকে দূরে থাকার আহ্বান জানান বিজ্ঞানীগণ। এ ব্যাপারে কার্বন নিঃসরণকারী উন্নত দেশগুলোর আরো সতর্কতা প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X