আরজিকর হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারে একাধিক ইন্টার্ন ও চিকিৎসকঃ মৃত তরুণীর বাবা-মা
৯ আগস্ট ২০২৪-এ কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ঘটে যাওয়া ধর্ষণ ও হত্যার একটি মর্মান্তিক ঘটনা সমগ্র দেশকে নাড়া দিয়েছিল। বিকেল ৩টা থেকে ভোর ৬টার মধ্যে এ ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভিকটিম একজন স্নাতকোত্তর শিক্ষানবিশ চিকিৎসক, যিনি ওই রাতে ডিউটিতে ছিলেন। ভোরে হাসপাতালের সেমিনার কক্ষে তার লাশ পাওয়া যায়।
ময়নাতদন্তের রিপোর্টে প্রকাশ যে ভিকটিমকে প্রথমে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছিল এবং তার শরীরে যৌন নিপীড়নের স্পষ্ট চিহ্ন রয়েছে। তার ঘাড়ের হাড় ভেঙ্গে গেছে, মুখে ও শরীরের অন্যান্য অংশে ক্ষত রয়েছে এবং যৌনাঙ্গে গুরুতর আঘাত রয়েছে। এছাড়াও, তার শরীর থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল, যা যৌন নির্যাতনের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়। লাশের পোস্টমর্টেম রিপোর্টে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। এই ঘটনা সারা দেশে তীব্র প্রতিবাদের জন্ম দেয়। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং তাদের মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানিয়েছেন।
তদন্তে একাধিক ইন্টার্ন জড়িত থাকতে পারে। এমনই চাঞ্চল্যকর দাবি করছেন মৃত কিশোরীর বাবা-মা। মেয়েটির বাবা সিবিআইকে জানিয়েছেন, হাসপাতালের একাধিক ইন্টার্ন ও চিকিৎসক এই অপরাধে জড়িত থাকতে পারেন। সরকারি হাসপাতালে মেয়েটিকে ধর্ষণ ও খুনের সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজনদের নামও সিবিআইকে দিয়েছেন অভিভাবকরা। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে মামলার তদন্ত করছে সিবিআই।
সিবিআই সূত্রের খবর, বাবা-মা সিবিআইকে বলেছে যে তাদের মেয়ের যৌন নিপীড়ন এবং হত্যার পিছনে একাধিক ব্যক্তির জড়িত থাকার সন্দেহ রয়েছে। তারা ওই হাসপাতালে তার সঙ্গে কাজ করেছেন এমন কয়েকজন ইন্টার্ন ও চিকিৎসকের নামও জমা দিয়েছেন।
সিবিআইয়ের এক আধিকারিক বলেছেন, “আমরা অন্তত ৩০ জন সন্দেহভাজনকে চিহ্নিত করেছি এবং তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছি। যে রাতে ডাক্তারকে ধর্ষণ ও খুন করা হয়েছিল, সেই রাতে সিবিআই একজন হাউস স্টাফ এবং দুই স্নাতকোত্তর প্রশিক্ষণার্থীকে ডেকে পাঠায় যারা ডাক্তারের সাথে ডিউটিতে ছিলেন। অন্যদিকে, হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় সিবিআই এর তত্বাবধানে এবং পরে গ্রেপ্তার করা হয়।
আরজিকর মামলায় অশান্ত দেশ। হাজার হাজার মানুষ সেদিন রাত দখল করে। ১৪ আগস্ট রাতে বেশ কয়েকজন দুর্বৃত্ত আরজিকেতে হামলা চালায়। পুলিশ সন্দেহ করছে তথ্য হারানোর চেষ্টায় এই হামলা চালানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন যে বিরোধী সিপিএম এবং বিজেপি আরজিকার হাসপাতালে ভাঙচুর করেছে এবং মহিলা ডাক্তারের ধর্ষণ-হত্যার পিছনে আসল সত্যকে বিকৃত করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, “আমরা চাই সত্য বেরিয়ে আসুক, কিন্তু কিছু মহল মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য মিথ্যা প্রচার করছে। তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়া খবর ছড়িয়ে সত্যকে আড়াল করার চেষ্টা করছে। আমরা এ ধরনের কাজের নিন্দা জানাই। আমরা দোষীদের শাস্তি চাই। ” ‘ব্যক্তিগতভাবে হস্তক্ষেপ করুন’, আরজি কেলেঙ্কারিতে মোদীর কাছে ৭০ পদ্ম পুরস্কারপ্রাপ্তির চিঠি
অন্তত ৭০ জন পদ্ম পুরস্কারপ্রাপ্ত চিকিৎসক কলকাতার রাজিকর হাসপাতালে এক নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরাসরি হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। মোদীকে উদ্দেশ্য করে তাদের চিঠিতে তারা লিখেছেন, “আরজিকার হাসপাতালে যা ঘটেছে তা স্পষ্ট যে এই ধরনের নৃশংসতা প্রতিরোধে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।” এ বিষয়ে অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা সংসদ সদস্য, দেশের নীতিনির্ধারণী সংস্থার প্রতি আহ্বান জানাই।
চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘সম্প্রতি কলকাতার রাজিকর মেডিক্যাল কলেজে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ঘটনার জন্য আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গভীর বেদনার সাথে আপনাদের এই চিঠি লিখছি। দেশের সর্বোচ্চ নেতা হিসাবে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ, আপনি এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি মোকাবেলায় অবিলম্বে এবং ব্যক্তিগতভাবে হস্তক্ষেপ করুন। এ ধরনের বর্বরতা চিকিৎসকদের সেবার ভিত্তিকে নাড়িয়ে দেয়। নারীর প্রতি এই ধরনের সহিংসতা, বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবা পেশার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
চিকিত্সকরা আরও জানিয়েছেন যে এই ধরনের ঘটনা রোধ করতে ২০১৯ সালে ‘ডাক্তার, মেডিকেল পেশাদার এবং মেডিকেল প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধ বিল’ তৈরি করা হয়েছিল। যা এখনো সংসদে উপস্থাপন করা হয়নি। চিকিৎসকদের দাবি অবিলম্বে এই বিল পাস করা হোক যাতে দেশের স্বাস্থ্য খাতে কর্মরতরা নির্ভয়ে রোগীদের সেবা দিতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের চিঠিতে চিকিৎসকরা বিদ্যমান আইনের কঠোর প্রয়োগ, যৌন সহিংসতায় জড়িতদের কঠোর ও সময়োপযোগী শাস্তি, হাসপাতাল ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা, বিশেষ আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নসহ পাঁচটি দাবি তুলে ধরেন। স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের সুরক্ষার জন্য, এবং স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার জন্য সম্ভাব্য কঠোরতম শাস্তি।