ভারতকে হতাশ করেছে নেপাল
একগুঁয়েমি, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা আর মিথ্যা তথ্য প্রচারের সর্বনিকৃষ্ট দেশ ভারত, সে তার সীমান্তের কোন দেশের সাথেই ভালো সম্পর্ক রাখতে পারে নাই। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য কোনো দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। পাকিস্তান ‘চিরশত্রু’, এছাড়া নেপাল, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক ইতিমধ্যেই খারাপ হয়েছে। সর্বশেষ নিজ দেশে অ-জনপ্রিয় হাসিনা দিয়ে দেড় দশক ধরে বাংলাদেশ নিয়ন্ত্রণ করেছিল দেশটি। কিন্তু ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে হাসিনার পতনের পর নয়াদিল্লি ‘পাগল’ হয়ে গেছে। ভারত ও তার মিডিয়া একের পর এক বাংলাদেশ বিরোধী তৎপরতায় সরাসরি ইন্ধনও যোগাচ্ছে।
এ নিয়ে যখন ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে, তখন ভারতকে আরও হতাশ করেছে নেপাল।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে যে, নেপাল চীনের সঙ্গে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) বিষয়ে একটি কাঠামো চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এটি নেপালে চীনের প্রভাব বিস্তারের পথ প্রশস্ত করেছে। বেইজিংয়ের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বা বিআরআই-এর অংশ হতে কাঠমান্ডুর প্রাথমিক বোঝাপড়ার সাত বছর পর, নেপাল এই নতুন চুক্তি প্রকল্পে যোগ দিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি চার দিনের বেইজিং সফরে আসছেন। জুলাইয়ে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই তার প্রথম বিদেশ সফর। ঐতিহ্য ভেঙ্গে, তিনি তার প্রথম সফরের জন্য নয়াদিল্লিকে বেছে নেননি, শি জিনপিংয়ের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে এবং চুক্তি চূড়ান্ত করতে চীন সফর করতে পছন্দ করেন।
২০১৭ সালে, নেপাল এবং চীন বিআরআই প্রকল্পের জন্য একটি প্রাথমিক চুক্তি স্বাক্ষর করে। চীনা উদ্যোগের লক্ষ্য বিশ্বব্যাপী অবকাঠামো এবং বাণিজ্য সংযোগ গড়ে তোলা। যাইহোক, গত সাত বছরে কোন প্রকল্পের পরিকল্পনা বা বাস্তবায়ন করা হয়নি, কারণ চুক্তির কাঠামোর সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি এবং নেপালের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের অভাব ছিল।
বুধবারের নতুন চুক্তি অনুসারে, দুই দেশ প্রকল্পের জন্য বিশদ পরিকল্পনা যেমন রাস্তা উন্নয়ন এবং পরিবহন করিডোর নির্মাণ এবং অর্থায়নের উপায় নিয়ে এগিয়ে যাবে। তবে ঋণ নিয়ে উদ্বেগ নেপালের প্রধানমন্ত্রী ওলির জোট সরকারের মধ্যে বিরোধের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে নেপালি কংগ্রেস ঋণভিত্তিক প্রকল্পে আপত্তি জানিয়েছে।
নেপালের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি এক্স-এ পোস্টে বলেছে যে, নেপাল ও চীন আজ বেল্ট অ্যান্ড রোড সহযোগিতার কাঠামোতে স্বাক্ষর করেছে। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো হয়নি।
চীন ইতিমধ্যেই পোখরায় একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য নেপালকে ২১৬ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে। এটি কাঠমান্ডু থেকে ১২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং গত বছর উদ্বোধন করা হয়েছিল। চীন বিমানবন্দরটিকে বিআরআই-এর সাফল্যের প্রতীক হিসেবে দাবি করলেও, ভারতীয় আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি না পাওয়ায় আন্তর্জাতিক ফ্লাইট না থাকায় সমস্যায় পড়েছে।
এভাবে ভারত একে একে দক্ষিণ এশিয়ায় মিত্রদের হারাচ্ছে। শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও বাংলাদেশের সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক মোটেও স্বচ্ছন্দ নয়। নেপাল নিয়ে আগে থেকেই অস্বস্তি ছিল। তবে চীনের সঙ্গে কাঠমান্ডুর নতুন চুক্তি দিল্লির উদ্বেগ বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
আরো পড়তে