November 21, 2024
আল কুরআনের আলোঃ সংখ্যাতত্ত্বের চমৎকারিত্বে সাজানো বিস্ময়কর আল কুরআন

আল কুরআনের আলোঃ সংখ্যাতত্ত্বের চমৎকারিত্বে সাজানো বিস্ময়কর আল কুরআন

আল কুরআনের আলোঃ সংখ্যাতত্ত্বের চমৎকারিত্বে সাজানো বিস্ময়কর আল কুরআন

আল কুরআনের আলোঃ সংখ্যাতত্ত্বের চমৎকারিত্বে সাজানো বিস্ময়কর আল কুরআন

সংখ্যাতত্ত্বের চমৎকারিত্বে সাজানো মহান আল্লাহর বাণী  আল কোরআন আপনাকে নিয়ে যাবে এক  অনন্য মোহনায়।  যেখানে আপনি হতবাক হয়ে যাবেন;  যে শুধু বিজ্ঞান নয়, শুধু ইতিহাস নয্‌, হালাল হারামের বিধানই  শুধু  নয়।  কেন যেন সকল গাণিতিক তত্ত্ব আর সংখ্যাতত্ত্বের  সবই  কোরআন থেকে এসেছে । যা  বিশ্লেষণে আপনার আবেগ ভালোবাসা চিন্তা মনন  কোন কিছুই কোরআনকে ছেড়ে চলে যেতে চাইবে না,  আপনি নিমগ্ন হয়ে যাবেন তার অনন্ত প্রেমে ।হ্যাঁ যতদিন বিজ্ঞান তার গবেষণাকে কোরআনের  সাথে মিলিয়ে  নিতে না পারবে,  আপনি শতভাগ নিশ্চিত থাকতে পারেন যে,  সে বিজ্ঞান সঠিক নয়।  যবে কোরআনের সাথে মিলে যাবে তবেই সে বিজ্ঞান হবে সঠিক।  আমরা কোরআনের গণিত তত্ত্বের বা সংখ্যাতত্ত্বের অনেক রকম চমৎকারিত্বের মধ্য হতে কিঞ্চিৎ আলোচনা করছি।  আমাদের আলোচনা,  লেখা ধারাবাহিক ভাবে চলবে ইনশাল্লাহ

আল-কুরআন আল্লাহর সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর অবতীর্ণ ঐশী গ্রন্থ। এটিই একমাত্র গ্রন্থ যাতে কোন সন্দেহ নেই।

এটি যে কোনোরূপ সন্দেহাতীত একটি পবিত্র গ্রন্থ তা বিভিন্নভাবে প্রমাণিত। এই সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধে আমি মহাগ্রন্থ কোরানের সংখ্যাতত্ত্বের উপর একটি আলোচনা উপস্থাপন করছি। এতে বোঝা যাবে যে এটি মানব রচিত গ্রন্থ নয়, বরং এটি একটি বিস্ময়কর ঐশী গ্রন্থ।

সমগ্র কুরআনে মোট সূরার সংখ্যা ১১৪ টি। এর মধ্যে ৮৬ টি নবী (সাঃ) এর হিজরতের পূর্বে অবতীর্ণ হয়েছিল, এগুলো মাক্কী সূরা। হিজরতের পর অবতীর্ণ ২৮ টি সূরা মাদানী সূরা নামে পরিচিত। এভাবে সমগ্র কুরআন শরীফে ৮৬টি মক্কী ও ২৮টি মাদানী সূরা রয়েছে। দীর্ঘতম সূরা হল ‘সূরা বাকারা’ (২৮৬টি আয়াত) এবং সবচেয়ে ছোটটি হল ‘সূরা কাওসার’

 

(৩টি আয়াত) । প্রথম অবতীর্ণ আয়াতগুলো হল  সূরা আল-আলাকের প্রথম পাঁচটি এবং শেষে  অবতীর্ণ আয়াত হল  সূরা বাকারার ২৮১  নম্বর আয়াত। এবং সর্বশেষ অবতীর্ণ সূরা “আন-নাসর”

আল কুরআনের সংখ্যাতত্ত্ব মহাবিশ্বের সকল সময়ের জন্য এক অনন্য বিস্ময় !

দেখে নিই,

 আল কোরআনের মোট ১১৪টি সূরার সর্বমোট আয়াত সংখ্যা ৬৬৬৬টি

  • এতে জান্নাত ও জাহান্নামের প্রতিশ্রুতির আয়াত ১০০০টি
  • সতর্কীকরণের আয়াত ১০০০টি
  • আদেশসূচক আয়াত ১০০০টি
  • নিষেধসূচক আয়াত ১০০০টি
  • উদাহরণ বিষয়ক আয়াত ১০০০টি
  • ঘটনা ও ইতিহাস সম্পর্কিত আয়াত ১০০০টি
  • হালাল বিষয়ক আয়াত ২৫০টি
  • হারাম বিষয়ক আয়াত ২৫০টি
  • তাসবিহ সম্পর্কিত আয়াত ১০০টি
  • এবং অন্যান্য প্রসঙ্গে আয়াত ৬৬টি

সুতরাং মোট আয়াতের যোগফল ৬৬৬৬

পবিত্র এই গ্রন্থে অনেকবার দুটি বিপরীত বিষয়ে বা কাছাকাছি বিষয়ে একের সঙ্গে অন্যের তুলনা করা হয়েছে। এই তুলনীয় নাম বা বিষয় দুটিকে আল্লাহতায়ালা সমান সংখ্যাতেই উল্লেখ করেছেন।

