রমজানে তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত
মহান আল্লাহ প্রিয় নবীজি মুহাম্মাদ (সা.)-এর উদ্দেশে কোরআন কারিমে বলেন, ‘এবং রাত্রির কিছু অংশ তাহাজ্জত কায়েম করো, ইহা তোমার এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায় আপনার প্রতিপালক আপনাকে অধিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে—মাকামে মাহমুদে।’ (সুরা- বনি ইসরাঈল , আয়াত: ৭৯)।
আর বিশেষ করে রমজান মাসে আখেরাতের মূলধন সংগ্রহের জন্য বেশি বেশি আমল করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের জন্য রমজানে অফুরন্ত সওয়াব অর্জনের সুযোগ করে দিয়েছেন। এ মাসের অল্প সময়ের মধ্যে অনেক ফজিলত রয়েছে।
একটি হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসে একটি নফল আদায় করল, সে যেন অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ আদায় করল সে যেন অন্য মাসে ৭০টি ফরজ আদায় করল।
এ মাসে ফরজ আমলের পাশাপাশি নফলকে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। কেননা কিয়ামতের দিন যখন মানুষের ফরজ ইবাদতে কোনো সমস্যা দেখা দেবে তখন আল্লাহ তায়ালা নফলের মাধ্যমে তা পূরণের ব্যবস্থা করবেন। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিন বান্দার সর্বপ্রথম আমলের হিসাব হবে নামায।” তাই যদি সঠিক হয়, তাহলে সে রক্ষা পাবে। আর যদি (নামাজ) খারাপ হয়, তবে সে ব্যর্থ হবে এবং কষ্ট পাবে।
যদি তার কর্তব্য (ইবাদত) থেকে কিছু কম হয়, তবে আল্লাহ তায়ালা বলবেন, দেখ! আমার বান্দার কি এমন কিছু নফল (ইবাদত) আছে যা দিয়ে কর্তব্যের ঘাটতি পূরণ হবে? -(আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)
নফল নামাজের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজ আল্লাহর রাসূলের কাছে সবচেয়ে প্রিয়। একটি হাদিসে তিনি বলেন, রমজানের পর সর্বোত্তম রোজা হলো মহররম। আর ফরজ নামাযের পর উত্তম হল রাতের নামায। (সহীহ মুসলিম)
আল্লাহর রসূল তাহাজ্জুদ নামাযের প্রতি এত বেশি গুরুত্ব দিতেন যে, শেষ রাতে নামাযের জন্য দাঁড়ানোর সময় তিনি নিজের শরীরের প্রতি কোন মনোযোগ দেননি। তাহাজ্জুদ নামায এত লম্বা করতেন যে তার পা ফুলে যেত। আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) রাতে নামায পড়তেন; এমনকি তার পা ফুলে যেত। আমি তাকে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এত কষ্ট কেন? কিন্তু আল্লাহ
আপনার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন।’ তিনি বললেন, আমি কি কৃতজ্ঞ বান্দা হব না? (সহীহ বুখারী)
রমজানে অন্যান্য নফল ইবাদতের মতো তাহাজ্জুদের প্রতিও নবীজির আগ্রহ বেড়ে যায়। রমজানে বেশি তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন। বিশেষ করে রমজানের শেষ দশকে তিনি ইতিকাফ করতেন এবং রাত জেগে থাকতেন। এ সময় রাতে পরিবারের সদস্যদের ডাকতেন আমলের জন্য। আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রমজানের শেষ দশ দিনে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) রাতে নামায পড়তেন, পরিবার-পরিজনকে ডাকতেন এবংলুঙ্গি শক্ত করে বেঁধে নিতেন। (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসে তাহাজ্জুদের প্রতি উৎসাহ দিতেন। কিন্তু প্রয়োজনের তাগিদে তিনি তা নির্ধারণ করেননি। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি ঈমান ও নিষ্ঠার সাথে রমজানে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়বে, আল্লাহ তার পূর্বের গুনাহ মাফ করে দেবেন। (সুনানে নাসায়ী)