পরিবারের সদস্যদের আনন্দ দেওয়া মহানবীর সুন্নত
একটি মুসলিম পরিবার ছোট-বড় নির্বিশেষে সকল সদস্যের প্রতি শ্রদ্ধা,ভালোবাসা-স্নেহ এবং সহানুভূতিশীল আচরণ দাবি করে। বড়রা ছোটদের স্নেহের সাথে মানুষ হিসেবে লালন-পালন করবে। আর ছোটরা বড়দের সম্মান করবে এবং তাদের আনুগত্য করবে। ইসলামিক পরিবারে, শিশুদের সামাজিক মানবিক গুণাবলী যেমন প্রেম, সহানুভূতি, ভক্তি, উত্তম আচরণ, সহানুভূতি,উদারতা, ত্যাগ ইত্যাদিতে প্রশিক্ষিত করা হয়। পারিবারিক জীবনে নৈতিক চরিত্র গঠন এবং তরুণ-বৃদ্ধ সকল সদস্যের শ্রেষ্ঠত্বের বিশেষ সুযোগ রয়েছে। শিশুকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার এটাই শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান। পরিবারের সেই সাথে পরিবারের সদস্যদের আনন্দ দেওয়া সুন্নত সেটাও ইসলামে পরিবারের শিক্ষার অন্যতম বিষয়।
ইসলামে পরিবারের গুরুত্ব অনেক বেশি। কারণ যে সকল মানুষ বাহিরে অনেক ভালো থেকে পরিবারের প্রতি দুর্ব্যবহার করে, তাদেরকে রাসুল সাঃ হুঁশিয়ারি দিয়ে গেছেন। এবং তিনি বলেছেন “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যিনি তার পরিবারের কাছে উত্তম”। এবং এই মর্মেই বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত, মানুষের সকল কর্ম সমূহের দিক নির্দেশক; মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পরিবারের প্রতি কিভাবে আনন্দ দিতে হয় তা বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে আমাদেরকে শিখিয়ে দিয়ে গেছেন।
আরও পড়ুন
মন খারাপ হলে নবী-রাসুলগণের জীবনী পড়ুন, মন ভালো হয়ে যাবে
খাওয়ার পর মিষ্টিমুখ করা কি সুন্নাত?
পরিবার হলো ভালোবাসা, স্নেহ ও ভালোবাসার ভিত্তি। সুখের জন্য পরিবারের সদস্যদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি আদর্শ পরিবার গঠনের জন্য তাদের সর্বদা শাসন করতে হবে না; বরং কখনো কখনো হালাল উপায়ে তাদের আনন্দ দেওয়া সুন্নত। রাসুল (সাঃ) যেমন পরিবারের সদস্যদের নতুন নতুন জিনিস শিখাতেন, তেমনি তাদের সাথেও বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করতেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক পরিবারকে আনন্দদানের কতিপয় ঘটনা নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
কন্যা ও জামাইকে আনন্দ দেওয়া:
রাসুল (সা.) কখনো কখনো কথার মাধ্যমে কন্যা ও জামাইকে আনন্দ দিতেন। সাহল ইবনে সাদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ফাতেমা (রাঃ)-এর ঘরে এলেন; কিন্তু আলী (রা.)-কে বাড়িতে পাননি।
তিনি ফাতিমা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার চাচাতো ভাই কোথায়? তিনি বলেন, আমার ও তার মধ্যে ঝগড়ার কারণে সে আমার প্রতি অভিমান করে বাইরে চলে গেছেন। সে দুপুরের বিশ্রামও নেয়নি। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এক ব্যক্তিকে বললেন, দেখ সে কোথায় আছে? তিনি ওই ব্যক্তিকে (আলী রা.) খুঁজে পেলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.), সে মসজিদে শুয়ে আছে । আল্লাহর রাসুল (সা.) এলেন, তখন আলী (রা.) কাত হয়ে শুয়ে ছিলেন,
তাঁর শরীরের এক পাশের চাদর পড়ে গেছে এবং শরীরে মাটি লেগেছে। আল্লাহর রাসুল মাটি ঝেড়ে দিতে দিতে বলেন,ওঠ হে আবু তুরাব! উঠ হে আবু তুরাব(মাটির পিতা)! (বুখারি)
উপরোক্ত হাদিসে নবী (সা.) তার মেয়েকে বললেন, ‘তোমার চাচাতো ভাই কোথায়?’বলা এবং আলী (রা.)-কে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে ‘আবু তুরাব’ বা মাটির পিতা বলার অর্থও ছিল তার মেয়েকে খুশি করার জন্য।
স্ত্রীকে আনন্দ দেওয়া:
রাসুল (সাঃ)ও তাঁর স্ত্রীদের খুশি রাখতে পছন্দ করতেন। তিনি এমন কাজ করা ঘৃণা করতেন যা তাদের সুখ নষ্ট করবে। আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমার বান্ধবীরাও আমার সাথে খেলা করত।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ঘরে প্রবেশ করলে তারা পালিয়ে যায়।তখন তিনি তাদের ডেকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিতেন এবং তারা আমার সঙ্গে খেলত। (বুখারি, হাদিস : ৬১৩০)
এমনকি রাসুল (সা.) হযরত আয়েশা (সা.)কে খুশি করার জন্য একটি দৌড়ও দিয়েছিলেন। আয়েশা (রাঃ) বলেন, তিনি এক সফরে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে ছিলেন। তিনি বলেন, আমি তার সাথে দৌড়ে তার সামনে এগিয়ে গেলাম। তারপর আমি শারীরিকভাবে একটু স্থুল হয়ে যাওয়ার পর তাঁর সঙ্গে আবারও দৌড় প্রতিযোগিতা করলাম, এবার তিনি আমাকে পিছে ফেলে দিলেন, বিজয়ী হলেন, আর তিনি বলেন, এই বিজয় সেই বিজয়ের প্রতিশোধ। (আবু দাউদ)
নাতি-নাতনিদের আনন্দ দেওয়া:
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “একবার আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে এশার সালাত আদায় করছিলাম। রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন সিজদা করতেন, তখন হাসান ও হুসাইন তার পিঠে লাফিয়ে পড়তেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) সিজদা থেকে উঠার সময় হাত দিয়ে তাদের নামাতেন। তিনি আবার সিজদা করলে তারাও পিঠের উপর উঠত। এভাবে তিনি সালাত শেষ করলেন। (মুসনাদে আহমাদ)
এভাবে অন্যান্য হাদিসেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিবারের প্রতি আনন্দ দেয়ার অনেক ঘটনা বর্ণিত আছে । তাই ছোটখাটো ঘটনায় পরিবারের প্রতি না রেগে, তাদেরকে আনন্দ দেওয়া অবশ্যই আমাদের কর্তব্য।যা আমাদের নবী নিজে করে দেখিয়েছেন । আল্লাহ আমাদের সকলকে রাসূল(সাঃ)অনুকরণে পরিবারের প্রতি সদাচরণ করার ও তাদের সাথে আনন্দমূলক ব্যবহার করার তৌফিক দান করুন,আমিন।
2 Comments