উত্তর প্রদেশে শাহীমসজিদ সমীক্ষা স্থগিত, শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে বললেন ভারতের প্রধান বিচারপতি
উত্তরপ্রদেশের সম্বলে মুঘল আমলের শাহী জামে মসজিদের সমীক্ষাকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের সম্বলে মুঘল আমলের শাহী জামে মসজিদের জরিপ নিয়ে নিম্ন আদালতের রায় স্থগিত করেছে সুপ্রিম কোর্ট ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। ততদিন পর্যন্ত মসজিদে কোনো সমীক্ষা করা যাবে না। শুক্রবার দুপুরে মসজিদ কমিটির আপিলের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
ভারতের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের একটি বেঞ্চ মসজিদ কমিটিকে এলাহাবাদ হাইকোর্টে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। সে সময় সুপ্রিম কোর্ট এলাহাবাদ হাইকোর্টকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে মসজিদ কমিটির আবেদনের শুনানির নির্দেশ দেয়।
সুপ্রিম কোর্ট শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে হাইকোর্টের শুনানির সুযোগ না পাওয়া পর্যন্ত ট্রায়াল কোর্টকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে।
ভারতের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না বলেছেন, “শান্তি ও সম্প্রীতি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা এটি স্থগিত করব। আমরা কিছু ঘটুক তা চাই না। আমাদের সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ হতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না।
সুপ্রিম কোর্ট এলাহাবাদ হাইকোর্টকে মসজিদ পরিচালনা কমিটির দায়ের করা আবেদনটি পাওয়ার তিন কার্যদিবসের মধ্যে শুনানির নির্দেশ দিয়েছে। হাইকোর্ট বিষয়টি পর্যালোচনা না করা পর্যন্ত ৮ জানুয়ারি নির্ধারিত ট্রায়াল কোর্টের শুনানি স্থগিত থাকবে বলেও আদালত জানিয়েছে।
সম্বলের শাহী জামে মসজিদের জায়গায় একসময় একটি মন্দির ছিল বলে দাবি করে ১৯ নভেম্বর স্থানীয় আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। পিটিশনে বলা হয়েছে যে ‘বাবুরনামা’ এবং ‘আইন-ই-আকবরি’ বইতে উল্লেখ আছে যে সম্রাট বাবর ১৫২৯ সালে এই স্থানে মন্দিরটি ধ্বংস করেছিলেন। পরে, আদালত বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য একটি জরিপের নির্দেশ দেন। ২৪ নভেম্বর যখন জরিপ শুরু হয়, তখন মসজিদ ভেঙে ফেলার আশঙ্কায় বিক্ষোভ শুরু হয়, যা হিংসাত্মক রূপ নেয়। এ ঘটনায় ছয়জন নিহত ও অনেকে আহত হয়েছেন।
পরে নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে মসজিদ কমিটি। আবেদনে বলা হয়, স্থানীয় আদালত একতরফা আদেশ জারি করে জরিপের নির্দেশ দিয়েছেন। কোনো প্রতিক্রিয়া বা বিচারিক প্রক্রিয়া ছাড়াই তা বাস্তবায়িত হয়েছে। এভাবে জরিপের আদেশ দিলে সারাদেশে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত চলমান মামলার ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়বে। এতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা, আইনশৃঙ্খলার অবনতি এবং দেশের ধর্মনিরপেক্ষ প্রকৃতির ক্ষতি হতে পারে বলে অভিযোগ তাদের।
জরিপের সমর্থকরা বলছেন, ঐতিহাসিক সত্য উদঘাটনে এটি একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। অন্যদিকে, সমালোচকরা এটিকে উসকানিমূলক এবং ধর্মীয় স্থানের পবিত্রতা লঙ্ঘন হিসেবে দেখছেন। এই ধরনের স্থাপনা ১৯৯১ সালের উপাসনালয় আইনের অধীনে সুরক্ষিত।
অন্যদিকে, মসজিদে জরিপ নিয়ে অনেকেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। সমাজবাদী পার্টির সাংসদ জিয়াউর রহমান বারাক ১৯৯১ সালের উপাসনালয় আইনের উদ্ধৃতি দিয়ে সমীক্ষার সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছিলেন যে, সম্বলের শাহী জামে মসজিদ একটি ঐতিহাসিক স্থান। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়েছিল যে, উপাসনালয়ের অবস্থান ১৯৪৭ সালের মতো অপরিবর্তিত থাকবে। তিনি অভিযোগ করেছেন যে এটি ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করার ষড়যন্ত্র।
ভারতে মসজিদে সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬ জনে দাঁড়িয়েছে ভারতে মসজিদে সংঘর্ষে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬ জনে দাঁড়িয়েছে।
উত্তরপ্রদেশ কংগ্রেসের প্রধান অজয় রাই বলেছেন, যোগী আদিত্যনাথ সরকারের আমলে রাজ্যে সহিংসতার ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। তবে, বিজেপি পাল্টা বলেছে যে যারা আদালতের আদেশ মানে না তারা আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে।
দলের মুখপাত্র নলিন কোহলি বলেছেন, “আইন ভাঙার অধিকার কারও নেই। আদালত আদেশ দিলে তা কার্যকর করা হবে। যারা আদেশ সংশোধন করতে চান তাদের জন্য বিচারিক প্রক্রিয়া খোলা আছে।”