দরুদ পাঠঃ রাসূল (সা.)কে ভালোবাসার অন্যতম নিদর্শন
“সৃষ্টির সেরাজন মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভালোবাসই; একজন খাঁটি মুমিন ব্যক্তির জন্য ইহলৌকিক এবং পরলৌকিক কল্যাণের একমাত্র পথ হতে পারে। আর সে কথা বহুৎ বছর আগেই যৌক্তিক ভাবে প্রমাণিত হয়ে গেছে। সে ভালোবাসার মর্মে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর বেশী বেশী দরুদ পাঠ করা তার প্রতি মহব্বতের অন্যতম নিদর্শন। আর তাকে চূড়ান্ত পর্যায়ের ভালোবাসা ছাড়া আমাদেরকে পূর্ণাঙ্গ মুমিন হওয়া কোন মতেই সম্ভব নয়।”
রাসূল (সা.)-হাদিসে স্পষ্ট বলেছেন যে, কোন ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না সে আমাকে তার জীবনের চেয়ে, তার সন্তান, পিতামাতা এবং সকল মানুষের চেয়ে বেশি ভালোবাসবে।
আল্লাহ তাঁর রাসূলের প্রতি দরুদ পাঠের নির্দেশ দিয়ে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর নবীর প্রতি দরুদ পাঠান এবং তার ফেরেশতাগণও তাদের নবীর দরুদ পাঠান । হে মুমিনরা! তোমরাও নবীর প্রতি দরুদ পাঠাও এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।’ (সূরা আহজাব : ৫৬)
রাসূলের (সা.) প্রতি দরুদ পাঠের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ প্রেরণ করবে আল্লাহতায়ালা তার ওপর দশবার রহমত বর্ষণ করবেন।
অন্য হাদিসে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ পাঠ করে আল্লাহতায়ালা তার প্রতি দশবার রহমত বর্ষণ করেন, তার দশটি পাপ ক্ষমা করা হয় এবং তার জন্য মর্যাদার দশটি স্তর বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়।
রাসূলের প্রতি দরুদ পাঠকারী ব্যক্তি কেয়ামতের দিন রাসূলের কাছে থাকবে।
এ সম্পর্কে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, কেয়ামত দিবসে লোকদের মধ্যে ওই ব্যক্তিই আমার অধিক নিকটতম হবে, যে ব্যক্তি তাদের মধ্যে আমার প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করবে।
রাসূলের(সা.) কোনো উম্মত যদি রাসূল (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠ করে তাহলে তা ফেরেশতারা রাসূলের কাছে পৌঁছে দেয়। এ সম্পর্কে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, মহান আল্লাহর কিছু সংখ্যক ফেরেশতা রয়েছেন, তারা পৃথিবীতে বিচরণ করতে থাকেন এবং আমার উম্মতের পক্ষ থেকে আমার কাছে সালাম পৌঁছে দেয়। অন্য হাদিসে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা আমার প্রতি দরুদ পেশ কর। তোমরা যেখানেই থাক না কেন, নিশ্চয়ই তোমাদের দরুদ আমার কাছে পৌঁছবে।
কোনো ব্যক্তির সম্মুখে রাসূলের নাম উচ্চারিত হলে তার উচিত হবে রাসূলের প্রতি দরুদ পাঠ করা। এ সম্পর্কে “হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, ওই ব্যক্তির নাক ধুলায় মলিন হোক (সে অপমাণিত হোক) যার সম্মুখে আমার নাম উচ্চারিত হয়েছে, অথচ সে আমার প্রতি দরুদ পাঠ করেনি।“কারণ প্রাণপ্রিয় রাসূল (সা.)-এর নাম শুনলে দরুদ পড়া তার প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন।
হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন-ওই ব্যক্তি বড় কৃপণ, যার সম্মুখে আমার নাম উচ্চারণ করা হয়, অথচ সে আমার প্রতি দরুদ পাঠ করে না।
হাদিসে সুস্পষ্টভাবে আছে যে, রাসূলের রওজা মোবারকের কাছে গিয়ে তার প্রতি দরুদ পাঠ করলে রাসূল (সা.) তা সরাসরি শুনতে পান। এ সম্পর্কে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমার কবরের কাছে এসে আমার প্রতি দরুদ পাঠ করে, আমি তা সরাসরি শুনতে পাই। আর যে আমার প্রতি দূর থেকে দরুদ পাঠ করে, তা আমার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।
লেখক/ আহমাদুল্লাহ
1 Comment