  • এখানে ‘তিনি বললেন’ এবং ‘তারা বলল’ শব্দ দুটি এসেছে ৩৩২ বার করে।
  • আব্দ (গোলামি করা)’ ও ‘আবিদ (গোলাম)’ কথা দুটি এসেছে ১৫২ বার করে।
  • জীবন’ও ‘মৃত্যু’১৪৫ বার,
  • দুনিয়া’ ও ‘আখেরাত’ ১১৫ বার,
  • কষ্ট’ ও ‘ধৈর্য’ ১০২ বার,
  • শয়তান’ ও ‘ফেরেশতা’ ৮৮ বার,
  • বেহেশত’ ও ‘দোজখ’ ৭৭ বার,
  • বিপর্যয়’ ও ‘কৃতজ্ঞতা’ ৭৫ বার,
  • চন্দ্র’ ও ‘সূর্য’ ৩৩ বার,
  • জাকাত’ ও ‘জাকাত প্রদানের ফলে বরকত’ ৩২ বার,
  • ‘ঈমান’ ও ‘কুফর’ ২৫ বার,
  • পবিত্র’ ও ‘অপবিত্র’ ৭ বার
  • গরম’ ও ‘ঠাণ্ডা’ ৫ বার করে এসেছে।

 

আবার যেখানে তুলনাটি অসম, সেখানে সংখ্যা দুটিও অসম, কিন্তু ইঙ্গিতবহ।  

যেমন ;

  • সমগ্র কোরআনে ‘শাস্তি’ শব্দটি এসেছে ১১৭ বার, আর ‘ক্ষমা’ ২৩৪ বার। এ সংখ্যা দিয়ে বোঝা যায় আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির প্রতি এতই দয়ালু যে, তিনি তাদের শাস্তি প্রদানের চেয়ে ক্ষমা করতে বেশি ভালোবাসেন।
  • এভাবে, দরিদ্রতার কথা বলা হয়েছে ১৩ বার। আর ঐশ্বর্য বা সচ্ছলতার কথা বলা হয়েছে ২৬ বার। আমাদের আল্লাহ তো পরম করুণাময় তাই তাঁর বাণীতে সচ্ছলতার সংখ্যা দ্বিগুণ। সুবহানআল্লাহ ।
  • পবিত্র কোরআন নারী-পুরুষের সমঅধিকার প্রদান করেছে। তাই সমগ্র গ্রন্থে ‘নারী’ ও ‘পুরুষ’ শব্দ দুটি এসেছে ২৩ বার করে। এখানে বিশেষভাবে বলা যায়, মানবদেহের ক্রমোজমের মোট সংখ্যা ৪৬টি। এর ২৩টি এসেছে মায়ের থেকে এবং ২৩টি বাবার থেকে।

 

 মানুষ’ শব্দ ব্যবহার হয়েছে ৬৫ বার। 

যেখানে মানুষ শব্দটির যোগফলের সাথে শতভাগ সামঞ্জস্য রেখে  অর্গানগুলোকে সাজানো হয়েছে দেখুন কতই না চমৎকার।

  • যেখানে মানুষের গঠনের বিল্লেষণমূলক সংখ্যাগুলোর যোগফল বর্ণিত হয়েছে মাট ১৭ বার
  • শুক্রাণু ফোঁটা ১২ বার
  • ভ্রূণ ৬ বার,
  • অর্ধগঠিত মানবপিণ্ড ৩ বার
  • হাড় ১৫ বার
  • এবং মাংস ১২ বার

 আর এর সবগুলোর যোগফল হল ৬৫

এরপর লক্ষ্য করি  

  • পবিত্র কোরআন শরিফে দিবস শব্দ এসেছে ৩৬৫ বার
  • দিনগুলো ৩০ বার
  • আর ‘মাস’ শব্দটা এসেছে ১২ বার

মহাগ্রন্থে স্থলের উল্লেখ আছে ১৩ বার, আর সাগর বা জল ভাগের ৩২ বার। দুটির যোগফল ৪৫

  • এই যোগফলের শতকরা হিসাব ১৩/৪৫*১০০ = ২৮.৮৮ ভাগ;
  • অন্যদিকে ৩২/৪৫*১০০ = ৭১.১১ ভাগ।

এই মাত্র কিছুদিন আগে ‘আধুনিক’ বিজ্ঞান তথ্য দিয়েছে যে, পৃথিবীতে সব স্থলভাগের পরিমাণ ২৮.৮৮ এবং স্থল জল ভাগের ৭১.১১। ভাবা যায়, ১৪০০ বছর আগে কোরআন মানুষকে এই তথ্য জানিয়েছে! সুবহানাল্লাহ!

উপসংহার,

অনেকগুলো সংখ্যাতত্ত্বের মধ্য থেকে কিছুসংখ্যক সংখ্যাতত্ত্ব আমরা উল্লেখ করেছি। তা থেকেই চিন্তাশীলদের জন্য শিক্ষা এইযে, কোরআন কোন মানুষের রচিত নয়। এটা সরাসরি আল্লাহ তাআলার কথা। সুতরাং কোরআন কোন সৃষ্টিও নয় এটা আল্লাহর গুণাবলীর একটি। কোরআনের গবেষণা, কোরআন অধ্যয়ন হয়ে যাক আমাদের জীবনের প্রাত্যহিক কাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

(লেখক, আহমাদুল্লাহ)

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X