ভারতে ৬৪ জনে ধর্ষণ করেছে এক দলিত নারীকে
ধর্ষণকাণ্ডে বিখ্যাত দেশ ভারতে পাঁচ বছরে ৬৪ জন পুরুষ তাকে ধর্ষণ করেছে অভিযোগ করেছেন এক দলিত মহিলা। অভিযুক্তদের বয়স ১৭ থেকে ৪৭ বছরের মধ্যে, এবং তাদের মধ্যে তার প্রতিবেশী, ক্রীড়া কোচ এবং তার বাবার বন্ধুরাও রয়েছেন। বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্যের ১৮ বছর বয়সী এক মহিলা ১৩ বছর বয়স থেকে ৬৪ জন পুরুষ তাকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন।
পুলিশ জানিয়েছে যে, এই মামলায় এখন পর্যন্ত ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযুক্তরা বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রয়েছে এবং এখনও কোনও মন্তব্য করেনি। পুলিশ জানিয়েছে যে, অভিযুক্তদের বয়স ১৭ থেকে ৪৭ বছরের মধ্যে, এবং তাদের মধ্যে মহিলার প্রতিবেশী, ক্রীড়া কোচ এবং তার বাবার বন্ধুরাও রয়েছেন। একটি সরকারি প্রকল্পের অধীনে কাজ করা পরামর্শদাতাদের একটি দল তার বাড়িতে যাওয়ার পর মহিলা যৌন নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ বিভিন্ন ভারতীয় ফৌজদারি আইন এবং তফসিলি জাতি ও তফসিলি উপজাতি (নৃশংসতা প্রতিরোধ) আইনের অধীনে প্রায় ১৮টি মামলা নথিভুক্ত করেছে। ভারতে নিম্ন বর্ণ ও উপজাতিদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রতিরোধের জন্য এই আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছিল। ভারতের হিন্দু বর্ণ ব্যবস্থার সর্বনিম্ন স্তরে থাকা দলিতরা আইনি সুরক্ষা সত্ত্বেও ব্যাপক বৈষম্যের সম্মুখীন হয়।
সিনিয়র পুলিশ অফিসার নন্দকুমার এস বলেন ,কিশোর বয়সে এক মহিলাকে ধর্ষণের ঘটনার জন্য শিশু যৌন অপরাধ প্রতিরোধ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
জেলার শিশু কল্যাণ কমিটির (সিডব্লিউসি) দায়িত্বে থাকা একজন আইনজীবী ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন যে, মহিলা একজন ক্রীড়াবিদ ছিলেন এবং বিভিন্ন ক্রীড়া শিবিরে অংশগ্রহণ করতেন, যার তাকে আরও নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে যে, মহিলাকে গত পাঁচ বছরে তিনবার গণধর্ষণের শিকার হয়েছে।
অভিযুক্ত ব্যক্তি তার বাবার মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে তার সাথে যোগাযোগ করেছে এবং মহিলা তার ফোনে তাদের নম্বর সংরক্ষণ করেছে বলে অভিযোগ। পুলিশ এখন সেই ফোন ব্যবহার করে অভিযুক্তদের সনাক্ত এবং গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করছে।
মহিলার পরিবার নির্যাতনের বিষয়ে অবগত ছিল না বলে জানা গেছে। গত মাসে কাউন্সেলরদের একটি দল মহিলার বাড়িতে যাওয়ার সময় ঘটনাটি প্রকাশ পায়। কাউন্সেলররা শিশু কল্যাণ কমিটিকে (সিডব্লিউসি) বিষয়টি জানালে, মহিলাকে তার মা সহ কমিটির সামনে হাজির হতে বলা হয়।
সিডব্লিউসি প্রধান দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, “একজন মনোবিজ্ঞানী তাকে কাউন্সেলিং করেছিলেন। এরপর তিনি খোলাখুলিভাবে বলেন যে, ১৩ বছর বয়স থেকে কীভাবে তাকে যৌন নির্যাতন করা হয়েছিল।” তিনি আরও বলেন, নিরাপত্তার কারণে মহিলাকে সিডব্লিউসি-র অধীনে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।
মহিলার অভিযোগ সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। জানা গেছে যে, তিনি একজন মহিলা পুলিশ অফিসারের কাছে নির্যাতনের বিস্তারিত বর্ণনা দেবেন।
তবে মেয়েটির পরিবার ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত ছিল না। গত মাসে কয়েকজন মনোবিজ্ঞানী মেয়েটির বাড়িতে গেলে বিষয়টি প্রকাশ পায়। মনোবিজ্ঞানীরা শিশু ও কিশোর কল্যাণ কমিটিকে ঘটনাটি সম্পর্কে অবহিত করেন।
শিশু ও কিশোর কল্যাণ কমিটির প্রধান আইনজীবী এন. রাজীব বলেন, আমরা মনে করি এটি একটি অত্যন্ত গুরুতর ঘটনা। তাই আমরা সরাসরি জেলা পুলিশ সুপারের সাথে যোগাযোগ করেছি।
একটি নারী অধিকার সংস্থার আইনজীবী সন্ধ্যা জনার্ধন পিল্লাই বলেন, এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, কেবল আইন প্রণয়ন করে শিশু ও কিশোরীদের যৌন নির্যাতন থেকে রক্ষা করা যথেষ্ট নয়।