ভারতে ধর্মীয় সহিংসতা বন্ধে মোদী-মুর্মুকে চিঠি দিলেন খ্রিষ্টান নেতারা
ভারতে মুসলিম সম্প্রদায়গুলি প্রায়ই হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের সহিংস আগ্রাসন এবং আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়েছে। যদিও ভারতীয় বয়ানে অতীতে, এই আক্রমণগুলিকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হিসাবে বিবেচনা করা হত এবং হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সংঘাত হিসাবে চিহ্নিত করা হত কিন্তু এখন সচেতন প্রত্যেক ব্যক্তিই বুঝতে পারছে এই আক্রমণ কোন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নয়। বরং ভারতের চরম হিন্দুত্ববাদীর নোংরা থাবা। যা শুধু মুসলমানদের উপরে নয় খ্রিস্টান এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বী ব্যক্তিদের উপরেও এই হিন্দুরা আক্রমণ চালিয়েছে এবং এখনো চলছে। যাইহোক, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরে হিন্দু জাতীয়তাবাদের উত্থানের সাথে সাথে, আক্রমণগুলি আরও নিয়মতান্ত্রিক হয়ে উঠেছে, এবং রাষ্ট্র-অনুমোদিত কার্যকলাপে রূপ নিয়েছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র বিদ্রোহের সময় শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে ভারত বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত নিপীড়নের অভিযোগ মায়াকান্না নিয়ে উতলিয়ে পড়ে। কিন্তু ৪০০ টিরও বেশি সিনিয়র খ্রিস্টান নেতা এবং ৩০ টি গির্জা ভারতে খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় সহিংসতা বন্ধ করতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়্যারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খ্রিস্টান নেতারা ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে এই আবেদন জানিয়ে চিঠি লিখেছেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বাড়ছে এবং অসহিষ্ণুতার মাত্রা বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১৪টি খ্রিস্টান সমাবেশে হামলা, হুমকি ও হুমকি দেওয়া হয়। মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) এ চিঠি পাঠানো হয়।
ইভানজেলিকাল ফেলোশিপ অফ ইন্ডিয়া অনুসারে, জানুয়ারী থেকে নভেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ৭২০ টিরও বেশি ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। একই সময়ের মধ্যে, ইউনাইটেড খ্রিস্টান ফোরাম ৭৬০টি মামলা নথিভুক্ত করেছে।
খ্রিস্টান নেতাদের অভিযোগ, দেশে ধর্মান্তর বিরোধী আইনের অপব্যবহার করা হচ্ছে। ধর্মীয় স্বাধীনতার জন্য হুমকি বাড়ছে, অন্যান্য ধর্মের লোকদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক বক্তব্য বাড়ছে এবং দলিত খ্রিস্টানরা তাদের তফসিলি বর্ণের মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এদিকে, ২০২৩ সালের মে থেকে চলমান সহিংসতায় মণিপুরে ২৫০জনেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে। ৩৬০ টি গির্জা ধ্বংস করা হয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়েছে। ভারতের খ্রিস্টান নেতারাও মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তারা বলেছেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ঘটনার দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত। সংবিধান অনুযায়ী ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষার বিষয়ে রাজ্য সরকারগুলিকে স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া উচিত।
তারা নিয়মিত আন্তঃধর্মীয় সংলাপ এবং প্রত্যেক নাগরিকের তাদের ধর্ম পালনের অধিকার রক্ষার আহ্বান জানান। নেতৃবৃন্দ বলেন, ভারতের নৈতিক গঠন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং সামাজিক ঐক্যের জন্য সকল ধর্মের অন্তর্ভুক্তি ও সম্প্রীতি অপরিহার্য।
এই চিঠিতে স্বাক্ষরকারী খ্রিস্টান নেতাদের মধ্যে রয়েছেন মাস আব্রাহাম, রিচার্ড হাওয়েল, মেরি স্কারিয়া, ডেভিড ওনেসিমু, জোয়াব লোহারা, সেড্রিক প্রকাশ এস জে, জন ডায়াল, জেলহো কিহো, প্রকাশ লুইস এস জে, অ্যালেন ব্রুকস, ই এইচ খারখাঙ্গার, কে লোসাই মাও, বিজয়েশ লাল , মাইকেল উইলিয়ামস, এ.সি. মাইকেল, অখিলেশ এডগার।