জমজমের পানি
জমজমের কূপ (আরবি: زمزم) আল্লাহর কুদরতের এক অপূর্ব নিদর্শন। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ও বিশুদ্ধ পানির কূপ। এই পানি হাজার হাজার বছর ধরে লাখো পিপাসার্ত তীর্থযাত্রীর তৃষ্ণা মেটাচ্ছে। জমজম হল হযরত ইসমাইল (আ.)-এর পুত্র হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর স্মারক কূপ। জমজমের পানি পান করা মুস্তাহাব, বিশেষ করে যারা হজ ও ওমরা পালন করেন এবং সাধারণভাবে বিশ্বের সকল মুসলমানের জন্য। সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে যে, নবী (সা.) নিজে জমজমের পানি পান করেছেন। (সহীহ বুখারী)
জমজম মক্কার মসজিদ আল-হারামের ভিতরে অবস্থিত একটি কূপ। এটি কাবা থেকে ২০মিটার (৬৬ ফুট) পূর্বে অবস্থিত। মসজিদুল হারামে আসা লোকজন এখান থেকে পানি পান করে। জমজম কূপটি বিশ্বের প্রাচীনতম সক্রিয় কূপ বলে মনে করা হয়, যেখানে পাঁচ হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে অবিরাম পানি প্রবাহিত হয়ে আসছে।
ইসলামের ইতিহাসে জমজম কুপের উৎপত্তিঃ হযরত ইব্রাহিম তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী হাজেরা ও শিশুপুত্র ইসমাঈলকে আল্লাহর নির্দেশে মক্কার অনুর্বর মরুভূমিতে রেখে যান। যখন তাদের খাবার ও পানীয় শেষ হয়ে গেল, তখন হাজেরা পানির সন্ধানে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে সাতবার দৌড়েছিলেন। এ সময় ইসমাঈল (আ.)-এর পা মাটিতে আঘাত করলে মাটি থেকে পানি বের হয়ে আসে, অন্য বর্ণনায় আছে, আল্লাহ জিবরাঈল (আ.)-কে সেখানে পাঠান, জিবরাঈলের পা মাটিতে পড়লে পানির স্রোত বের হয়। এ দৃশ্য দেখে হাজেরা পাথর দিয়ে পানির ধারা আবদ্ধ করলে তা কুপের রূপনেয়। তখন হাজরারা পানির স্রোতকেজমজম তথা থামো বলায় এর নাম হয়েছে জমজম।
পবিত্র কাবা শরীফ থেকে মাত্র ২০ মিটার দূরে অবস্থিত এই ৩০ মিটার গভীর কূপের পানির ফজিলত অনেক। নিচে এই পানির ফজিলত তুলে ধরা হলো-
জমজমের পানি একটি চমৎকার উপহার:
প্রাচীনকাল থেকেই জমজমের পানি বহন করতেন হজ-যাত্রীরা। আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি জমজমের পানি বহন করতেন এবং বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)ও তা বহন করতেন।’ (তিরমিযী)
জমজমের পানি হলো সর্বোত্তম পানি:
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যমযমের পানি পৃথিবীর উপরিভাগের সর্বোত্তম পানি।” (সহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব)
এই কূপের পানি যে পৃথিবীর সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও সর্বোত্তম তার আরেকটি প্রমাণ হলো, জিব্রাইল (আ.) জমজমের পানি দিয়ে নবী (সা.)-এর ‘সাক্কে ছাদর’ বা বুক ছিঁড়ে তা ধুয়ে দিয়েছিলেন। (বুখারি)
জমজমের পানি বরকতময়:
আবু যর গিফারী (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই তা (জমজমের পানি) বরকতময়। (মুসলিম)
জমজমের পানিতে খাদ্য উপাদান রয়েছে:
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই এটি বরকতময় এবং খাদ্য উপাদানে সমৃদ্ধ।’
রোগের নিরাময়:
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “নিশ্চয়ই এটি উত্তম খাদ্য এবং রোগের নিরাময়।” (মুসলিম : ২৪৭৩)
যে উদ্দেশ্যে জমজমের পানি পান করা হয় তা পূরণ হয়:
জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, জমজমের পানি যে উদ্দেশ্যে পান করা হয় তা পূরণ হবে। (ইবনে মাজা)
জমজমের পানি পানের আদব
ফকীহগণ জমজমের পানি পানের কিছু আচার উল্লেখ করেছেন, যেমন- কেবলামুখী হওয়া, বিসমিল্লাহ বলা, তিন নিঃশ্বাসে পান করা, তৃপ্ত হওয়া, শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলা ইত্যাদি।জমজমের পানি পান করার সময় একটি বড় কাজ হলো দোয়া করা। কেননা হাদিসে এসেছে, ‘জমজমের পানি যে উদ্দেশ্য নিয়ে পান করবে তা পূরণ হবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ)
জমজমের পানি পানের জন্য দুআ:
: اَللّٰهُمَّ اِنِّيْ اَسْئَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا وَّرِزْقًا وَّاسِعًا وَّشِفَاءً مِّنْ كُلِّ دَاءٍ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান নাফিআ, ওয়া রিজকন ওয়াসিয়া, ওয়া শিফাআন মিন কুল্লি দা-ইন।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে কল্যাণকর জ্ঞান, প্রশস্ত রিজিক এবং যাবতীয় রোগ থেকে আরোগ্য কামনা করছি।
জমজমের পানির বৈশিষ্ট্য
অপরিবর্তনীয় গুণাগুণ:
জমজমের পানির গুণমান কখনই পরিবর্তিত হয় না।
অণুজীবমুক্ত:
জমজমের পানিতে কোনো জলজ উদ্ভিদ বা অন্যান্য উদ্ভিজ্জ অণুজীব থাকে না।
খনিজ পদার্থ বেশি:
ক্যালসিয়াম, ফ্লোরাইড, সোডিয়াম, সালফেট, নাইট্রেট, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়াম জমজমের পানিতে উপস্থিত খনিজগুলির মধ্যে রয়েছে। পরীক্ষায় দেখা গেছে যে ফ্লোরাইড ব্যতীত সমস্ত খনিজ পদার্থের মাত্রা সাধারণ পানীয় জলের তুলনায় বেশি।
পানির পিএইচ এবং ঝুঁকিমুক্ত মাত্রা:
জমজমের পানির পিএইচ ৭.৮। এই পানি আর্সেনিক, ক্যাডমিয়াম সীসা এবং মেলানিয়ামের মতো ক্ষতিকারক পদার্থ থেকে মুক্ত।
পানিতে স্ফটিক গঠন:
জমজমের পানির একটি ব্যতিক্রমী মৌলিক আকৃতি রয়েছে যা বেশ আকর্ষণীয়। জলে, দুটি স্ফটিক একে অপরের উপরে গঠিত হয় এবং তাদের একটি অনন্য আকৃতি রয়েছে।
3 Comments