পরমাণু শক্তিধর উ.কোরিয়ায় খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কাঃ অনাহারে মরতে পারে মানুষ
উত্তর কোরিয়ায় ভয়াবহ খাদ্য ঘাটতি বৃদ্ধি পাওয়া নিয়ে ক্রমশ বাড়ছে আশঙ্কা। এ সপ্তাহেই সেখানে অনাহারে মানুষ মারা যেতে পারে বলে জানিয়েছে বহুবিধ সূত্র। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ বলেন, ১৯৯০-এর দশকে দেশটিতে ‘আরদুয়াস মার্চ’ নামে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। তারপর এখন দেশটির অবস্থা আরও খারাপ। আরদুয়াস মার্চের ফলে গণহারে মানুষ ছিলেন অনাহারে। হাজার হাজার মানুষ মারা গিয়েছিলেন। তখন দেশটিতে জনসংখ্যা ছিল প্রায় দুই কোটি। তার মধ্যে শতকরা ৩ থেকে ৫ ভাগ মানুষ মারা
বাণিজ্যিক ডাটা, স্যাটেলাইটের ছবি, জাতিসংঘ এবং দক্ষিণ কোরিয়া কর্তৃপক্ষের মূল্যায়ন বলছে, মানুষের সর্বনিম্ন মানবিক চাহিদা পূরণের জন্য যেটুকু খাবার দরকার, সংগ্রহে আছে তার থেকে কম। এ তথ্য পিটারসন ইন্সটিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক্সের গবেষক লুকাস রেঙ্গিফো-কেলারের।
খাবার যদি সমভাবে বিতরণও করা হতো, তাতেও উত্তর কোরিয়ার অভিজাত এবং সেনাবাহিনী অগ্রাধিকার পেতো বলে মন্তব্য করেন তিনি। এই মূল্যায়ন সম্পর্কে একমত দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারা। সম্প্রতি সিউল ঘোষণা করেছে, তারা বিশ্বাস করে এরই মধ্যে উত্তর কোরিয়ার কোনো কোনো এলাকায় অনাহারে মানুষ মারা যাচ্ছে। উত্তর কোরিয়া নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে বাকি বিশ্বের কাছ থেকে। ফলে এসব অভিযোগের পক্ষে বা বিপক্ষে তথ্যের সত্যতা যাচাই করা খুবই কঠিন। তবে কিছু বিশেষজ্ঞ এমন পূর্বাভাস নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
করোনা মহামারির আগেও দেশটির অর্ধেকের মতো জনগোষ্ঠী অপুষ্টিতে ভুগছিল বলে তথ্য জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংগঠনের। তারপর সীমান্ত বন্ধ। নিজেরা বিচ্ছিন্ন। এই সময়ে দেশটির ভিতরে অবশ্যই পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ তা বোঝা যায় এ সপ্তাহে ওয়ার্কার্স পার্টির চার দিনের বৈঠক দেখে। উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন দেশের কৃষিখাতে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য এই উদ্যোগ নিয়েছেন। এ সময় তিনি কৃষিখাতে পরিবর্তন, রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত কৃষিখামার শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
অনেক বিশ্লেষক এ সমস্যার জন্য শুধুই পিয়ংইয়ংকে দায়ী করেন। করোনা মহামারির সময় দেশটি নিজেদেরকে একেবারে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। চীন সমান্তের সঙ্গে তাদের প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দ্বিতীয় স্তরের বেড়া নির্মাণ করে। সীমান্ত দিয়ে যা সামান্য বাণিজ্য হতো, তাও সংকুচিত করে। গত বছর তারা রেকর্ড সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে। এর পিছনে ব্যয় হয় বিপুল অর্থ।
চীনের কাস্টমস ডাটা অনুযায়ী, উত্তর কোরিয়ার কাছে ২০২২ সালে প্রায় ৫ কোটি ৬০ লাখ কিলোগ্রাম গম বা আটা, ৫৩,২৮০ কিলোগ্রাম সিরিয়াল পাঠায় চীন। কিন্তু পিয়ংইয়ং নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখায় বেসরকারি বাণিজ্য অচল ছিল।