November 23, 2024
রোজাঃ তাৎপর্য ও উপকারিতা বিজ্ঞানসম্মত

রোজাঃ তাৎপর্য ও উপকারিতা বিজ্ঞানসম্মত

রোজাঃ তাৎপর্য ও উপকারিতা বিজ্ঞানসম্মত  

রোজাঃ তাৎপর্য উপকারিতা বিজ্ঞানসম্মত   

রমজানে রোজা রাখা ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে যতটা উত্তম, ঠিক ততটাই এটি শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্যও একটি কার্যকর পদ্ধতি।

গবেষণায় দেখা গেছে যারা সাহরি ও ইফতারে পরিমিত খাবার খান,  অত্যধিক খাওয়া পরিহার করেন, তারা রোজা রেখে  থেকে শুধুমাত্র শারীরিকভাবে উপকৃত হয় না, তবে মানসিকভাবে শান্ত এবং প্রফুল্ল বোধ করে।

মানবতার মহান চিকিৎসক হজরত মোহাম্মদ মুস্তফা (সা.) বলেছেন, প্রত্যেক বস্তুরই যাকাত আছে; শরীরের যাকাত হলো রোজা। তাই রোজা রাখতে হবে।

আমরা জানি, শরীরের প্রতিটি অঙ্গ এবং শিরা কাজ করার জন্য খাদ্য প্রয়োজন। কিন্তু এই খাবার নিয়মিত ও পরিমিত না হলে তা শরীরে শক্তি যোগানোর পরিবর্তে রোগ সৃষ্টি করে।

স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে, অসময়ে, অসম খাওয়া হজম প্রক্রিয়ার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা একমত যে, শরীরের বেশিরভাগ রোগই হয় অনুপযুক্ত খাদ্য গ্রহণের কারণে।

আশ্চর্যের বিষয়, এই রোগের লক্ষণ ও কারণ বহু শতাব্দী আগে নবী (সা.) উল্লেখ করেছিলেন। তিনি বলেন, রোগের কেন্দ্রস্থল হচ্ছে পাকস্থলী, অতিরিক্ত খাবার পরিহারই রোগ নিরাময়।

সারা বছর অতিরিক্ত খাদ্যাভ্যাসের কারণে শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত চর্বি রোজা রাখলে দূর হয়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, মানবদেহে এইচডিএল (উচ্চ ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন) এবং এলডিএল (নিম্ন ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন) পাওয়া যায়।

এইচডিএল হল এক ধরনের চর্বি যা মানুষকে অনেক রোগ থেকে রক্ষা করে এবং এর পরিমাণ বৃদ্ধি করা স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও ক্ষতিকর নয়। রোজা রাখলে HDL এর মাত্রা বহুগুণ বেড়ে যায়। বিপরীতে, এলডিএল, যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর, উপবাসের সময় হ্রাস পায় এবং রক্ত সঞ্চালনের অস্বাভাবিকতা এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো বিভিন্ন রোগ থেকে আমাদের রক্ষা করে।

রোজা ইউরিক অ্যাসিড এবং রক্তে ইউরিয়ার ঝুঁকিও কমায়। যা শরীরে অতিরিক্ত থাকলে স্ট্রোক, হৃদরোগ, কিডনি রোগ ও ডায়াবেটিসের মতো রোগ সৃষ্টি করে।

স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের মতে, ১২-১৩ একটানা  ঘন্টা ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত অবস্থা  শরীরের অঙ্গগুলিকে স্বাভাবিক করে এবং পরিপাকতন্ত্রের উন্নতি করে এবং গ্যাস্ট্রিক জনিত  রোগ যেমন গ্যাস, বদহজম, লিভারের রোগ, জয়েন্টে ব্যথা ইত্যাদির ঝুঁকি কমায়।

কিন্তু আমাদের দেশের মানুষ জানার  অভাবে বা অসতর্কতার কারণে সাহরি ও ইফতারে অতিরিক্ত পরিমাণে খাবার খেয়ে থাকে। যার দরুন রোগ কমার বদলে বাড়তে থাকে।

সাহরি ও ইফতার রোজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। সুন্নত অনুযায়ী পালন করলে তা শুধু শরীরের জন্যই ভালো নয় বরং অনেক উপকার ও সওয়াবও বয়ে আনে।

যথাসময়ে সাহরি খাওয়া যেমন সুন্নত, ঠিক সময়ে ইফতার করাও সুন্নত। রাসূল (সাঃ) এটাই করতেন। তিনি বলেন, তোমরা  সাহরি খাও; কারণ এতে বরকত রয়েছে। খেজুর দিয়ে ইফতার করা রাসূল (সাঃ) এর সুন্নত।

আধুনিক গবেষণা অনুসারে, যা কেবল হৃদয়, মস্তিষ্ক, লিভার, পাকস্থলী এবং স্নায়ুকে শক্তিশালী করে না,বরং প্রচুর শক্তিও  সরবরাহ করে। কারণ  খেজুরে রয়েছে  ভিটামিন এ, বি, সি এবং ডি এর পাশাপাশি ক্যালসিয়াম, স্টিল, ফসফরাস এবং আরও অনেক উপকারী খনিজ পদার্থ।

মোদ্দা কথা হল রোজা মানে শুধু সারাদিন রোজা রাখা এবং নির্দিষ্ট সময়ে খাবার ও পানীয় গ্রহণ করা নয়। বরং এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে অনেক শারীরিক রোগ থেকে রক্ষা করেন।

রোজার গুরুত্ব অনুধাবন করে কয়েকটি সহজ নিয়ম  মেনে চললে রোজার সকল উপকার ও কল্যাণ অর্জন করা সম্ভব। এভাবে সিয়াম সাধনার ইসলামি উপকারিতা যেমন  অর্জন হয় । তেমনি সুস্বাস্থ্যের জন্যও বৈজ্ঞানিকভাবে উপকৃত হওয়া যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X